গোপালের পাশের এক প্রতিবেশীর নাম কেদার। তার বাড়ির উঠানে কাঁঠাল গাছ ছিল। গাছটিতে প্রতি বছর বেশ বড় বড় কাঁঠাল হত। খেতে মধুর মত মিষ্টি। কিন্ত...
গোপালের পাশের এক প্রতিবেশীর নাম কেদার। তার বাড়ির উঠানে কাঁঠাল গাছ ছিল। গাছটিতে প্রতি বছর বেশ বড় বড় কাঁঠাল হত। খেতে মধুর মত মিষ্টি। কিন্তু একটা কাঁঠালও সে কাউকে দিত না। গাছে একটি কাঠাঁল পাকলে তার গন্ধে পাড়া মাত করে তুলত। গোপাল যাচ্ছিল কেদারের বাড়ির সামনের রাস্তাদিয়ে। যেতে যেতে দেখলে কেদার দাওয়ায় বসে একবাটি সরষের তেল নিয়ে গোঁফে, বেশ করে মাখাচ্ছে। তাই দেখে গোপাল জিজ্ঞাসা করলে, কি হচ্ছে কেদার ভায়া। কেদার বললে, গাছের বড় কাঠাঁলটা পাকবে মনে হচ্ছে তাই গোঁফে তেল মাখাচ্ছি। কাল সকালে ওটাকে দিয়ে জলযোগ করবার ইচ্ছে আছে। গোপাল বললে, একটু বেশি করে মেখে রাখ ভাই, তা না হলে গোঁফে আঠা জড়িয়ে যাবে। ভাল করে না মাখালে তেল যদি- গোঁফে আঠা লাগে ছাড়াতে কষ্ট হবে। সেদিন রাতেই কাঁঠালটা কে চুরি করে নিয়ে চলে গেল। পরের দিন কেদার গোপালকে ডেকে দুঃখ করে বললে, জানো গোপাল আমার গোঁফে তেল মাখানই সার হল কাঠাল খাওয়া হল না আর। কাল রাতে কাঁঠালটা চুরি হয়ে গেছে। গোপাল ভীষণ দুঃখ প্রকাশ করে বলল, কি আর করবে দাদা একেই বলে- গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল।
একদিন গোপালের জ্বর হওয়ায় সে সেদিন রাজসভায় যেতে পারেনি। মহারাজ সভাসদদের নিয়ে নানা আলাপ আলোচনা করতে করতে হঠাৎ বললেন, আমার সভার মধ্যে এমন ক...
একদিন গোপালের জ্বর হওয়ায় সে সেদিন রাজসভায় যেতে পারেনি। মহারাজ সভাসদদের নিয়ে নানা আলাপ আলোচনা করতে করতে হঠাৎ বললেন, আমার সভার মধ্যে এমন কি কেউ আছে, যে গোপালের ঘর থেকে কিছু চুরি করে আনতে পারে? যদি কেউ পারে, তবে সে সামান্য জিনিস হলেও আমি তাকে বিশেষভাবে পুরষ্কৃত করব। তোমরা কেউ রাজী থাকলে বল। মহারাজের পুরষ্কার লোভেও কেউ রাজি হল না গোপালের ঘরে চুরি করতে। কারণ বড় চতুর সে। তার চোখে ধুলো দেওয়া সহজ নয়। ধরা পড়লে নাকালের শেষ থাকবে না। নাকানি চোবানি তো খেতে হবেই, আর সে তার প্রতিশোধ একদিন না একদিন নেবেই নেবে এবং অশেষ দুর্গতির সীমা থাকবে না। ভূপাল নামে একটি লোক পুরষ্কারের লোভে সেদিন মধ্যরাত্রে গোপালের বাড়িতে সিদ কেটে প্রবেশ করল। গোপাল আগে থেকেই রাজসভার কথা জানতে পেরেছিল, তাই সে লোভি লোকটাকে জব্দ করার জন্য তৈরি হয়ে রইল। গোপালের ঘরের দেওয়ালে সিদ। গোপাল পূর্ব প্রস্তুতি মতো একটা মানুষের বিষ্ঠাপূর্ণ কলসির উপরে গোটাকতক টাকা রেখে দিয়েছিল এবং সেখানে নিজে একপাশে আত্নগোপন করে দাঁড়িয়ে রইল। লোকটি সিদ কেটে যখন ঘরের মধ্যে মাথা গলিয়ে ঢুকে দেখল যে, সামনেই একটা টাকভর্তি কলসী বসানো আছে। সে আর কালবিলম্ব না করে তাই মাথায় তুলে নিয়ে মনের আনন্দে রাজবাড়িরে দিকে এগোতে যেতেই গোপাল ঢিল ছুঁড়ে ব্রাহ্মণের মাথার কলসীটা ভেঙে দিল। কলসী চুরমার হয়ে সঙ্গে সঙ্গে লোকটির সারা শরীর বিষ্ঠাতে পূর্ণ হয়ে গেল। তখন ভোর হয়েছে। গোপাল বেরিয়ে বলল, কি বাবা চুরি করা হল। মহারাজ পরে গোপালের মুখে এসব কথা শুনে বেশ আনন্দিত হলেন।
একবার মুর্শিদাবাদের নবাবের খেয়াল হল, হিন্দুদের মত আমাকে নিয়ে মহাভারত রচিত হোক। যেমনি ভারা তেমনি মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের কাছে নির্দেশ পাঠালে...
একবার মুর্শিদাবাদের নবাবের খেয়াল হল, হিন্দুদের মত আমাকে নিয়ে মহাভারত রচিত হোক। যেমনি ভারা তেমনি মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের কাছে নির্দেশ পাঠালেন, আপনাদের অর্থাৎ হিন্দুদের অনুকরণে, তাকে নিয়ে একটি নতুন মহাভারত পন্ডিতদের দিয়ে লিখে দিতে হবে একমাসের মধ্যে। সেইরূপ পন্ডিত অতি শীঘ্র নবাব দরবা পাঠান। যিনি রচনা করবেন তাঁকে প্রচুর আসরাফি পুরষ্কার দেওয়া হবে।
নবাবের চিঠি পেয়ে মহারাজ এমন চিন্তায় পড়লেন যে খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দিলেন। কারণ এমন কে পন্ডিত আছে যে, সে হিন্দুদের মত করে মহাভারত লিখে দিতে সক্ষম হবে। গোপাল বাহিরে গেছিল কয়েকদিন, সেদিনই রাজসভায় এসেছে- এসে মহারাজকে রাজসভায় উপস্থিত হতে না দেখে খবর নিয়ে জানতে পারল যে, মহারাজ নাকি এক বিষয় নিয়ে খুব চিন্তিত আছেন, সেজন্য রাজসভায় আসেন নি। কিন্তু বিষয়টা কি সে সম্বন্ধে কেউই কিছু বলতে পারল না। গোপালের সব জায়গায় এমন কি অন্দরবহলেও অবারিত দ্বার, সেজন্য অন্দরমহলে গিয়ে মহারাজকে পাকড়াও করল। অন্দর মহলে গোপালকে দেখে মন ক্ষুন্ন হলেও একদিকে প্রিয় বয়স্য অন্যদিকে বিপদে আপদের বুদ্ধিদাতা গোপালকে দেখে মনে একটু ভরসা পেলেন, এই মনে করে যে, এই বিপদের সময় আর কিছু না হোক গোপাল হয়ত একটু বুদ্ধি বাতলে দিতে সক্ষম হবে। গোপালের কাছে অকপদে সমস্ত খুলে বললেন নবাবের খেয়ালের কথা।
মহারাজের মুখে সমস্ত শুনে গোপাল বলল এই সামান্য কথার জন্য এত ভাবনা চিন্তা না করে আমার উপর ছেড়ে দিন। আমাকে পাঠাচ্ছেন বলে চিঠি পাঠিয়ে দিয়ে আপনি নিশ্চিন্তে খান দান ঘুমোন। যা করবার আমি করব। মহারাজ গোপালের উপর বিশ্বাস করে নবাবের কাছ চিঠিও গোপাল কে পাঠিয়ে দিলেন। গোপাল গরদের কাপড় পরে, উড়নী গাড়ে দিয়ে, গলায় বড় বড় তুলসীর মালা ঝুলিয়ে কপালে তিলকের ফোঁটা কেটে মাথায় মস্ত টিকিতে একটা বড় ফুল বেঁধে নবাব দরবারে দিয়ে উপস্থিত হলো। মহাপন্ডিত গোপালকে নবাব দেখে খুব খুশি হলেন। কুর্নিশ করে গোপাল বললে, নবাব বাহাদুর আপনি যদি পাচঁ হাজার টাকা খরচ করেন তবে একমাসের মধ্যে আপনার মনের মত মহাভারত তৈরী করতে পারবে। এর কম সময়ে হবে না এবং এর জন্য কোন ভাবনা চিন্তা করবেন না।
নবাব গোপালের কথা শুনে বললেন, পন্ডিত মশায় আপনাকে পাঁচ হাজার কেন আমি দশ হাজার টাকা দেব, আপনি যত তাড়াতাড়ি পারেন মহাভারত লিখে শেষ করুন। এই বলে গোপালকে দশ হাজার টাকা দিয়ে দিলেন। গোপাল একমাসের সময় নিয়ে মহাভারত লেখা আরম্ভ করে দিল।
নবাবের ঘন ঘন তাগাদার পর আঠাশ দিনের মাথায় নবাবের মহাভারত হাজির হয়ে পন্ডিত মশায় বললেন, নবাব বাহাদুর মহাভারত লেখা প্রায় অন্তিম পর্যায়, খালি একটা বিষয়ে আটকে আছে, সেটা হচ্ছে, আমাদের মহাভারতে দ্রৌপদীর পঞ্চ স্বামী যধীষ্ঠীর, ভীম, অর্জুন, নকুলও সহদেব নামে খ্যাত। সে সব ত উপস্থিত সকলেই আপনারা জানেন। কিন্তু আপনার বেগম সাহেবার পঞ্চ স্বামীর কি কি নাম তা আমার জানা নেই। আপনি বললেই লিখে দেব এবং আমার লেখা মহাভারত এ সমাপ্ত হয়ে যাবে। এখন বলুন নবাব সাহেব আপনার বেগম সাহেবার পঞ্চস্বামীর নাম কি কি ।এইটুকু ছাড়া আর সব লেখা শেষ হয়ে গেছে। এই নামগুলি বসিয়ে দিলেই আপনার মনের মত মহাভারত সম্পূর্ণ সমাপ্ত হয়ে যাবে। নবাব বাহদুর এ কথাশুনে তোবা তোবা করে, কানে হাত দিয়ে বললেন, এ কি কথা বলছেন পন্ডিত মশায়! আমার বেগম সাহেবার কি কখনও আমি ছাড়া কোনও স্বামী থাকতে পারে! দরবারে এত লোকের সামনে এই কথা শুনে নবাব লজ্জায় একেবারে লাল হয়ে বললেন, আমার আর মহাভারতের দরকার নেই, আপনি এখন আসতে পারেন পন্ডিত মশায়।
গোপাল করজোড়া প্রার্থনা করে বলল, সে কি নবাব বাহাদুর আমি এত কষ্ট করে একমাস ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম করে কতভেবে চিন্তে মহাভারত লিখলাম আপনি বাতিল করে দিলেন। মহানুভব নবাব একথা শুনে পন্ডিত মশাইকে বললেন, আপনি কষ্ট করে লিখেছেন সেজন্য আপনাকে পারিশ্রমিক দ্বিগুন করে দিচ্ছি। আপনি পারিশ্রমিক নিয়ে মহাভারতের নাম মুখে না এনে বাড়ি চলে যান। এই বলে খাজাঞ্চিকে ডেকে টাকা দেওয়ার আদেশ দিলেন।
খাজাঞ্চি টাকা দিলে গোপাল আনন্দ চিত্তে দিয়ে হাজির হলো মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের রাজ সভায়। মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র গোপালের মহাভারত লেখার কাহিনী শুনে খুবই আনন্দিত হলেন, কারণ এমন বিপদ থেকে উদ্ধার পেয়ে মনে মনে খুব আনন্দিত হলেন। গোপাল আর এক দফা পুরষ্কার পেয়ে আনন্দিত হল। মহারাজ গোপালকে বললেন তোমার তুলনা তুমিই। তুমি এ যাত্রায় রক্ষা না করলে আমি খুবই অসুবিধায় পড়তাম। যাক এ যাত্রা থেকে মুক্তি পেলাম।
এক পাড় মাতাল রাস্তা দিয়ে যেতে যেত গোপালের বাড়ির রোয়াকে বসে হেড়ে গলায় গান জুড়ে দিল। গোপাল তার ছেলেদের ডেকে বললে, বেটাকে বেধে ঘা কতক দে তো...
এক পাড় মাতাল রাস্তা দিয়ে যেতে যেত গোপালের বাড়ির রোয়াকে বসে হেড়ে গলায় গান জুড়ে দিল। গোপাল তার ছেলেদের ডেকে বললে, বেটাকে বেধে ঘা কতক দে তো। এপাধা নি ব্যাটাকে দে প্যাদানি।
মাতাল ফিক করে হেসে বলল কি বাওয়া। তোমারও কি নেশা হল নাকি? যা নয় তাই বলতে শুরু করলে। আমি কি মনের সুখে গান গাইতেও পারব না বাওয়া। একি মগের মল্লুক না কি, যা বলবে তাই শুনতে হবে? আর বাঁধবে কেন ঠাকুর- আমি কি ভোগের চাল কলা ফল না কি?
গোপাল এই কথা শুনে না হেসে পারল না। গোপালের হাসি দেখে মাতাল গান ছেড়ে শুরু করল তখন তিড়িং বিড়িং নাচ। পাধা নি।
সেদিন বড় গঞ্জের হাটবার। সকলকে সেই হাটেবাজার করতে যেতে হয়। গোপাল গঞ্জের বাজারে চলেছে গ্রামের কয়েকজন চেনাজানা লোকের সঙ্গে গল্প করতে করতে। ...
সেদিন বড় গঞ্জের হাটবার। সকলকে সেই হাটেবাজার করতে যেতে হয়। গোপাল গঞ্জের বাজারে চলেছে গ্রামের কয়েকজন চেনাজানা লোকের সঙ্গে গল্প করতে করতে। যেতে যেতে হঠাৎ গোপালের নজরে পড়ে, সামনে একটি মেয়েও যাচ্ছে বোঝা মাথায় নিয়ে। গোপাল ভালভাবে নজর দিয়ে দেখতে পেলে, মেয়েটি ভারি বোঝার জন্য হোক বা অন্য কোনও কারণে হোক কাঁদতে কাঁদতে আগে আগে চলেছে, আর ঘন ঘন একটা হাত দিয়ে সর্দি মুছছে পাছায় ঘষছে আনমনে। কাঁদলে সকলেরই নাকি সর্দি আসে এমনিতেই। সে একহাতে বোঝার টাল সামলাচ্ছে, আর এক হাত দিয়ে নাকের সর্দি টেনে পাছার মুছছে। আর এ অভ্যাসটাতো অল্প বিস্তর অনেকেরই থাকে, এ আর তাই তেমন নতুন কি? গোপালের থামায় দুষ্টু বুদ্ধি খেলে গেল, আর মুখে দেখা গেল বাঁকা হাসি। গোপালের মাথায় তো সব সময় কত রকম বুদ্ধি ফিকিরের আসর। সে মনে মনে ভাবলে একটু মজা না করলেই নয়। মেয়েটি গরীব হলেও চলন ও অন্যান্য আদব কায়দা দেখে ভাল ঘরের মনে হোল। আর মেয়েটিরও ছেলে মানুষি মিষ্টি চেহারা। কিলবিল করছিল ফন্দি গুলো গোপালের মাথায়। তারই একটাকে সে ছেড়ে দিলে মেয়েটির কান্না থামাতে আর তার মুখে হাসি টেনে আনতে তার এবং তার মনে ব্যথা ভোলানোর জন্য।
চকিতে গোপাল এগিয়ে যায় ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্নার ভান করে- নাকের সর্দি জোরে ভেতরে টানার শব্দ করে, যেন কত সর্দি জমে আছে। তারপরই হঠাৎ একদলা সর্দি বের করে মেয়েটির পেছনের কাপড়ে মুছে দিল। মেয়েটি চমকে উঠে। সে ঘুরেই মুখ ঝামটা দিয়ে বললে, একি করলেন মশাই। আপনার সর্দ্দি আমার গায় মুছতে আপনাকে কি কেউ বলেছে? আপনার লজ্জা করল না? ছি ছি, বেহায়া কোথাকার? মেয়ে ছেলের গায়ে হাত দিলেন- ভদ্রলোক হয়েও এই কি উচিত কাজ? আমি এখনই রাজদরবারে নালিশ করব, কেন আপনি আমার পাছায় হাত দিলেন?
গোপাল প্রাণখোলা হাসি হেসে তখন বলল, তা বাছা তুমি রাগ করছ কেন? তোমার সর্দ্দি মোছার বহর দেখে আমি ভাবলাম, এটা বোধ হয় সদ্দি মোছার পাছা। গোপালের সঙ্গীরা হো হো করে হেসে উঠে। মেয়েটির মুখেও হাসির রেখা দেখা দেয়। গোপাল তখনও বললে, দেখ বাছা, তোমার চোখের সামনে, চোখের জল দিয়ে তো তোমার পেছনের কাপড়ের সর্দ্দি ধোওয়া যাবে না? তাই বাজারে পৌছাতে পৌছাতে আমার চোখের জল দিয়ে তোমার পাছার কাপড়ে সর্দ্দির দাগ ধুয়ে দেব। আমি আবার এমন ছোট মেয়ের কান্না সইতে না পেরে কেঁদে ফেলি যে।
মেয়েটি ফিক করে হেসে উঠে। তার বাবার মত কথা বলতে শুনে। মেয়েটি তখন সব দুঃখ ভুলে যায়।
খতেগঞ্জের এক জমিদার, তাঁর বড় সখ, গোপাল ভাঁড়ের মত তার সভাতেও এমনই একটি ভাঁড় রাখেন। কিন্তু মনে মত ভাঁড় আর তিনি পান না। একদিন গোপালকে ডেকে ...
খতেগঞ্জের এক জমিদার, তাঁর বড় সখ, গোপাল ভাঁড়ের মত তার সভাতেও এমনই একটি ভাঁড় রাখেন। কিন্তু মনে মত ভাঁড় আর তিনি পান না। একদিন গোপালকে ডেকে বললেন, বাপু গোপাল। তুমিই একটা লোক আমায় বাজিয়ে দেখে দাও- যেন মোটামটি তোমার মত হয়। গোপাল রাজী হয়ে বললে, তা বেশ। এ কাজের জন্য ঢ্যাড়া দিয়ে দিন, আমি তার মধ্যে থেকে উচিত লোক বাছাই করে দেব। বিজ্ঞপ্তি শুনে ভাঁড়ের কাজের জন্য উমেদার হয়ে অনেকেই এল। গোপাল তাদের অনেককে পরীক্ষা করতে লাগল কিন্তু কেউই পারল না। গোপালের ধাঁধার ঠিকমত জবাব না দিতে পে কেউ কেউ বাতিল হয়ে অনেকেই আবার গোপালের নাম শুনেই বে ইজ্জতির ভয়ে আগেই পিছুটান দিল। থাকল বাকী মাত্র দুজন।
গোপাল কী বাবা? পারবে মোসায়েবী করতে?
১ম লোক নিশ্চয় পারবো। পারবো না মানে?
গোপাল কি করে বুঝলে যে পারবে?
১ম লোক এর আর বোঝাবুঝি কি? জুতো সেলাই থেকে চন্ডীপাঠ না জানি কোনটা? সামান্য মোসাহেবি কাজটা আর পারবো না। না পারার কোন মানেই বুঝতে পারছি না বা এর কোন হেতুই আমার মাথায় ঢুকছে না। গোপাল কি জানি বাপু, আমার কিন্তু সন্দেহ হচ্ছে, তুমি বোধ হয় পারবে না। তোমার কি মনে হয়?
১ম লোক বলেন কি মশায়। আপনি পরীক্ষা করে দেখুন না- পারি কিনা। যদি না পারি চলে যাব।
গোপাল পরীক্ষা তো হয়েগেল বাপু। মোসাহেব একমাত্র কাজ হলো, সব কথাতেই সায় দেওয়া। তুমি সেই কথাটাই জানো না। তোমার দ্বারা কাজ চলবে না। অতএব, তুমি বিদায় নিতে পারো। এবার তোমাকে আমাদের প্রয়োজন নাই। প্রথম উমেদারটিকে বিদেয় দিয়ে দ্বিতীয় উমেদারকে ঘরে ডাকল গোপাল। তবে সঙ্গে চললো এইরকম প্রশ্নোত্তর- গোপাল কি হে বাপু পারবে?
২য় লোক, আজ্ঞে, আপনার কি মনে হয়? পারবো কি পারবো না। গোপাল আমার তো মনে বাপু, তুমিও পে উঠবে না।
২য় লোক। তাইতো। আমারও কেমন ভয় হচ্ছে হয়তো পেরে উঠবো না। না আমি পেরে উঠব না বটে! গোপাল কিন্তু আবার এই ভাবছি পারবেই বা কেন?
২য় লোক আজ্ঞে ঠিক। আমিও ওই কথাই ভাবছি, কেনই পারবো না? গোপাল তবে শিখতে কিছু সময় লাগতে পারে বটে। তুমি শিখে নেবে কি?
২য় রোক তা আর লাগবে না? না শিখলে কোন কাজটা পারা যায় বলুন। আপনি কথাটা বিলক্ষণ ধরেছেন। গোপাল হ্যা তুমি বেশ পারবে, মনে হচ্ছে। আমার মনে হয় তুমি পারবে।
২য় লোক আজ্ঞে নিশ্চয়। আমার মনে হচ্ছে বেশ পারবো আমি। গোপাল তবে, কখনো কখনো ভুল চুক হতে পারে অবশ্য।
২য় লোক তা হতে পারি বইকি। ভুল কার না হয় বলুন? সকলেরই হয়। গোপাল মানুষেরই অল্প বিস্তর ভুল থাকে…….’
২য় লোক তা আর বলতে বিলক্ষণ বিলক্ষণ। অল্প বিস্তর ভুল আছে বলেই মানুষ দেবতা নয়। আর দেবতারাই বা কমটা কিসে? তেনাদেরও ভুল ভ্রান্তি ঘটে কখনও কখনও । গোপাল খুশি হয়ে মুখে হাসি নিয়ে তার পিঠ চাপড়ে দিয়ে বললে, তুমি এখনই একজন পাকা মোসাহেব, বৎস। এ কথায় আর আমার একতিল সন্দেহ নেই। গোপালের সুপারিশে এই দ্বিতীয় লোকটিকেই বহাল করলেন জমিদার বাবু। কিছুদিন যেতে না যেতেই তিনি বুঝলেন ঠিক লোককেই গোপাল এনে বসিয়েছে তাঁর সভায়।
গোপালের স্ত্রী নিজেই দেখাশোনা করে বড় মেয়েকে এক বামুনের বাড়িতে বিয়ে দিয়েছিল। সেই মেয়ের মেয়ে বড় হোল একদিন। তারই বিয়ের নিমন্তন্নে গোপালের...
গোপালের স্ত্রী নিজেই দেখাশোনা করে বড় মেয়েকে এক বামুনের বাড়িতে বিয়ে দিয়েছিল। সেই মেয়ের মেয়ে বড় হোল একদিন। তারই বিয়ের নিমন্তন্নে গোপালেরা উপস্থিত। স্ত্রী একান্তে ডেকে বললে, হ্যাঁ গা, আমাদের বড় মেয়ের জামাই নাকি জাতে নাপিত বামুন নয়। কিন্তু সে সম্বন্ধ তুমি কিছু জান কি?
স্ত্রীর কথা শুনে গোপাল বললে, আর চেপে যাও- আমিও আসলে বামুন নই, আমি জাতিতে নাপিত। তোমার বাপের কাছে জাত ভাঁড়িয়ে তোমাকে বিয়ে করেছি। তুমি জাতকুল হারালেও আমি মোটেই জাতকুল হারাইনি। জাতকুল আবার কি? ধন মানেই সব। যার ধন আছে সেই সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তি। অতএব, এর জন্য তোমার ভাবনা চিন্তা করার কিছুই নেই। তুমিও হয়ত এই রকম কোন তাঁতির মেয়ে হবে।
রাজা কৃষ্ণচন্দ্র একবার পেয়াদাকে ডেকে বললেন, ওরে ভজহরি ব্যাপারীকে একবার ডেকে আনবি তো। ভজহরি সরেস গুড়ের কারবার করত। পেয়াদা ব্যাপারীকে একেব...
রাজা কৃষ্ণচন্দ্র একবার পেয়াদাকে ডেকে বললেন, ওরে ভজহরি ব্যাপারীকে একবার ডেকে আনবি তো। ভজহরি সরেস গুড়ের কারবার করত। পেয়াদা ব্যাপারীকে একেবারে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাজসভায় হাজির করলে। ভজহরি গোপালকে ধারে মাল দিতে চাইত না, তাই তার ওপর গোপাল চটে ছিল। পেয়াদা তাকে আজ একেবারে রাজসভায় বেঁধে এনেছে বলে গোপাল মনে মনে বেশ খুশিই হল। বলল,- বেশ হয়েছে শালাকে বেধেই এনেছে।
রাজা কিন্তু পেয়াদার ওপর চটে গিয়ে বললেন, আমি ভজহরিকে ডেকে আনতে বললুম, আর তুই কিনা একেবারে বেধে নিয়ে এলি? তোকে আমি বরখাস্ত করব। তোর বেশ বাড় হয়েছে, কেন তুই বেধে এনেছিস- আগে কৈফিয়ত দে, নয়তো এখনি তোকে বরখাসত করলাম। তোর কিছু বলার থাকে বল।
পেয়াদা কাঁদতে কাঁদতে বলল, আর করব না হুজুর। এবোরের মত বেয়াদপি মাপ করুন। নাহলে খেতে না পেয়ে মরে যাবো।
গোপাল পেয়াদা পক্ষ নিয়ে ওকালতি করে মোলায়েম স্বরে বললে, হুজুর একে বরখাস্ত করবেন না- এ হচ্ছে জাত পেয়াদা। পেয়াদারা ধরে আনতে বললে বেধেই আনে – আর এ ডেকে আনতেই বলায় বেধে আনায় প্রকৃত পেয়াদার মতোই কাজ করেছে। যদি জাত পেয়াদা না হত সে কখনই বেঁধে আনত না। কথাটা ঠিক কিনা এবার মহারাজ আপনি বিবেচনা করে দেখুন।
গোপালের কথায় রাজা হেসে ফেললেন এবং অতি করিৎকর্মা পেয়াদাকে ক্ষমা করে দিলেন সেবারের মত। বললেন, এবারের মত অবশ্য মাপ করলাম, আর যেন কখনও এমন না হয় মনে রাখবি।
মৌলভী সাহেব একদিন মক্তবে ফারসী পড়াতে পড়াতে প্রশ্ন করলেন, আরবী ফারসীতে সবচেয়ে বড় শব্দ কি, যে যা জান, তোমরা ভেবে চিন্তে সব বল। বারো চোদ্দ ...
মৌলভী সাহেব একদিন মক্তবে ফারসী পড়াতে পড়াতে প্রশ্ন করলেন, আরবী ফারসীতে সবচেয়ে বড় শব্দ কি, যে যা জান, তোমরা ভেবে চিন্তে সব বল। বারো চোদ্দ অক্ষরের এক একটা শব্দ ছেলেরা অভিধান থেকে টেনে টেনে বার করতে লাগলো। মৌলভী সাহেব টুপি নাড়াতে নাড়াতে একবার এধার একবার ওধার ঘাড় দুলিয়ে বললেন, না না এর চাইতেও বড় শব্দ আছে তোমরা ভেবে বল। তখনকার দিনে ফারসী জানা থাকলে দরবোরের কাজে সুবিধা হত। এজন্য কাজের আশায় গোপাল সেখানে পড়ত। এবার অনেক ভেবেচিন্তে সে বললে, যত বড় শব্দই থাক, সবচেয়ে বড় শব্দ হল ইসমাইল। ঠিক বলছি কিনা দেখুন। মৌলভীর চোখ তখন কপালে। তিনি অবাক হয়ে বললেন, কিসে এটা বড় শব্দ হলো? গোপাল বললে, দেখছেন না- একটি পুরো মাইল আছে এই শব্দটার ভেতরে? জী এর চেয়ে বড় শব্দ আর কিছুই হতে পারে না মুলুকে। আপনি না বললে তো হবে না।
গোপাল একবার দূর দেশে বেড়াতে যাবে বহুদিন ভাড়াটে বাড়িতে রয়েছে, একে একে অনেক আসবাবপত্র জমা হয়েছে। সে সব আসবাব সঙ্গে করে নিয়ে যাওয়া অসম্ভব, ...
গোপাল একবার দূর দেশে বেড়াতে যাবে বহুদিন ভাড়াটে বাড়িতে রয়েছে, একে একে অনেক আসবাবপত্র জমা হয়েছে। সে সব আসবাব সঙ্গে করে নিয়ে যাওয়া অসম্ভব, অথচ বেচে যেতেই ইচ্ছে নেই। হেকে পয়সা পাবে। বেচে গেলে টাকা পয়সা যা পাওয়া যাবে এখন, তাতে ফিরে এলে সে টাকায় তো আর খরিদ করা যাবে না, ভালো ভালো আসবাবপত্র প্রায় সব গোপাল সকলের কাছ থেকে দান হিসাবে পেয়েছে তা তো বেচা উচিত নয়। তাহলে লোক কি বলবে? তাই কি করা যায় এ কথাই বার বার ভাবছে। আবার আসবাবপত্র রেখে যাওয়ার জন্যে ওই ভাড়া বাড়িটা বজায় রাখার কোনো মানে হয় না। কারণ অনেক টাকা ভাড়া গুনতে হবে। ভেবে ভেবে অবশেষে একটা ফন্দী বের করলে। গোপাল একটা বড় বন্ধকী দোকানে আসবাবগুলো নিয়ে গিয়ে বন্ধক দিলে। অনেক টাকা দামের আসবাবগুলো নিয়ে গিয়ে বন্ধক দিলে মাত্র চারশো টাকায়। দোকানদার ওইসব আসবাব রেখে পাঁচ হাজার টাকাও দিতে রাজি ছিল। কিন্তু গোপাল ভাবল টাকার চেয়ে জিনিস রাখারই গরজ তার। যত কম টাকা নেওয়া যায়, সুদ টানতে হবে তত কম। সেজন্য হিসেব করে দেখলে- চারশো টাকার দরুন মাসে তার যে সুদ দিতে হবে, একটা ঘর ভাড়া করে জিনিসগুলো রেখে যেতে তাকে মাসে মাসে অনেক বেশি ভাড়া গুনতে হবে। গোপাল বেশ কিছুদিন পর ফিরে এসে টাকা দিয়ে আবার আসবাবগুলি ছাড়িয়ে নতুন ঘরে উঠল।
গোপাল একবর বাইরে বেড়াতে গিয়েছিল। সেখানে গিয়েই অসুখে পড়ে গিয়ে বিভ্রাট। সেখানকার লোকজনেরা তখন তাকে একটি হাসপাতালে দিয়ে আসে। বিদেশ বিভুই তা...
গোপাল একবর বাইরে বেড়াতে গিয়েছিল। সেখানে গিয়েই অসুখে পড়ে গিয়ে বিভ্রাট। সেখানকার লোকজনেরা তখন তাকে একটি হাসপাতালে দিয়ে আসে। বিদেশ বিভুই তাই সেখানে জানা শোনা লোক ছিল না তার। রোজগার পত্র না থাকায় অনেক ধারটার হয়েও গেল সেখানে। সেই হাসপাতালে এক বৃদ্ধা তাঁর ছেলেকে রোজ দেখতে যান। তিনি লক্ষ করেন, সব রোগিকেই কেউ না কেউ দেখতে আসে- খাবার নিয়ে আসে, কিন্তু সামনের একজন রোগীকে কেউ দেখতে আসে না বা কিছু মিষ্টিও তার জন্য আনে না। অনেকদিন বাদে তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, বাছা তোমাকে কি কেউ দেখতে আসে না? বাড়ি থেকে কেউ কিছু নিয়েও আসে না দেখছি।
গোপাল বললে, একটু আগে একজন এসেছিলে। সে পাওনাদার, টাকা পাবে, তার তাগাদা দিতে। আর আমি টেসে গিয়ে তার পাওনা ফেঁসে গেল কিনা চোখে চোখে রেখে খবর নিতে।
গোপালের গ্রামে এক ধোপা বাস করত। সে খুবই বোকা। তার একটা ঘোড়া ছিল। কিন্তু ঘোড়ার দ্বারা কাপড় কেচে বাড়ি বাড়ি দেওয় যায়না। তার একটা গাধার দরকা...
গোপালের গ্রামে এক ধোপা বাস করত। সে খুবই বোকা। তার একটা ঘোড়া ছিল। কিন্তু ঘোড়ার দ্বারা কাপড় কেচে বাড়ি বাড়ি দেওয় যায়না। তার একটা গাধার দরকার। ঘোড়া বিক্রি করে সেই টাকায় গাধা ভাল রকম কিনে আনতে পারে- সে এ কথাটা ভাবতে পারে না। এমনই তরল তার মগজের ঘিলু। গোপাল অনেক কাজ সমাধা করে দিতে পারে লোকের মুখে শুনে সে গোপালকে গিয়ে ধরল, গোপাল দাদা, গোপাল দাদা, আমার এই ঘোড়ার দরকারনেই, একে গাধা বানিয়ে দাও। তুমি নাকি লোকে বলে সব পার।
গোপাল হেসে বললে, ব্যাটা তোমার মত গাধাকে পিটিয়ে বরং ঘোড়া বানানো যায়, ঘোড়া পিটিয়ে গাধা তৈরী করা যায় না আদপেই।
গোপালের কথা শুনে সে গজরাতে গজরাতে এই বলে বাড়ি ফিরল যে তুমি সব করতে পার কিন্তু ঘোড়া থেকে গাধা তৈরি করতে পার না- তবে তুমি কিসের সব ঘোড়ার ডিমের কাম কর। তবে তোমাকে এত লোক খাতির করে কেন?
গোপাল এই কথা শুনে মুচকি মুচকি হাসতে লাগল। ধোপাও বিফল মনোরথ হয়ে ঘোড়া নিয়ে বাড়ি ফিরে গেল।
গোপাল একদিন তার প্রিয় বন্ধু নেপালকে বললে, দেখো ভাই সবই তোমার আমার ব্যাপার। নেপাল জিজ্ঞাস করলে, সে আবার কি রকম? গোপাল বললে, এই ধরো নে...
গোপাল একদিন তার প্রিয় বন্ধু নেপালকে বললে, দেখো ভাই সবই তোমার আমার ব্যাপার।
নেপাল জিজ্ঞাস করলে, সে আবার কি রকম?
গোপাল বললে, এই ধরো নেপাল- তোমার বাড়ি আমার বাড়ি, আমার বাড়ি তোমার বাড়ি, তোমার টাকা আমার টাকা, আমার টাকা তোমার টাকা, তোমার জামা আমার জামা, আমার জামা তোমার জামা এই সব আর কি। বন্ধুবর অবাক হয়ে গোপালের মুখের দিকে তাকিয়ে রইল এ হেন অন্তরঙ্গতার ছোঁয়া পেয়ে। গোপাল ততক্ষণে ভেল্কি দেখানোর মত নেপালের পকেটে হাত ঢুকিয়ে খাবলা মেরে কিছু পয়সা তুলে নিয়ে বলে, এই যেমন তোমার পকেট আমার পকেট সেই পকেট তোমারই থাকল- তোমার হাত, মানে আমার হাত গেল আর এল।
নেপালের নয়ন গোল হয় আর বদন ক্রমাগতবিস্ফরিত হতে থাকে।
একদিন একটি বিশাল ধর্মসভায় বক্তৃতা হচ্ছিল সেখানে গোপালও ছিল বক্তৃতা শুনছে। একজন সকালবেলায় যে বক্তৃতা দিলেন, বিকালবেলার অন্য একজনও সেই একই...
একদিন একটি বিশাল ধর্মসভায় বক্তৃতা হচ্ছিল সেখানে গোপালও ছিল বক্তৃতা শুনছে। একজন সকালবেলায় যে বক্তৃতা দিলেন, বিকালবেলার অন্য একজনও সেই একই বক্তৃতা দিলেন- একই ভাষা, একই কথা। লোকজন সবাই অবাক। শেষে সকলে শুনে বললে, এরূপ কি কোনদিন হয়? গোপাল বলল নিশ্চয়ই বক্তৃতা কিনে এনেছেন। দৈবক্রমে একই বক্তৃতার কপি দুজনে কিনে এনে তাই উগরাতে গিয়ে বামাল শুদ্ধ ধরা পড়েছেন, আর কি। এই শুনে সকলে গোপালের উপস্থিত বুদ্ধির তারিফ করে হাসির রোল তুলে সবাই সভা মাতিয়ে দিল।
এক ভদ্রলোক গোপালের কর্মচারীর কাছে এসে বললে, আপনাদের বাবু নাকি কানে খাটো? ধান শুনতে গান শুনে কানে হাত দিয়ে তান ধরেন? এই বলে সে দমভরে হাসত...
এক ভদ্রলোক গোপালের কর্মচারীর কাছে এসে বললে, আপনাদের বাবু নাকি কানে খাটো? ধান শুনতে গান শুনে কানে হাত দিয়ে তান ধরেন? এই বলে সে দমভরে হাসতে লাগল। কর্মচারীটি তখন বললে, একটু আস্তে কনমশাই। বাবু পাশেই বসে আছে, শুনতে পারলে সর্বনাশ হবে। আপনার কাছে মোটেই ভাল তা ঠেকবে না। গায়ের ঝাল মিটিয়ে গাল দিয়ে আপনাকে পয়মাল করে ছেড়ে দেবে। ভদ্রলোক তখন চোখে সর্ষেফুল দেখতে থাকে।
গোপাল একাদশী করত। তার একাদশী করা অভ্যাস। গোপাল একাদশীর দিন সন্ধ্যেবেলায় প্রসাদ পেত লুচি, মিষ্টি- নানাবিধ ফল সহকারে। সেদিন যেন মহোৎসব লেগ...
গোপাল একাদশী করত। তার একাদশী করা অভ্যাস। গোপাল একাদশীর দিন সন্ধ্যেবেলায় প্রসাদ পেত লুচি, মিষ্টি- নানাবিধ ফল সহকারে। সেদিন যেন মহোৎসব লেগে যেত। গোপালকে ওভাবে একাদশীর দিন ভোজন করতে দেখে তার এক চাকর বললে, সামনের তারিখ থেকে আমিও একাদশী পালন করব বাবু। আমার একাদশী করার খুব ইচ্ছে। আপনি যদি আদেশ দেন আমি একাদশী করি। আমার খুব ইচ্ছা।
গোপাল মুচকি হেসে বলল, খুবই ভাল কথা, এই তো চাই। একাদশী করা সকলের উচিৎ। দেহের উপকার, তার সাথেই মনেরও সাত্ত্বিকভাব সাধনের জন্য একাদশী সকলের করা উচিত। পরবর্তী একাদশীর তারিখে সকাল থেকে গোপালের সঙ্গে অভূক্ত রইল।
কিন্তু সাঁঝ গড়িয়ে রাত্রি গভীর হয় হয়, তখনও গোপাল ভোজন করছে না দেখে চাকরটি ধৈর্যহারা হয়ে জিজ্ঞাস করলে, বাবু প্রতি একাদশীতেই তো আপনি সূর্যাস্তের ঠিক পরেই প্রচুর ভাল মন্দ ভোজন করে থাকেন, কিন্তু আজ এখনও কিছু খাচ্ছেন না কেন?
গোপাল মুচকি হেসে বলল, ওরে ব্যাটা আজ যে যেমন তেমন একাদশী নয়, সাক্ষাৎ ভীম একাদশী- আজ একদম নিরম্বু উপবাস। আজকে জলও খেতে নাই । সেজন্য আজ আর কিছু খাওয়ার ব্যবস্থা করিনি।
গোপালের চাকর হায় হায় করতে লাগল। এমন হবে জানলে কি সে একাদশীর নাম মুখে আনতো। পেট যে চোঁ চোঁ করছে। সেই থেকে চাকর আর কোন দিন একাদশীর কথা মুখে আনল না ভুলেও। গোপালও মুচকি হেসে মনে মনে বলল বেটা আজ বেশ ভালরকম জব্দ হয়েছে, আর কোনওদিন একাদশীর কথা মুখেও আনবে না। সহজে মতলব হাসিল হল দেখে মনে মনে আর একচোট হেসেও নিল গোপাল। যেমন কর্ম তেমন ফল।
রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের এক আত্নীয়, রাজার কাছেই থাকত। সে গোপালকে ভীষণ হিংসে করত। একদিন গোপাল যখন রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের সঙ্গে দেখা করবার জন্য রাজব...
রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের এক আত্নীয়, রাজার কাছেই থাকত। সে গোপালকে ভীষণ হিংসে করত। একদিন গোপাল যখন রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের সঙ্গে দেখা করবার জন্য রাজবাড়িতে ঢুকছিল, তখন সেই লোকটি রাজবাড়ির সামনে আখ খাচ্ছিল। লোকটি গোপালের কাছে এসে বললে, ওহে গোপাল, তুমি একটি আস্ত পাগল। মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র বোকা বলে তাকে কথার মারপ্যাচে ভুলিয়ে টাকা আদায় কর কাড়ি কাড়ি। আসলে তুমি একটা মহামূর্খ এবং তুমি একটা পাগল। জানোই তো পাগলে কিনা বলে এই বলে আখ চিবোতে লাগল।
গোপাল মুচকি হসে বললে, কথাটা সম্পূর্ণ করুন মশাই- পাগলে কি না বলে ছাগলে কিনা খায়। আপনিও তেমনি একটা ছাগল। সেইজন্যই একথা আপনাকে শোভা পায়।
গোপাল গ্রামের এক মহাজনের কাছ থেকে কিছু টাকা ধার নিয়েছিল। আজ দেব, কাল দেব বলে সে টাকা আর শোধ করতে পারেনি। সেই লোক গোপালকে একদিন হাটের মধ্...
গোপাল গ্রামের এক মহাজনের কাছ থেকে কিছু টাকা ধার নিয়েছিল। আজ দেব, কাল দেব বলে সে টাকা আর শোধ করতে পারেনি। সেই লোক গোপালকে একদিন হাটের মধ্যে পাকড়াও করে বললে, আমার টাকাগুলো দিয়ে দাও তো গোপাল, নইলে আজ আর তোমার ছাড়ব না। তোমাকে এত লোকের সামনে অপমান করব, দেখি তুমি কোথা যাও বাছাধন।
মহাজনের দ্বারা অপমানিত হয়ে গোপাল বললে, টাকা কি দেব না বলছি? আপনার টাকা আগামী কালেই দিয়ে দেবো। পরশু সকালেই আমার বাড়িতে চলে আসুন। আমি টাকা শোধ করে দেব পরশুর মধ্যে সামান্য টাকার জন্য এত অপমান করার আপার দরকার ছিল না। আমি টাকা যেমন করে পারিশোধ করার ব্যবস্থা করবই।
গোপালের কথা শুনে মহাজন মনে মনে ভাবলেন গোপাল যখন এত লোকের সামনে কথা ছিল তখন পরশু দিন যেভাবেই হোক টাকা পরিশোধ করবেই। এই ভেবে পরমু মহাজন গোপালের বাড়িতে গিয়ে হাজির হল। কই হে গোপাল টাকা দেবে বলেছিলে দাও, আমি ঠিক সময় মত এসেছি। মহাজনের ডাক শুনে গোপাল বাড়ির বাইরে বেরিয়ে এসে বললে, কাকভোরে ছুটে এসেছেন, দয়া করে বাড়ির দাওয়ায় একটু বিশ্রাম করুন- আমি যত তাড়াতাড়ি পারি আপনার টাকা পরিশোধের ব্যবস্থা করছি। আপনি কষ্ট করে এসেছেন প্রাণের টানে তাতেই আমি কৃতার্থ। আমার বাড়ি আজ পবিত্র হল।
মহাজন তো এখনই টাকা পাবে মনে ভেবে নিশ্চিত হয়ে গোপালের বাড়ির দাওয়ায় বসে হাটু দোলাতে রইল। কিছুক্ষণ পরে গোপাল আর গোপালের বড় ছেলে, সামনের খোলামেলা বেশ বড় বাগান ছিল, তাতে পাঁচ হাত অন্তর বেশ কয়েকটি নারকেল চারা পুতঁতে লাগল মনোযোগ সহকারে। তা দেখে মহাজন গোপালকে অস্থির হয়ে বললে, এ কি করছে গোপাল? আমার যে বেলা হয়ে যাচ্ছে। কাজকর্ম আছে যে। গদিতে যেতে হবে, সকালে উঠেই এসেছি জলখাবারও খাওয়া হয়নি। বাড়ীতে লোকজন আসবে, শ্রীঘ্র কর।
গোপাল নারকেলের চারা পুঁততে পুঁততে বললে দেখছেন, তো চারা পুঁতছি। একটু বসুন না। এখনি হয়ে যাবে পোতাঁ। আপনার টাকার ব্যবস্থা করে তবে আজ জলগ্রহণ করবো বলছি। এই দেখুন। করছি কিনা আপনি আর একটু বসে নিজে দেখুন। আপনি অপেক্ষা করুন, হলো বলে। বিশ্বাস না হয় উঠে এসে দেখুন।
কাজ শেষ করে গোপাল কাছে এসে দাড়াঁতেই মহাজন জিজ্ঞেস করলে, সেই থেকে তো বসিয়ে রেখেছো- একটা তামাকও দিলে না, যাক্ কই টাকা দাও। আমার তাড়া আছে।
গোপাল মুচকি হেসে বললে, এতক্ষণ ধরে তো আপনার টাকা শোধের ব্যবস্থাই করলুম মশায়।
তার মানে তুমি তো এখন নারকেলের চারা পুতলে। আমার টাকার ব্যবস্থা করলে কি করে?
গোপাল বললে, এই যে নারকেলের চারা পুতলাম তাতে নারকেল গাছ হবে এবং এতগুলো নাকেল গাছে যা ফল হবে তা তো আর কম নয়। দুবছরের নারকেলের টাকায় আপনার সব দায় দেনা শোধ হয়ে যাবেই। আপনাকে যখন কথা দিয়েছি আজই টাকা শোধের ব্যবস্থা করব, তাই ব্যবস্থা করে দিলাম। দুবছরের জন্য নারকেলের ইজরাও আপনাকে দিয়ে এলুম। আর ভাবছেন কেন, ধরুন আপনার টাকা বলতে গেলে নিশ্চিন্তে পেয়েই গেলেন সুদ সমেত।
গোপালের কথা শুনে পাওনাদার হাসবে না কাঁদবে ভাবতে ভাবতে শেষ পর্যন্ত বেচারা হেসেই ফেলল।
গোপাল বললে, এখন কি না টাকাটা নগদ পেয়ে গেলেন বলে হাসি আর ধরে না যে দাদার।
গোপালের মেয়ের প্রথম সন্তান হবে। গর্ভবতী অবস্থায় গোপালের মেয়ে গোপালের বাড়িতে সন্তান প্রসবের জন্য এসেছিল। রাতে শুতে যাবার আগ মেয়ে মাকে বলল...
গোপালের মেয়ের প্রথম সন্তান হবে। গর্ভবতী অবস্থায় গোপালের মেয়ে গোপালের বাড়িতে সন্তান প্রসবের জন্য এসেছিল। রাতে শুতে যাবার আগ মেয়ে মাকে বললে আমার আজ বড্ড ঘুম পাচ্ছে, আমি শুতে যাচ্ছি-আমার যখন প্রসব বেদনা উঠবে, তখন তুমি আমায় জাগিয়ে দিতে ভুল কর না যেন মা।
মেয়ের এই কথা শুনে গোপালের স্ত্রী হেসে বললে, প্রসব বেদনা উঠলে আমায় আর কষ্ট করে তোমাকে জাগাতে হবেনা মা তুমিই সকলকে জাগিয়ে পাড়া মাতিয়ে তুলবে। তুমি এখন নিশ্চিন্তে মনে ঘুমুতে পার।
গোপাল মাঝে মাঝে যাত্রাভিনয় করত। গোপাল যাত্রায় হনুমান সাজে। যাত্রায় অধিকারী একদিন গোপালকে ডেকে বললে, তোমার মাইনে এবার থেকে কমিয়ে দেব তুমি...
গোপাল মাঝে মাঝে যাত্রাভিনয় করত। গোপাল যাত্রায় হনুমান সাজে। যাত্রায় অধিকারী একদিন গোপালকে ডেকে বললে, তোমার মাইনে এবার থেকে কমিয়ে দেব তুমি মোটেই আগের মতো লাফ দিতে পারছো না। তোমার লাফের জোর কই? বীর হনুমানের লাফ ভাল না হওয়ার জন্য শ্রোতারা অনেক বাজে কথা বলাবলি করছে।
গোপাল ভাবলে, এত লাফিয়েও যখন অধিকারীর মত পাচ্ছিনে তখন যাত্রাদল থেকে বিদায় নেবার আগে একটা জব্বর লাফই দিয়ে যাব। অধিকারী মশাই আর কত জোর লাফ চায় দেখা যাক। একবার শেষে লাফ দেব দেখি কি হয়। একদিন রাত্রে যাত্রা শুরু হল। অধিকারী আসরে বসে যাত্রাগাণ শুনছিল। গোপাল যথারীতি সেবারেও হনুমান সেজেছিল আচমকা যাত্রার আসর থেকে সে এমন এক লাফ দিলে, অধিকারীর ঘাড়ের ওপর গিয়ে যেন পড়ে পড়ে। আর একটু হলে অধিকারীর ঘাড়টাই বুঝি ভেঙে যেত। অধিকারী ককিয়ে উঠে বলল, এ তুই কি করলি গোপাল? সব সময়ইয়ার্কি করিস কেন?
গোপাল নির্বিকারভাবে বললে, আপনি বললেন আমার লাফের জোর নেই। তাই তো হনুমানের লাফটা দেখিয়ে দিলুম কর্তা। এই এক লাফে সাগর টপকে রাক্ষরেসর ঘাড়ে পড়া আর কি।
Follow Us
Were this world an endless plain, and by sailing eastward we could for ever reach new distances