Home Top Ad

Responsive Ads Here

Search This Blog

     ধর্মপুরে গোবিন্দ নামে এক ব্রাহ্মণের দুটি পুত্র ছিল। বড়জন ভোজনবিলাসী, অৰ্থাৎ রান্না খারাপ হলে তা তার মুখে রুচতো না। ছোটজন শস্যাবিলাসী, ...

বেতালপঞ্চবিংশতি: ত্রয়োবিংশ গল্প

     ধর্মপুরে গোবিন্দ নামে এক ব্রাহ্মণের দুটি পুত্র ছিল। বড়জন ভোজনবিলাসী, অৰ্থাৎ রান্না খারাপ হলে তা তার মুখে রুচতো না। ছোটজন শস্যাবিলাসী, আর যাই হোক তার বিছানাটি চাই আরামদায়ক । কোন খুৎ থাকলে তার ঘুম হবে না।
     সেখানকার রাজার কানে কথাটা গেল। তিনি কৌতুহলবশত দুই ভাইকে রাজসভায় ডেকে পাঠালেন এবং জানতে চাইলেন তোমরা কে কোন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ?
     তারা দু’জন নিজের নিজের পরিচয় দিলে প্রথমে ভোজনবিলাসীকে পরীক্ষা করার জন্য রাজা ভাল পাচক ডেকে যতরকমের ভাল খাবার হতে পারে সবরকম রান্নার আদেশ দিলেন । রাজার আদেশে পাচক খুব যত্ন কবে নানারকম সুখাদ্য রান্না করলো ।
     রাজা তখন ভোজনবিলাসীকে সঙ্গে করে খাবার ঘরে উপস্থিত হলেন এবং তাকে আহার করতে বললেন; কিন্তু সে কিছুক্ষণের মধ্যেই রাজার কাছে ফিরে এল।

     রাজা জিজ্ঞাসা করলেন, বেশ তৃপ্তি করে খেয়েছ তো ?
     সে বললো, না মহারাজ, খাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব হলো না ।
     রাজা বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, কেন?
    সে বললো, মহাবাজ, ভাতে মরার গন্ধ। আমার মনে হচ্ছে শ্মশানের কাছের কোন ক্ষেতের ধান থেকে ঐ চাল হয়েছে।
    রাজা এই কথা শুনে অবিশ্বাসের হাসি হাসলেন। ভাবলেন পাগলের প্রলাপ ছাড়া এ আর কিছুই নয়। তিনি তখন কোন কথা না বলে গোপনে ব্যাপারটার সত্যাসত্য যাচাই করার জন্য ভাণ্ডারকে আদেশ করলেন।
     রাজার আদেশমত ভাণ্ডারী অনুসন্ধান করে রাজাকে জানালেন, মহারাজ, গ্রামের শেয প্রান্তে যে শ্মশান আছে তার পাশের ক্ষেতের ধান থেকেই ঐ চাল হয়েছে।
     রাজা শুনে অবাক হলেন এবং ভোজনবিলাসীকে বাহবা দিয়ে বললেন, তুমি যথার্থই ভোজনবিলাসী। এরপর রাজা এক সুসজ্জিত শয়ন ঘরে ধবধবে সাদা এক শয্যায় শয্যাবিলাসীকে শুতে দিলেন।
      সে অল্পক্ষণ পরেই রাজার কাছে এসে বললো, মহারাজ, শয্যায় আমার শোয়া হলো না।
     রাজা বিস্মিত হয়ে কারণ জিজ্ঞাসা করলে শয্যাবিলাসী বললো, মহারাজ, ঐ শয্যার সাতটি তোষকের নীচে একটি চুল আছে; তাতে আমি বড়ই অস্বপ্তি বোধ করছিলাম, তাই উঠে এসেছি।

     রাজা হতবাক ! এও কি সম্ভব? রাজা নিজে সেই শয়নঘরে ঢুকে বিছানার সাতটি তোষকের নীচে সত্যিই একটা চুল পেলেন ।
     রাজা খুশি হয়ে তার প্রশংসা করে বললেন, তুমি প্রকৃতই শয্যাবিলাসী।
     এরপর রাজা সন্তুষ্ট হয়ে দুই ভাইকে প্রচুর পুরস্কার দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দিলেন।
     গল্প এখানেই শেষ করে বেতাল বললো, মহারাজ, এই দুই ভাইয়ের মধ্যে কে সবচেয়ে প্রশংসার যোগ্য ?
    রাজা বললেন, আমার মতে শয্যাবিলাসী। 
    রাজার উত্তর শুনে বেতাল আর একমুহুৰ্তও না থেকে গাছে গিয়ে ঝুলে পড়লো। কিন্তু রাজা বিক্রমাদিত্য কি তাকে ছেড়ে দেবেন? তিনিও সঙ্গে সঙ্গে তাকে কাঁধে নিয়ে আবার চলতে আরম্ভ করলেন। আর বেতালও চতুর্বিংশ গল্প আরম্ভ
করল।

0 coment�rios: