Home Top Ad

Responsive Ads Here

Search This Blog

শেখ সাদীর নীতি গল্প লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

সিকান্দার শাহ ছিলেন রোমের বাদশাহ। দিগ্বিজয়ী, পরাক্রান্ত, সৎ ও নিপুণ যোদ্ধা ছিলেন তিনি। পৃথিবীর বহুদেশ জয় করেছিলেন। প্রজারা তাঁকে দারুণ শ্রদ্...

সিকান্দার শাহ ছিলেন রোমের বাদশাহ। দিগ্বিজয়ী, পরাক্রান্ত, সৎ ও নিপুণ যোদ্ধা ছিলেন তিনি। পৃথিবীর বহুদেশ জয় করেছিলেন। প্রজারা তাঁকে দারুণ শ্রদ্ধা করত।
একবার কয়েকজন লোক সিকান্দার শাহকে জিজ্ঞসা  করলেন,
--আপনি একজন বিশ্ববিজয়ী বীর। আপনার আগেও অনেক বাদশা ছিলেন রোমে। তাদেরও সৈন্যদল ছিল। তারাও যুদ্ধ করতেন। কিন্তু তারা আপনার মতো সুনাম অর্জন করতে পারেন নি। তারা আপনার মতো এত দেশ দখল করতে পারেননি। এর কারণ কী?
সিকান্দার শাহ প্রশ্ন শুনে মৃদুু হাসলেন।
--আমি পৃথিবী জয় করেছি ভালোবেসে। সকলকে প্রাণ দিয়ে ভালোবেসেছি। কাউকে আমি কখনও কষ্ট দেই নি। তাই প্রজারাও আমাকে ভালোবেসেছে। আমি কারও বদনাম করিনি। শত্রুদেরও সঙ্গে আমি সবসময় ভালো ব্যবহার করেছি। আইনকানুন মেনে চলেছি। মানুষকে মানুষের মর্যাদা দিয়েছি।
সকলের উদ্দেশ্যে সিকান্দার বললেন: নিজে ভালো হলে পৃথিবীও ভালো এবং ভালো লোকদের সবাই ভালোবাসে।

বাদশাহ একদিন দারুন খুশি রাত্রে একটি চমৎকার স্বপ্ন দেখেছেন। তার আজ মন খুব ভালো। সকালেই তিনি এক ভৃত্যের হাতে এক থলে মোহর দিয়ে বললেন-- যাও, এই ...

বাদশাহ একদিন দারুন খুশি
রাত্রে একটি চমৎকার স্বপ্ন দেখেছেন। তার আজ মন খুব ভালো। সকালেই তিনি এক ভৃত্যের হাতে এক থলে মোহর দিয়ে বললেন-- যাও, এই শহরে যত নিঃস্ব ও ভালোমানুষ আছে সবাইকে এই অর্থ দান করে আসো।
ভৃত্যটি টাকার  থলে হাতে নিয়ে বেরিয়ে গেল। সারাদিন ঘুরে সন্ধার সময় ফিরে এল ভৃত্যটি। মোহরের থলে বাদশাহকে ফেরত দিল।
বাদশাহ অবাক হলেন।-- এই শহরে এত নিঃস্ব লোক রয়েছে, তুমি কি তাদের একজনকেও খুঁজে পেলে না? তুমি আবার ভালো করে অনুসন্ধান করো।  তারপর মোহরগুলো দিয়ে এসো।
ভৃত্যটি বিনয়ের সঙ্গে উত্তর দিল--জাঁহাপনা, আমার সঙ্গে সবার দেখা হয়েছে। যারা প্রকৃত ভালোমানুস তারা বিনয়ের সঙ্গে দান প্রত্যাখ্যান করেছে। আর যারা প্রকৃত ভালোমানুষ নয়, তারা লোভীর মতো হাত বাড়িয়েছে। আমি নিঃস্ব ও ভালোমানুষদের টাকা দিতে বলেছেন। তারা টাকা গ্রহণ না-করায় আমি সমস্ত সমোহর ফেরত নিয়ে এসেছি।
বাদশাহ খুব খুশি হলেন।-- তুমি ঠিক কাজ করেছ। সকলেই যে প্রকৃত সাধু ব্যক্তি নয়, একথাটি আমি বুঝতে পারি নি। তোমার কর্তব্যজ্ঞান আমাকে মুগ্ধ করেছে।

যে ব্যক্তির মন থেকে টাকাপয়সার লোভ দূর হয়নি--সে কখনও সাধু ব্যক্তি হতে পারে না।

এই গল্পটি ইরান দেশের। সেখানকার এক বাদশাহ, নাম তার ফরিদ। বাদশাহ’র ছিল অতি বিচক্ষণ এক মন্ত্রী। খুবই জ্ঞানী লোক। তার দুরদর্শিতা ছিল অসাধারন। বা...

এই গল্পটি ইরান দেশের।
সেখানকার এক বাদশাহ, নাম তার ফরিদ। বাদশাহ’র ছিল অতি বিচক্ষণ এক মন্ত্রী। খুবই জ্ঞানী লোক। তার দুরদর্শিতা ছিল অসাধারন। বাদশাহ তাকে ভালোও বাসতেন খুব। রাজ্যের যে কোন বিপদ-আপদে এই মন্ত্রী সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন।
একদিন এক ব্যক্তি বাদশাহ’র কাছে গিয়ে মন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করল।
--হুজুর, আপনার প্রিয় মন্ত্রী ভিতরে ভিতরে আপনার শত্রু। তিনি বহুলোককে রাজকোষ থেকে টাকা ধার দিয়েছেন। শর্ত একটাই--আপনার মৃত্যুর পরে এই টাকা শোধ দিতে হবে। তিনি চান না যে আপনি দীর্ঘজীবী হোন। আপনার মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে তার হাতে অনেক অনেক টাকা পয়সা আসবে। কী ভয়ংকর চক্রান্ত--বাদশাহ আপনি একবার ভেবে দেখুন।
বাদশাহ এই কথা শুনে মন্ত্রীর প্রতি অত্যন্ত বিরক্তও ক্ষুদ্ধ হলেন। সময়মতো একদিন তাকে বললেন--
মন্ত্রী, এ কী কথা শুনতে পাচ্ছি? লোকজনদের টাকা ধার দিচ্ছেন অন্যরকম শর্তে, এর উদ্দেশ্য কী? আমি বেঁচে থাকতে আপনি এই টাকা ফেরত নেবেন না, স্পষ্ট বোঝ যাচ্ছে আমার মৃত্যুতেই আপনার যথেষ্ট লাভ। আপনাকে আমার আন্তরিক বন্ধু বলেই জানি। কিন্তু আপনার এ কেমন শত্রুর মতো আচরণ?
-- জাঁহাপনা, আপনি যখন জিজ্ঞেস করলেন তখন আপনাকে সবকতথা পরিষ্কার ভাবেই খুলে বলা উচিৎ। কিছুই গোপন করা উচিৎ নয়। আমি চাই সমস্ত লোকই আপনার মঙ্গল কামনা করুক। কিন্তু যারা আপনার শত্রুপক্ষ, আপনার বিরুদ্ধে কথা বলে, আমি শুধু তাদেরকেই শর্তসাপেক্ষে টাকা দিয়েছি। শর্তটি হচ্ছে-- আপনার মৃত্যু না-হলে টাকা ফেরত দিতে হবে না।

জাঁহাপনা, আপনি নিশ্চয়ই জানেন, টাকা ধার নিয়ে সহজে সেটা কেউ ফেরত দিতে চায় না। সুতরাং আপনার বিরুদ্ধপক্ষ সারাক্ষণই কামনা করবে-- যাতে আপনার মৃত্যু না হয়। যাতে আপনি সুদীর্ঘ জীবন লাভ করতে পারেন। টাকার মমতাতেই তারা আপনার পূর্ণ স্বাস্থ্য ও সুদীর্ঘ জীবন কামনা করবে।
বাদশাহ উত্তর শুনে খুবই সন্তুষ্ট হলেন। মন্ত্রীর বুদ্ধির তারফি করতে লাগলেন। তাকে যথেষ্ট পুরষ্কার দিলেন। আর মন্ত্রীর বিরুদ্ধে যে লোকটা বদনাম করেছে তাকে শাস্তি দিতেও ভুললেন না।

এক বাদশাহ তাঁর অত্যন্ত প্রিয় কর্মচারীকে গোপন কথা বললেন। সাবধান করে দিলেন বারবার, যেন এই কথা কেউ জানতে না পারে। কথা গোপন রাখা খুব কঠিন কাজ। অ...

এক বাদশাহ তাঁর অত্যন্ত প্রিয় কর্মচারীকে গোপন কথা বললেন। সাবধান করে দিলেন বারবার, যেন এই কথা কেউ জানতে না পারে।
কথা গোপন রাখা খুব কঠিন কাজ। অনেকেই সেটা পারে না।
প্রায় বছরখানেক কথাটা গোপন থাকল। তারপর একদিন রাজ্যের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ল সেই গোপন কথা। হাটে মাঠে ঘাটে সবখানে সবাই জানে সেটা।
বাদশাহ তখন তাকে ডেকে পাঠালেন তার প্রিয় কর্মচারীকে এবং তার প্রাণ দন্ডের আদেশ দিলেন।
কেন এই কথাটি প্রকাশিত হল?
কর্মচারীকে নিয়ে যাওয়া হল জল্লাদের কাছে। তার মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হবে।
কর্মচারীটি তখন কাতর অনুনয় করে বলল,
--বাদশাহ, আমাকে ক্ষমা করুন। এই অপরাধের জন্য আমি দায়ী। কিন্তু এক অর্থে আপনিও দায়ী। আপনি নিজের কথা গোপন রাখতে পারেননি। আমার মতো সামান্য কর্মচারী কীভাবে সেটা গোপন রাখবে? আর আপনি সেটা আশাই করেন কীভাবে? সমুদ্রের জল বন্ধ করতে না পারলে নদীর প্রবাহ কি বন্ধ করা সম্ভব?
বাদশাহ তার প্রিয় কর্মচারীর কথা মেনে নিলেন।
মুক্তি দেয়া হলো কর্মচারীটিকে।

মরুভূমির পথ ধরে দীর্ঘ উটের কাফেলা। সারি সারি ছোট-বড় উট। দীর্ঘ অফুরন্ত রাস্তা ধরে তারা চলছে। ক্লান্ত উটের দল পথে বিশ্রাম নিতে বসল। তখন এক উটে...

মরুভূমির পথ ধরে দীর্ঘ উটের কাফেলা। সারি সারি ছোট-বড় উট। দীর্ঘ অফুরন্ত রাস্তা ধরে তারা চলছে।
ক্লান্ত উটের দল পথে বিশ্রাম নিতে বসল। তখন এক উটের বাচ্চা তার মাকে হতাশ স্বরে বলল-- মা, আমার হাতে যদি লাগাম থাকত, আমি কখনই এই কাফেলার সঙ্গে এইভাবে বোঝা বহন করতাম না। হায়, আমার কী দুর্ভাগ্য! আমার কোন স্বাধীনতা নেই। আমার পথ চলার পরিচালক অন্য একজন।
উটের মা তখন জবাব দিল-- হায়রে অবোধ শিশু। পরাধনি তুমি একা নও। সকলেই আসলে পরাধীন। মানুষেরও কোন স্বাধীনতা নেই। তাকেও একদিন মৃত্যুবরণ করতে হয়। একজীবনে তাকেও বিপদের মুখোমুখি হতে হয়।
সব বিপদ থেকে সে কি নিজেকে উদ্ধার করতে পারে? যখন মাঝসমুদ্রে ঝরের কবলে জাহাজ আক্রান্ত হয় তখন সুদক্ষ নাবিকও কিছু করতে পারে না। তার আত্মচিৎকারের শব্দ আকাশে মিলিয়ে যায়।
উটের মা তার শিশুকে আদর করতে করতে বলল-- আমরা অন্তত বনের নির্বোধ পশুপাখির চেয়ে ভালো আছি। আমরা কাজ জানি। মানুষ তাই আমাদের ভালোবাসে।

আকাশে উড়ে বেড়াচ্ছিল চিল আর শকুন। অসীম অনন্ত নীল আকাশ। মেঘমুক্ত নির্মল পরিবেশ। শকুন তার বন্ধু চিলকে বলল-- ওহে চিল, আমি কত দূরদৃষ্টি সম্পন্ন ত...

আকাশে উড়ে বেড়াচ্ছিল চিল আর শকুন।
অসীম অনন্ত নীল আকাশ। মেঘমুক্ত নির্মল পরিবেশ।
শকুন তার বন্ধু চিলকে বলল-- ওহে চিল, আমি কত দূরদৃষ্টি সম্পন্ন তুমি কি তা জানো? তুমি কি জানো, এত উপর থেকেও আমি নিচের সবকিছু দেখতে পাই?
চিল বলল-- হয়তো তোমার কথা সত্যি। কিন্তু ভাই, কথার কোন মূল্য নেই। তুমি দূরের জিনিস কেমন দেখতে পাও, এসো তার একটা পরীক্ষা হয়ে যাক।
শকুন এক কথায় রাজি।
উড়ে উড়ে তারা এল বহুদূরের  এক জঙ্গলের মাথায়। চিল জানতে চাইল--নীচে কী আছে তুমি কি তা সব দেখতে পাচ্ছ?
শকুন গভীর দৃষ্টি দিয়ে নিচে তাকাল।
--ভাই, তুমি যদি বিশ্বাস করো, তবে শোন--বনের পাশে ঠিক ঐ স্থানটিতে একটা গমের দানা আছে, আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি।
চিল এই কথায় বিস্মিত হল। সে তো কিছুই দেখতে পাচ্ছে না। এবং বিশ্বাসই করতে পারল না, এতদূর থেকে একটা গমের দানা দেখা সম্ভব।
শকুন বলল--শুরু হোক আমাদের পরীক্ষা।
তখন চিল আর শকুন দুজনেই উড়ে উড়ে নিচে দিকে নামতে লাহল। শকুন বিজয়গর্বে উৎফুল্ল। কারণ আরেকটু নামলেই সত্যি সত্যি সে গমের দানাটা সংগ্রহ করতে পারবে। যখনই সে গমটা আনতে গেছে তৎক্ষনাৎ তার পায়ে শিকারির ফাঁদ আটকে গেল। শকুন টের পেল--তার আর মুক্তি নেই। অনেকক্ষণ চেষ্টা করল। কিন্তু যতই চেস্টা করে ততই কঠিন বন্ধনে বেচারা আটকে যাচ্ছে।
বোঝা গেল, শকুনের ভাগ্যে আর মুক্তি নেই। এই ঘটনায় চিল অতিশয় দুঃখিত হর। সে বলল--কী আশ্চর্য ব্যাপার, অতদূর থেকে তুমি সামান্য গমটি দেখতে পেলে, আর এত নিকটে এসে বড় ফাঁদের বন্ধন তোমার চোখে পড়ল না। তোমার দূরদৃষ্টির পরিমাণ বড় ভয়াবহ। এই বিপদের সময় দূরদৃষ্টি দিয়ে তোমার কোন উপকার হল না।
শকুন আর কিছুই বলল না।
-- এখন আমি মৃত্যুপথযাত্রী। আমার এখন সূক্ষ্ম বিচার নেই। অনন্ত সাগরে কূল নেই, কিনারা নেই-- সেখানে সাঁতারের বাহাদুরি দেখানোর কোন মানে নেই।
এখন আমি বিপদে পড়েছি। এই সময় আমার দূরদৃষ্টির কোন অর্থ হয় না।

বাদশাহ’র ভৃত্য পলায়ন করেছে। রাজা হুকুম দিলেন -- যে কোনভাবে হোক ওকে খুঁজে বের করো। ভৃত্যকে খুঁজে ধরে নিয়ে আসা হল। বাদশাহ তার প্রাণদন্ডের আদেশ...

বাদশাহ’র ভৃত্য পলায়ন করেছে।
রাজা হুকুম দিলেন -- যে কোনভাবে হোক ওকে খুঁজে বের করো।
ভৃত্যকে খুঁজে ধরে নিয়ে আসা হল।
বাদশাহ তার প্রাণদন্ডের আদেশ দিলেন।
নিয়ে যাওয়া হল তাকে জল্লাদের দরবারে। জল্লাদের খড়গ উদ্যত। এই ঘোর দুঃসময়ে একজন মানুষের কী করার থাকতে পারে! ভৃত্যটি হতাশার ঘন অন্ধকারে নিমজ্জিত। জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে বেচারা কাতরস্বরে প্রার্থনা শুরু করল: হে পরম করুণাময়, আমাকে অহেতুক হত্যা করা হচ্ছে। যারা আমাকে হত্যা করছে তাদের আমি ক্ষমা করেছি। তুমিও তাদের ক্ষমা করো। বাদশাহ প্রাণদন্ডের আদেশ দিয়েছেন। তাতে আমার কোন দুঃখ নেই। কারণ এই রাজাই আমাতে প্রতিপালন করেছেন। তুমি সকলের পাপ ক্ষমা করো।
বাদশাহ ভৃত্যের ফাঁসির মঞ্চের পাশেই ছিলেন। ভৃত্যের মৃত্যুকালীন প্রার্থনা শুনে তাঁর চিত্ত বিচলিত হল। তিনি লজ্জা পেলেন। তাঁর সমস্ত রাগ পানি হয়ে গেল। সঙ্গে সঙ্গে আদেশ দিলেন রাজা: ওকে মুক্তি করে দাও।
ভৃত্যটি মুক্তি পেল তার কোমলতা দিয়ে।
যদি ফাঁসির মঞ্চে তার ক্রোধের আগুন জ্বলত, তবে বিপরীত হতে পারত। ভৃত্যটি প্রার্থনার সময় নম্রভাবে, কোমলভাবে, বিনীতভাবে সকলের মঙ্গল কামনা করেছে। মনে রাখা দরকার, সকলের মঙ্গল কামনার মধ্যেই নিজের মঙ্গল লুকিয়ে থাকে।

সিরিয়া দেশের এক বাদশাহ ছিলেন। খুবই দয়ালু, নীতিবান ও ধর্মভীরু এক বাদশাহ। তিনি প্রজাদের খুব ভালোবাসতেন। প্রায় প্রতিদিন ছদ্মবেশে নগরভ্রমণে বেরো...

সিরিয়া দেশের এক বাদশাহ ছিলেন।
খুবই দয়ালু, নীতিবান ও ধর্মভীরু এক বাদশাহ। তিনি প্রজাদের খুব ভালোবাসতেন। প্রায় প্রতিদিন ছদ্মবেশে নগরভ্রমণে বেরোতেন তিনি। লুকিয়ে লুকিয়ে প্রজাদের সুখ দুঃখের খবর নিতেন।
একদিন ভোর বেলা।
এক মসজিদের সামনে এসে দেখেন, দুইজন ভিক্ষুক মেঝেতে শুয়ে আছে। নিদারুণ শীতের রাত্রে তারা ভালোমতো ঘুমাতে পারেনি। তাদের না ছিল কম্বল, না ছিল লেপ-তোষক। তাদের একজন অন্যজনকে বলছে-- আমাদের দেশের বাদশাহ কতই-না আমাদে প্রমোদে  হাসিখেলায় দিন কাটাচ্ছেন। আমাদের মতো গরিব প্রজাদের খবর কি তিনি রাখেন? আমরা প্রতিদিন কতই না কষ্ট করছি। রাজা কি তার খবর রাখেন?
আরেকজন বলল-- একদিন রাজাকে এইভাবে রাত্রিযাপন করানো উচিৎ। তাহলে তিনি বুঝতেন, পরিবের কত দুঃখ।
লোক দুজন তারপর বাদশাহকে নিয়ে আলোচনা সমালোচনা শুরু করল। ছদ্মবেশে বাদশাহ সব শুনলেন। সমালোচনা একমসময় একসময় এমন তীব্র হয়ে উঠল যে বাদশাহ আর বেশিক্ষণ সেখানে দাঁড়াতে পারলেন না। তিনি চলে গেলেন।
ক্রমে সকাল হল।
আকাশ রাঙা করে সূর্য উঠল।
মানুষজন জেগে উঠল। শুরু হল সংসারের কাজ। বাদশাহ যথারীতি সিংহাসনে আরোহন করলেন। তারপর ডেকে পাঠালেন সেই দুই ভিক্ষুককে। তারা ভয়ে ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে দরবারে এসে হাজির। বাদশাহ তাদেরকে সিংহাসনের পাশে বসতে বললেন। মূল্যবান খাবার দাবার করালেন। টাকাকড়ি ও পোশাক-আশাক ‍উপহার দিলেন।
ভিক্ষুক দুজন তো অবাক!
কোন্‌ বাদশাহর মুখ দেখে আজ আমাদের ঘুম ভাঙল আমাদের! কোন আলো আজ লাগলো চোখে। ভিক্ষুক দুজন কাতরভাবে জানতে চাইল-- বাদশাহ, হঠাৎ করে আমাদের প্রতি এই অনুগ্রহের কারণ কী?

বাদশাহ হাসতে লাগলেন প্রফুল্ল গোলাপের মতো। বললেন-- আমি তেমন কোন বাদশাহ নই যে রাজত্বগৌরবে আমি গর্বিত। আমার প্রজাদের ব্যাপারে আমি উদাসীন নই। সেইজন্যে তোমাদের দুঃখ-দুর্দাশা দূর করলাম। আজ থেকে তোমরা আমার বন্ধু। তোমরা গতরাত্রে আমারকে নিয়ে সমালোচনা করছিলে। আমি নাকি দরিদ্র প্রজাদের খোঁজ খবর রাখি না।

ভিক্ষুক দুইজন বাদশাহ’র এই কথায় ভারি লজ্জিত ও অপ্রস্তুত হয়ে পড়ল। বাদশাহ’র পায়ে লুটিয়ে পড়ে তারা ক্ষমা প্রার্থনা শুরু করল।
বাদশাহ বললেন-- না, ক্ষমা প্রার্থনার কিছু নেই। আমি সিংহাসনে বসেছি প্রজাদের স্বার্থরক্ষার জন্যই। আমিও একজন দাস। আমি শুধু আমার কর্তব্য পালন করছি। এর বেশিকিছু নয়। আমি তোমাদের দুঃখ দুর্দশা দূর করতে পেরেছি-- এটাই আমার সান্ত্বনা।

বনের ধারে ঘর। সেইখানে থাকে এক বৃদ্ধ। একদিন এক কুকুর সেই লোকটিকে ভীষণভাবে কামড়ে দিল। কুকুরের কামড়ের যন্ত্রনায় সারারাত তিনি  ছটফট করতে লাগলেন।...

বনের ধারে ঘর। সেইখানে থাকে এক বৃদ্ধ। একদিন এক কুকুর সেই লোকটিকে ভীষণভাবে কামড়ে দিল। কুকুরের কামড়ের যন্ত্রনায় সারারাত তিনি  ছটফট করতে লাগলেন। ব্যাথায় শরীরে জ্বর এসে গেল।
সেই লোকের একটি  মেয়ে ছিল।
সকালবেলা সব শুনে মেয়েটি বাবাকে বলল--কুকুর তোমাকে কামড়েছে? তোমার কি দাঁত নেই? তুমি কেন কুকুরকে কামড়ালে না?
মেয়ের কথা শুনে হো হো হেসে উঠল বাবা।
--কুকুরের চেয়ে আমার গায়ে শক্তি অনেক বেশি। কুকুর আমােকে কামড়েছে, তাই বলে কুকুকে কামড়ানো আমার শোভা পায় না। ছোটলোকের সঙ্গে কখনও ছোটলোকি করতে নেই। কুকুরের কাজ কুকুর করেছে। আমি তো আর কুকুর নই। আমি কেন কুকুরের কাজ করতে যাব?

একজন সাধু ব্যক্তি পথে পথে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এখানে ঘোরেন, ওখানে ঘোরেন। লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন। মানুষের উপকার করার চেষ্টা করেন। ঘুরতে ঘুরতে একদি...

একজন সাধু ব্যক্তি পথে পথে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এখানে ঘোরেন, ওখানে ঘোরেন। লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন। মানুষের উপকার করার চেষ্টা করেন।
ঘুরতে ঘুরতে একদিন দেখলেন, পথে একটা কুকুর প্রায় মরা মরা অবস্থায় পড়ে আছে। কুকুরটা পানির পিপাসায় বড়ই কাতর।
কাছেই ছিল একটা পানির কুয়া। কিন্তু সেখানে পানি ওঠানোর কোনই ব্যবস্থা ছিল না। লোকটি সঙ্গে সঙ্গে মাথার পাগড়ি খুলে ফেললেন। পাগড়ির সাথে টুপি বেঁধে সেটা নামিয়ে দিলেন কুয়ার মধ্যে। এতে সামান্য একটু পানি উঠল।
ঐ পানি পান করিয়ে তিনি কুকুরটার জীবন রক্ষা করলেন। একজন পথিক তাকে জিজ্ঞাসা করল--ভাই, অবলা জীবটির জীবন রক্ষা করার জন্য আপনি নিজের পাগড়ি-টুপি নষ্ট করে ফেললেন?
লোকটি বিনয়ের সঙ্গে জবাব দিল-- যার জীবন আছে তার প্রতি আমাদের দয়া দেখানো উচিৎ। প্রকৃতি-রাজ্যে কত বিচিত্র প্রাণী রয়েছে-- সকলের জন্যেই আমারদের ভালোবাসা থাকা প্রয়োজন।
হ্রদয় ছাড়া একজন মানুষ কখনই বড় হতে পারে না।

এক দেশে এক অত্যাচারী বাদশাহ ছিলেন। বিভিন্ন রকমের অত্যাচার তিনি করতেন। লোকজনের ঘোড়া-গাধা জোর করে কেড়ে নিতেন। বাদশাহ একদিন সৈন্যসামন্ত সঙ্গে ন...

এক দেশে এক অত্যাচারী বাদশাহ ছিলেন। বিভিন্ন রকমের অত্যাচার তিনি করতেন। লোকজনের ঘোড়া-গাধা জোর করে কেড়ে নিতেন।
বাদশাহ একদিন সৈন্যসামন্ত সঙ্গে নিয়ে শিকার করতে গেলেন। দলবল নিয়ে শিকার করতে আসা রাজাদের  একটা অভিজাত্য এবং এটা একটা বড় উৎসব। রাজা একা একা একটা শিকারের পেছনে ধাওয়া করতে করতে অনেকদূর চলে গেলেন। তাঁর অন্য কোনদিকে খেয়াল নেই।
তখন সন্ধা।
রাজা টের পেলেন বনের মাথায় ঘন আঁধার নামছে। সঙ্গে কোনো অনুচর নেই। সম্পূর্ণ অপরিচিত স্থান। তিনি কাছাকাছি এক গ্রামে গিয়ে আশ্রয় নিলেন। এক ধনবান ব্যক্তির বাড়িতে রাত্রিযাপন করবেন বলে ইচ্ছা প্রকাশ করলেন।
কিছুক্ষণ পর তিনি দেখলেন, ধনী ব্যক্তিটি তার গাধাকে বেদম প্রহার করছে। গাধা কাতর হয়ে চিৎকার করছে। লোকটি নির্বিকার। সে গাধার একটা পা ভেঙে দিল। রাজা তাই দেখে লোকটিকে বললেন-- কী হে, অবলা জীবটাকে এভাবে পিটাচ্ছ কে? গাধার ট্যাং ভেঙে তুমি নিজের শক্তি পরীক্ষা করছ?
লোকটি উত্তেজিতভাবে জবাব দিল: আমার কাজ ভালো কি মন্দ, আমিই সেটা খুব ভালোভাবে জানি। গায়ে পড়ে তোমার কথা বলার কোন প্রয়োজন নেই।
জবাব শুনে বাদশাহ খুব দুঃখ পেলেন।
এইভাবে এই নিরীহ প্রাণটিাকে মারা কী কারণ থাকতে পারে দয়া করে সেটা আমাকে বুঝিয়ে বলবে কি? আমার মনে হচ্ছে, তুমি যে শুধু নির্বোধ তাই নয় বরং আস্ত একটা পাগল।
লোকটি এ কথায় হেসে বলল: হ্যাঁ, আমি পাগলই বটে। তবে সব শুনলে তুমিও বুঝবে, আমি নির্বোধের মতো গাধাটার পা ভেঙে দিইনি। এর মধ্যে একটা উদ্দেশ্য আছে আমার। আমাদের বাদশাহ খুব অত্যাচারী। একথা সবাই জানে। আমার সুস্থ সবল গাধাটির খবর পেলে নিশ্চয়ই তিনি জোর করে এটা নিয়ে যাবেন। শুনেছি, আমাদের এই এলাকায় বাদশাহ এসেছেন। তাই গাধাটাকে বাদশাহর অত্যাচার থেকে রক্ষা করবার জন্যে খোঁড়া করে দিলাম। বাদশাহ গাধাটিকে কেড়ে নিয়ে যাওয়ার চেয়ে খোঁড়া অবস্থায় এটা আমার কাছে থাকা অনেক ভালো। আমাদের অত্যাচারী বাদশাহকে জানাই শত ধিক!

বাদশাহ গ্রামবাসী লোকটির মুখে নিন্দা শুনে খুবই দুঃখ পেলেন। কোন জবাব দিলেন না। রাগে, অপমানে, দুঃখে সারারাত দুচোখের পাতা এক করতে পারেননি। ঘুমহীন রাত কাটল। ভোরের আলো ফুটল পুব আকাশে। মৃদু বাতাস বয়ে যাচ্ছে। পাখির কলকাকলিতে মুখর চারদিক।

সৈন্যসামন্ত বাদশাহকে খুজতে খুজতে সাতসকালে হাজির হল সেই গ্রামে। ধনী লোকের বাড়ির সামনে এল তারা। শত শত লোকজনের মুহূর্তে ভিড় হয়ে গেল। সুসজ্জিত ভৃত্যেরা বাদশাহর সেবায় নিয়োজিত হল। সেই বাড়ির সামনে জাঁকজমকপূর্ণ বিশাল দরবার বসে গেল। রাজ্যের প্রধান প্রধান ব্যক্তি রাজার সামনে এসে আসন গ্রহণ করলেন। রাজকীয খানাপিনার আয়োজন করা হলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই সেই এলাকার সম্পূর্ণ পরিবেশ পালটে গেল। সৈন্যদল ও ঘোড়ার পদভরে থরথর করে কাঁপতে লাগল সেই এলাকা।

বাড়ির সেই লোকটি ব্যাপারস্যাপার দেখে একেবারে থ। গতরাতে স্বয়ং বাদশাহ ছিলেন তার অতিথি। অর্থাৎ বিপদ ঘনিয়ে এসেছে।
বাদশাহ ডেকে পাঠালেন লোকটিকে।
ধরে বেঁধে তাকে আনা হল বাদশাহ’র সামনে।
লোকটি বুঝল, তার আত্মরক্ষার আর কোন উপায় নেই। এই মুহূর্তেই তার জীবন শেষ হবে। আর ভয় করা বৃথা। কারণ উদ্যত তরবারির নিচেই মানবের ভাষা অধিকতর শক্তিশালী হয়ে থাকে।

তাই লোকটি সাহসের সঙ্গে বলল-- হে মহামান্য বাদশাহ, আমি একাই শুধু আপনার নিন্দা করি নাই। খবর নিয়ে দেখুন, জনসাধারণ সকলেই একই কথা বলে থাকে। আমাকে সহজেই হত্যা করা আপনার পক্ষে সম্ভব। আমার কথায় আপনি মনে আঘাত পেয়েছেন--সে জন্য আমি দুঃখিত। কিন্তু আপনার উচিৎ হবে ভালো কাজ করা-- যেন কেউ আপনার বদনাম করতে না পারে। অন্যায় করে কখনই সুনাম অর্জন করা সম্ভব নয়।আপনার কর্মচারীরা সারাক্ষণ আপনার গুণকীর্তন করে থাকে। এতে রাজার  সম্মান বৃদ্ধি পায়  না। প্রজারা যদি বাদশাহ’র সুনাম করে, তাতেই বাদশাহ’র সম্মান বাড়ে।

বাদশাহ এই সাহসী সত্যকথা শুনে দারুন উদ্দীপ্ত হলেন। লোকটিকে মুক্ত করে দিলেন। সকলের উদ্দেশ্যে বললেন: আমি আজ থেকে চেষ্টা করব ন্যায়পরায়ন, ‍সুশাসক হতে। আমি চাই একজন ভালো বাদশাহ হতে। যেন আমার সুনাম ছড়িয়ে পড়ে দিক দিগন্তরে।

এক ছিল কৃপণ কৃষক। প্রচুর তার টাকাপয়সা। কিন্তু নিজের জন্য এক কানাকড়ি সে খরচ করত না। পয়সা খরচ সহবে বলে ঠিকমতো খায় না। রাতদিন তার  মাথায় একটাই ...

এক ছিল কৃপণ কৃষক।
প্রচুর তার টাকাপয়সা। কিন্তু নিজের জন্য এক কানাকড়ি সে খরচ করত না। পয়সা খরচ সহবে বলে ঠিকমতো খায় না। রাতদিন তার  মাথায় একটাই চিন্তা--কি করে আরো টাকাপয়সা আয় করা যায়। টাকা জমাতে হবে, প্রচুর সম্পদশালী হতে হবে তাকে।

লোকটি যেমন কিপটে, ছেলেটি ছিল তার সম্পূর্ণ উল্টো। সে দুহাতে টাকাপয়সা ওড়াতো। বাবা যেখানে টাকা লুকিয়ে রাখে সেই গোপন স্থানের সন্ধান সে পেল; তাকে আর পায় কে! সমস্ত টাকাপয়সা হাতিয়ে নিয়ে সেখানে সে রেখে দিল কিছু পাথরের টুকরো।
তারপর তার ফুর্তি দেখে কে!
বন্ধু বান্ধব সঙ্গে নিয়ে আনন্দ করে বেড়াতে লাগল সে। টাকা খরচ করে বলে অনেক বন্ধুবান্ধবও জুটে গেল।
কিছুদিন পরে কৃপণ লোকটি পানতে পারল--তার বগুদিনের জমানো টাকা চুরি হয়ে গেছে। মনের দুঃখে লোকটি দুদিনেই তাতে বুড়োর মতো দেখতে লাগলো। খাওয়া দাওয়া ছেড়ে সারাদিন কেবল বিলাপ করছে: হায় হায় আমার এ কী হল!
ছেলেটি এসব জানতে পেরে বাবাকে একদিন এসে বলল: বাবা, তুমি নাকি দারুন ভেঙে পড়েছ।
কৃপণ লোকটি হাহাকার করে উঠল: হ্যাঁ বাবা, আমার সব শেষ হয়ে গেছে। টাকার বদলে কিছু পাথর এখনে আমার সঞ্চয়ে।
এই শুনে ছেলেটি খুব মজা পেল।
আমাদের জীবনে টাকা প্রয়োজন কী বাবা? আমরা একটু সুখে-শান্তিতে থাকতে চাই-- এই কারণেই তো মানুষ টাকা আয় করে। কিন্তু সেই টাকা যদি আমাদের জীবনে কোনই কাজে না লাগে তবে তার মূল্য কোথায়? তখন টাকা আর পাথর দুই-ত একই জিনিস। দুটোই মূল্যহীন। তুমি যেভাবে জীবন কাটাও সেটা কোন মানুষের জীবন নয়।
-- তাহলে, মানুষ কেন টাকা আয় করে?
বাবার এই কথা শুনে হেসে ফেলল ছেলেটি। খুব জ্ঞানীলোকের মতো সে বলল: কৃপণের টাকায় জগতের কোন উপকার হয় না। মানুষ টাকা আয়  করে জীবন ধারনের জন্য। আর সে মহৎ মানুষ যে টাকা আয় করে সৎকাজে ব্যয় করে।
কৃপণ  মানুষটি পুত্রের এই কথা একবাক্যে মেনে নিল। সে স্বীকার করল-- এবারে টাকা আয় করে ভালো কাজে ব্যয় করবে।

গাধার পিঠে চড়ে লোকটা যাচ্ছিল। অনেক জরুরি কাজ তার। গাধা পথে যেতে যেতে পড়ে গেল গর্তে। গাধা তো গাধাই--বেচারা আর উঠতে পারে না। লোকটাও অনেক চেষ্ট...

গাধার পিঠে চড়ে লোকটা যাচ্ছিল। অনেক জরুরি কাজ তার। গাধা পথে যেতে যেতে পড়ে গেল গর্তে। গাধা তো গাধাই--বেচারা আর উঠতে পারে না। লোকটাও অনেক চেষ্টা করল গাধাটাকে ওঠানোর। কাজ হল না।
লোকটার মেজাজ খারাপ।
যে গাধাটাকে যা-তা বলে গালাগালি শুরু করল। সময় যাচ্ছে তার লোকটার রাগও বাড়ছে। কে রাজা কে প্রজা, কি মিত্র-- সবাইকেই সে একধারসে গালি দিচ্ছে।
মানুষ রেগে গেলে তার কান্ডজ্ঞান লোপ পায়। লোকটারও তাই হল। রাগে, ক্ষোভে, বিরক্তিতে সে চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করল।
এমন সময় ঐ পথ দিয়ে যাচ্ছিল সেই দেশের বাদশাহ। লোকটার কান্ড দেখে বাদশাহ খুব অবাক হলেন। গাধা কাদায় পড়েছে। কিন্তু লোকটা সেই রাগে সবাইকে গালাগালি করছে কেন?
বাদশাহর সহচরেরা ভয়ানক উত্তেজিত। তরবারির এক কোপে লোকটার মুন্ডুটা ধর থেকে নামিয়ে দেয়া দরকার। মৃত্যুদন্ডই ওর একমাত্র শাস্তি।
বাদশাহ এসব কথার কর্ণপাত করলেন না।
তিনি বিবেচনা করে দেখলেন, লোকটা আসলেই খুব বেকায়দায় পড়েছে। এ অবস্থায় কারও মেজাজ ঠিক থাকার কথা নয়। বাদশাহ কোমলস্বরে লোকটাকে জিজ্ঞাসা করলেন-- ব্যাপারটা কী?
লোকটা তখন সবিস্তারে সব বলল।
বাদশাহ বললেন-- তাহলে মামাদের উচিৎ তোমাকে সহযোগিতা করা।
বাদশাহ তার সহচরদের সঙ্গে নিয়ে গর্ত থেকে গাধাটিকে উদ্ধার করলেন।
লোকটি যারপরনাই প্রীত হল।
বাদশাহ কিছু অর্থও সাহায্য করলেন লোকটিকে।
তারপর বললেন-- আমি হচ্ছি এই দেশের বাদশাহ। আমার রাজ্যে কেউ বিপদে পড়ে আমাকেই গালাগালি করবে, এ হতে পারে না। বাদশাহ হয়েও আমি তোমার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। তোমার বিপদে আমি সমব্যাথী।

বাদশাহের কথা শুনে লোকটি মাটির সঙ্গে প্রায় মিশে গেল। তার রাগ, ক্ষোভ কমে গেছে। সে এখন সুস্থ মানুষ। বরং লজ্জায় সে কাতর হয়ে উঠল। বাদশাহর সামনে মাথা নত করে সে বলল-- আপনি মহৎ মানুষ। আপনি উত্তেজিত না হয়ে আমার সঙ্গে যে আচরণ করলেন তা একমাত্র আপনার পক্ষেই সম্ভব। তাই আপনি একজন মহৎপ্রাণ শাসক। আমি সামান্য প্রজা।

হাতেম তাই কে নিয়ে অনেক গল্প আছে। দানশীল, মহৎপ্রাণ এই ব্যক্তিটি ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন মানুষের প্রতি তাঁর অকৃত্রিম । ভালোবাসার জন্য। হাতেম তাইয়...

হাতেম তাই কে নিয়ে অনেক গল্প আছে।
দানশীল, মহৎপ্রাণ এই ব্যক্তিটি ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন মানুষের প্রতি তাঁর অকৃত্রিম । ভালোবাসার জন্য।
হাতেম তাইয়ের একটা ঘোড়া ছিল, খুবই প্রিয় ঘোড়া। ঘোড়াটা নিয়েই এই গল্প। ঘোড়াটা ছুটত ঝরের মতো। ফুলে ফুলে ‍উঠত কেশর। চিঁহি চিঁহি ধ্বনি ছড়িয়ে পড়ত আকাশে বাতাসে। ঘোড়াটির সুনাম ছড়িয়ে পড়েছিল অনেক দূরে দেশে। রোমের বাদশাহর কানে গিয়ে পৌছাল এই ঘোড়ার কথা।

বাদশাহর ঘোড়া সংগ্রহ করার বাতিক ছিল। তিনি জানতেন হাতেম তাই একজন দানশীল ব্যক্তি। তিনি দূত পাঠালেন হাতেম তাইয়ের কাছে। ঘোড়াটি তার দরকার। হাতেম তাই যদি ঘোড়াটি উপহার দেয় তাতেই বোঝা যাবে তার হৃদয় কত মহৎ।
বহুদিন ধরে, বহুপথ পেরিয়ে দূতেরা এল হাতেম তাইয়ের বাসভববনে। পরম সমাদরে হাতেম তাই অতিথিদের বরণ করলেন। তাদের থাকার ব্যবস্থা করলেন। খাবার আয়োজন করলেন। অতিথি আপ্যায়ন হচ্ছে মানুষের প্রধান কর্তব্য।

পরদিন দূতেরা রোমের বাদশাহর প্রস্তাব জানাল হাতমে তাইকে। লোকমুখে বাদশাহ শুনছেন, হাতেম তােইয়ের একটা সুন্দর ঘোড়া আছে। উপহার হিসেবে বাদশাহ ঘোড়াটা সংগ্রহ করতে চান। এই-না শুনে হাতেম তাই খুব দুঃখিত হয়ে উঠলেন।

হায়, হায়, এই কথা তোমরা গতকাল আমাকে বলোনি কেন? গতরাতে তোমাদের আপ্যায়ন তরানোর জন্য সেই ঘোড়াটিকে জবাই করা হয়েছে। কারণ তোমাদের জন্যে পর্যাপ্ত পরিমান ভাল খাবার আমার ঘরে ছিল না। আমার পশুপাখির সংগ্রহশালাটি বাড়ি থেকে অনেক দূরে। তোমরা পথশ্রমে খুব পরিশ্রান্ত ছিলে। দেরি হয়ে যাবে ভেবে ঐ ঘোড়াটিকেই জবাই করেছি। এখন কী হবে?

দূতেরা হাতেম তাইয়ের মহৎগুণে অবাক হয়ে গেলেন। হাতেম  তাই অন্য অনেক ঘোড়া ও প্রচুর ধনরত্ন উপহার দিলেন রোমের বাদশাহকে। অতিথিদেরও উপহার দিলেন প্রচুর পরিমানে।
রোমের বাদশাহ সব ঘটনা শুনে বিস্মিত হলেন।
হাতেম তাইয়ের নামে ধন্য ধন্য রব পড়ে গেল চারদিকে।

এক দরিদ্র ভিক্ষুক সারাদিন পথে পথে ঘুরে বেড়িয়েছে। ক্ষুধায় পিপাসায় কাতর হয়ে সে এল এক ধনী লোকের বাড়ির দরজায়। -- ও ভাই আমাকে একটু ভিক্ষা দিন। আম...

এক দরিদ্র ভিক্ষুক সারাদিন পথে পথে ঘুরে বেড়িয়েছে। ক্ষুধায় পিপাসায় কাতর হয়ে সে এল এক ধনী লোকের বাড়ির দরজায়।
-- ও ভাই আমাকে একটু ভিক্ষা দিন। আমি খুব ক্ষুধার্ত।
ধনী লোকটি বলল-- না হে, এখানে কোন ভিক্ষাটিক্ষা দেওয়া হয় না। তুমি অন্য কোথাও দ্যাখো।
ভিক্ষুক তবুও দাঁড়িয়ে রইল। মালিক তখন তার বাড়ির কাজের ছেলেটাকে পাঠাল। যাও ওরে বিদায় করো।
কাজের ছেলেটি গিয়ে ঘারধাক্কা দিয়ে ভিক্ষুককে বিদায় করল। ক্লান্ত, ক্ষুধার্থ ভিক্ষুক বেচারা কাঁদতে কাঁদতে ফিরে চলল অন্য দরজায়।
এই ধনী লোকটি ছিল খুবই অত্যাচারী ও অহংকারী। মানুষকে সে মানুষ মনে করে না। কিছুদিন পরে তার কাপালে নেমে এল দুর্ভোগ। ব্যবসা করতে গিয়ে সব টাকা লোকসান করে লোকটি নিঃস্ব হয়ে গলে। এখন সে পথের ভিক্ষুক। চাকর ছেলেটিও কাজ নিয়ে চলে গেল অন্যত্র আরেক ধনী ব্যক্তির বাড়িতে। সেই ধনী ব্যক্তিটি ছিল খুবই ভাল। হৃদয়বান এবং মানুষের মর্যাদা দিতে জানতো সে।
একদিন এক ভিক্ষুক এসে হাজির হল সেই ধনী ব্যক্তিটির বাড়িতে।
ভাই, আমি খুব ক্ষুধার্ত। কিছু খাবার চাই।
ধনী ব্যক্তিটি সঙ্গে সঙ্গে ভিক্ষুকের খাবারদাবারের ব্যবস্থা করলেন। রাত্রে থাকার ব্যবস্থা করলেন। আর প্রভুভক্ত চাকরটিকে বললেন, লোকটিরেআদর-আপ্যায়নে যে কোন ত্রুটি না হয়।
চাকরটি খাবার নিয়ে ভিক্ষুকের কাছে পৌছতেই অবাক হয়ে গেল। আরে, এ যে তার পুরনো প্রভু! মানুষের ভাগ্য কত দ্রুত বদলে যায়। চাকরটির চোখে পানি এসে গেল। জল ছলছল করতে লাগল চোখে। ধনী ব্যক্তিটি জিজ্ঞাসা করল-- ব্যাপার কী। তোমার চোখে পানি কেন?

হুজুর, আমি একদিন এই লোকটির বাসায় কাজ করতাম। কিন্তু লোকটি ছিল খুবই অহংকারী। আজ সে পথের ফকির।
ধনী ব্যক্তিটি তখন বলল-- তাইতো বলি, লোকটিকে তো আমারও চেনা চেনা মনে হচ্ছে। ঐ ব্যক্তির বাড়িতে ভিক্ষা করতে গিয়েছিলাম। গলাধাক্কা দিয়ে আমাকে বের করে দেওয়া হয়। আজ আমি বদলে গেছি। ভাগ্য ফিরেছে আমার । আমি আজ ধনী ব্যক্তি। আমাকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দিয়েছিল যে ব্যক্তি সে আজ পথের ভিক্ষুক। সে আজ আমার অতিথি।

এই হচ্ছে মানুষের জীবন। মানুষ যদি কোন অন্যায় করে সে তার কর্মফল পায়। আজ যে আমির কাল সে ফকির, আজ যে ফকির কাল সে আমির-- এই হচ্ছে পৃথিবীর নিয়ম।

একজন ভালোমানুষের কাছে চতুর লোক এসে পায়ে লুটিয়ে পড়ল। মুখে তার কথার খই ফোটে। ভাইরে, আমি বড়ই বিপদে পড়ে আপনার কাছে এসেছি। আমার বিপদের কথা কীভাবে...

একজন ভালোমানুষের কাছে চতুর লোক এসে পায়ে লুটিয়ে পড়ল। মুখে তার কথার খই ফোটে। ভাইরে, আমি বড়ই বিপদে পড়ে আপনার কাছে এসেছি। আমার বিপদের কথা কীভাবে যে বলি আপনাকে?
না, না, বলে ফ্যালো, শিগগির বলো। সদাশয় ভালোমানুষটি অভয় দিল। একবার বিপদে পড়ে একজনের কাছে দশটি টাকা ধার করেছিলাম। সেই টাকা এখনও শোধ দিতে পারিনি। পাওনাদারের তাগাদায় আমার জীবন প্রায় বিপন্ন। টাকা শোধ দিতে না পারলে সে এখন আমাকে ধরে বেঁধে নিয়ে যাবে। আমাকে মারধোর করবে। আমি এখন কী করব? আমাকে এই বিপদ থেকে একমাত্র আপনিই বাঁচাতে পারেন।
ভালোমানুষ লোকটি আর কিছুই জানতে চাইলেন না। সঙ্গে সঙ্গে দশটি টাকা দিয়ে দিলেন।
চতুর লোকটি বিদায় হল।
তখন পাশে বসে থাকা একজন লোক সাধু ব্যক্তিটিকে জিজ্ঞাসা করল-- লোকটির কাতর অনুনয় -বিনয়ে আপনি তাঁকে টাকা দিয়ে দিলেন? এমনও তো হতে পারে লোকটা মিথ্যা বলে টাকা দিয়ে গেল।

সাধু ব্যক্তিটি বললেন-- সেটা আমার দেখার ব্যাপার নয়। লোকটি বিপদের কথা বলে আমার কাছ থেকে টাকা নিল। সত্যি যদি সে বিপদে পড়ে থাকে তবে আমি তাকে সাহায্য করলাম। এতে আমার পুণ্য হবে। আর যদি ছলনা করে থাকে তবে পরে সে যেন আমাকে জ্বালাতন না করতে পারে --এই জন্য টাকা দিয়ে দিলাম। সৎলোকদের সাহায্য করতে হয়। আবার অসৎ লোকদের অখুশি রাখলেও চলে না।

একজন লোকের চোখে অসুখ হয়েছে। সারাক্ষণ চোখ দিয়ে পানি ঝরে। জ্বালা যন্ত্রনা। একদনি সে এক পশু-চিকিৎসকের কাছে গেল। তার অসুখের কথা সবিস্তারে বলল। চ...

একজন লোকের চোখে অসুখ হয়েছে। সারাক্ষণ চোখ দিয়ে পানি ঝরে। জ্বালা যন্ত্রনা। একদনি সে এক পশু-চিকিৎসকের কাছে গেল। তার অসুখের কথা সবিস্তারে বলল।
চিকিৎসক সব শুনলেন। তারপর পশুদের চোখের ওষুধ দিলেন লোকটার চোখে। ভুল চিকিৎসায় বেচারা প্রায় অন্ধ হয়ে গেল। রাগে ক্ষোভে সে গেল কাজির কাছে।
--আমি এর বিচার চাই।
কাজি সব শূনে চিকিৎসক কোন সাজাই দিলেন না। বেকসুর খালাস করে দিলেন।
আর লোকটিকে বললেন- দোষ আপনার। আপনি কোন বুদ্ধিতে পশু-চিকিৎসকের কাছে গেলেন? আপনি কি একজন পশু? পশু-চিকিৎসক আপনাকে পশু ভেবে চিকিৎসা করেছে। এর মধ্যে কোন অন্যাই নেই।

বসরার নাম শুনেছে তো? গোলাপফুলের শহর। খুব বিখ্যাত জায়গা। বসরার স্বর্ণকারদের দোকানে বসে গল্প করছিল এক পথিক। পথিক ঘুরে বেড়ায় মরুভূমিতে। যায় এক ...

বসরার নাম শুনেছে তো?
গোলাপফুলের শহর। খুব বিখ্যাত জায়গা। বসরার স্বর্ণকারদের দোকানে বসে গল্প করছিল এক পথিক। পথিক ঘুরে বেড়ায় মরুভূমিতে। যায় এক দেশ থেকে আরেক দেশে। সে বলছিল-- একবার মরুভূমির মধ্যে পথ হারিয়ে ফেললাম। সে এক দারুন ভয়ানক অভিজ্ঞতা।
এদিকে যাই, ওদিকে যাই, পথ আর খুজে পাই না। পেটে খিদে, তৃষ্ণায় বুক ফেটে যাচ্ছে, দুশ্চিন্তায় ভয়ে আতঙ্কে শরীর হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে। আমি ভেবে নিলাম-- আজ আমার জীবনের শেষ দিন। মৃত্যু এখন আমার সামনে উপস্থিত। পথ খুঁজে পাওয়ার কোন উপায়ই আর পাচ্ছি না।
এমন সময়-- কিছুদূরে দেখতে পেলাম একটা থলে পরে আছে। মনটা কিছুক্ষণের জন্যে আনন্দে ভরে গেল-- যাক, থলেতে খাবারদাবার হয়তো কিছু পাওয়া যাবে। দ্রুত ছুটে গেলাম থলেটার দিকে।
হায়রে কপাল, থলেটা খুলে দেখি--সেখানে এক মূল্যবান পাথর। আলো ঝলমল করছে। পরম দুঃখে আমি ছুড়ে ফেলে দিলাম। তারপর আবার খাবারের সন্ধানে, পানির সন্ধানে ঘুরে বেড়াতে লাগলাম।
স্বর্ণকারদের মধ্যে একজন প্রশ্ন করল--পাথরটা ফেলে দিলে কেন? ওটা সঙ্গে রাখলেই পারতে। পরে ওটা তোমার কাজে লাগত।
পথিক মৃদু হাসল। বলল-- ক্ষুধায় কাতর ব্যক্তির কাছে সামান্য খাবার পানির মূল্য পৃথিবীর সকল মণিমানিক্যের চেয়েও বেশি মূল্যের।

হাতেম তাইকে নিয়ে অনেক গল্প আছে। তিনি ছিলেন একজন মহানুভব, পরোপকারী ব্যক্তি। গরিব-দুঃখীর বন্ধু। মানুষের জন্য জীবন পর্যন্ত উৎসর্গ করতে তিনি প্র...

হাতেম তাইকে নিয়ে অনেক গল্প আছে। তিনি ছিলেন একজন মহানুভব, পরোপকারী ব্যক্তি। গরিব-দুঃখীর বন্ধু। মানুষের জন্য জীবন পর্যন্ত উৎসর্গ করতে তিনি প্রস্তুত। মানুষের মুখে মুখে ছিল হাতেম তাইয়ের গুণের কথা। তারা ভাবত-- এরকম মহামানব দুনিয়াতে দুটি নেই।
একদিন।
কয়েকজন লোক গেল হাতেম তাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে। তারা বলল- আপনার চেয়ে হৃদয়বান ও গুণবান মানুষ পৃথিবীতে আর কেউ নেই। হাতেম তাই বিনীতভাবে বলল-- না না, এই কথা ঠিক নয়। আমি  একজন সামান্য মানুষ। আমার চেয়ে গুণবান ব্যক্তি অনেকে আছে। আমরা তাঁদের দেখতে পাই না।
কৌতূহলি লোকজন জানতে চাইল-- কোথায় তাঁরা?
-- সবখানেই আছেন তাঁরা। যেমন সামান্য একটা ঘটনার কথা বলছি তোমাদের। এবার চল্লিশটা উট কোরবানি দিলাম আমি। সকলকেই দাওয়াত করলাম। আমির থেকে ফকির সবাই আমার নিমন্ত্রিত অতিথি। খানাপিনার ঢল বয়ে গেল আমার বাড়িতে।

বিমেষ এক কাজে আমাকে কিছুক্ষণের জন্যে সেদিন বাইরে যেতে হয়েছিল। পথে যেতে যেতে নজরে পড়ল, একজন কাঠুরিয়া কাঠ কাটছে। তার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেসা করলাম-- কিহে ভাই, কাঠ কাটছ কেন? সেখানে গেলেই তো আজ খানা পাবে।
কাঠুরিয়া ক্লান্তভাবে আমার দিকে তাকাল-- আমি পরিশ্রম করে খাই। যতদিন শরীরে শক্তি আছে ততদনি কাজ করে খাব। কোন ব্যক্তির আতিথেয়তা বা অনুগ্রহ লাভ করে আমি বেঁচে থাকতে চাই না।
হাতেম তাই তখন কৌতূহলী লোকগুলোর উদ্দেশ্যে বললেন--এই যে একজন সামান্য কুঠিরিয়া, নিশ্চিতভাবে সে আমার চেয়েও বেশি গুণী ব্যক্তি। তাঁর প্রতি শ্রদ্ধায় আমার মাথা নত হয়ে আসে।

আজ থেকে অনেক বছর আগের কথা। সিরিয়ার ধু-ধু মরুভূমি দিয়ে একদল যাত্রী চলেছে তাদের গন্তব্যস্থলে। তখন পথে চলাচল করা খুব কষ্টের ব্যাপার ছিল। কারন য...

আজ থেকে অনেক বছর আগের কথা। সিরিয়ার ধু-ধু মরুভূমি দিয়ে একদল যাত্রী চলেছে তাদের গন্তব্যস্থলে। তখন পথে চলাচল করা খুব কষ্টের ব্যাপার ছিল। কারন যেখানে সেখানে দস্যুদল ওত পেতে থাকত। যে কোন সময় তারা ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে এবং সর্বস্ব লুট করে নিয়ে যেতে পারে। যাত্রীদলে সবাই খুব ভাল মানুষ। স্বাভাবিকভাবে ভয়টাও তাদের বেশি।

এমন সময় তাদের সঙ্গে এসে জুটল এক যুবক। ভাবভঙ্গিতে মনে হল, দুর্দান্ত সাহসী সে। হাতে তীর-ধনুক। কথা বলে চটপচ। হুংকার দেয় মাঝে মাঝে। যে সে একাই ডাকাতকে পরাস্ত করতে পারবে।
এরকম একজন সাহসী যুবককে সঙ্গে পেয়ে যাত্রীদল বেশ নিশ্চিন্ত হল। পথে দস্যুর ভয় অন্তত আর নেই।
ছেলেটি শক্তিশালী বটে কিন্তু যুদ্ধের কোন অভিজ্ঞতাই নেই। সে কখনও সামনাসামনি লড়াই করেনি। সে জানে না, আক্রান্ত হলে কেমন করে যুদ্ধ করতে হয়। জীবন কেটেছে আরাম-আয়েশে। যাত্রীদল তবু আশ্বস্ত। এরকম একজন বীর সঙ্গে থাকতে আবার ভয় কী!
যাত্রীদল চলছে।
মরুভূমির দুর্গম পথ পেরিয়ে যেতে যেতে হঠাৎ করে একদিন দস্যুদলের মুখোমুখি হল তারা। দলে মাত্র দুইজন দস্যু। একজনের হাতে একটা লাঠি। সে লাঠিটা বনবন করে ঘোরাতে লাহল। আরেকজন বড় বড় পাথর ছুড়ে মারতে লাগল।
দস্যু দেখে যাত্রীদলের মাথা খারাপ। বীরপুরুষের হাত-পা কাঁপতে লাগল। এতক্ষণ তীর ধনুক নিয়ে তার আস্ফালন ছিল। ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে হাত থেকে তীর-ধনুক পড়ে গেল।
দস্যু দুজন খুব সহজেই যাত্রীদলের কাছ থেকে টাকাপয়সা, সোনাদানা সব কেড়ে নিল। যাত্রীদলের মাথায় হাত। সর্বস্ব খুইয়ে তারা এখন নিঃস্ব। কিছুক্ষণ পরে টের পাওয়া গেল, বীর যুবকটি পালিয়ে গিয়েছে।
মরে রাখতে হবে যার কোন অভিজ্ঞতা নেই তাকে দিয়ে কোন কাজ হয় না। যে অসময়ে দম্ভ দেখায় এবং কথা বেশি বলে তার ওপরে আস্থা রাখতে নেই। কথায় বলে, অভিজ্ঞ শিকারি কৌশলে বাঘ মারতে পারে কিন্তু অনভিজ্ঞ শক্তিমান বীর বাঘের পেটে যায়।