এই মেয়েটা হ’ত বেটা,

দিতাম সোণার কোমরপাটা,

থাকতো লোকে চেয়ে;

আমার বড় সাধের মেয়ে!

তাক খুড়া খুড় খুড়া

ভাঙলো খাটের খুরা,

নামলো হাতের খোপ,

খোকার নাচন দেখতে এল

সওদাবাদের লোক।

সওদাবাদের ময়দা রে ভাই,

বহরমপুরের ঘি,

খাসা করে কচরি ভেজে

খোকার মুখে দি!

খোকনমণি বড় হয়ে

বসবে সিংহাসনে;

কত অন্ধ আতুর বেঁচে যাবে

খোকনমণির দানে।

খোকন, মায়ের কথা ভুল না,

পাপ কর্ম করো না!

দোল দোল দুলুনি,

রাঙা মাথায় চিরুণী।

বর আসবে যখনি,

নিয়ে যাবে তখনি।

কেঁদে কেন মর?

আপনি বুঝিয়া দেখ,

কার ঘর কর?

অবু থবু গিরি সুত,

মায়ে বলে, পড় পুত।

পড়লে শুনলে দুধি ভাতি,

না পড়লে ঠেঙ্গার গুঁতি!

মামাশ্বশুর ভাগিনাবউ,

মোরে না ছুঁইও কালা বউ;

কালা বউ দেখ্‌ছ নি?

তপ্ত অম্বল খাইছ নি!

খোকা এল কৈ?

ভোজ রেখেছি খই।

গরম দুধ, সবড়ি কলা,

খাবে খোকা বিকেল বেলা।

যখন বাঙ্গীর ক্ষেত চষে,

তখন শেয়ালনী এসে বসে;

ও শেয়ালা আয় রে--

গা খানি মোর কেমন কেমন করে!

যখন বাঙ্গীর পাতা,

তখন শেয়ালনীর হল মাথাব্যাথা;

ও শেয়ালা আয় রে--

গা খানি মোর কেমন কেমন করে!

যখন বাঙ্গীর কুষি,

তখন শেয়ালনী মেন বড়ই খুসী;

ও শেয়ালা আয় রে--

গা খানি মোর তেমন কেমন করে!

যখন বাঙ্গী জালি,

তখন শেয়ালনী বেড়ায় আলি আলি;

ও শেয়ালা আয় রে--

গা খানি মোর কেমন কেমন করে!

যখন বাঙ্গীর ফুল,

তখন শেয়ালনী ঝেড়ে বাঁধে চুল;

ও শেয়ালা আয় রে--

গা খানি মোর কেমন কেমন করে!

যখন বাঙ্গীর বাতি

তখন শেয়ালনী ঘোরে দিন-রাতি;

ও শেয়ালা আয় রে--

গা খানি মোর কেমন কেমন করে!

যখন বাঙ্গী ফাটে,

তখন শেয়ালনী বসে চাটে;

ও শেয়ালা আয় রে--

গা খানি মোর কেমন কেমন করে!

আয় মেনি পুষ পুষ,

দুধ খাবি আয়!

মাছ মেখে ভাত দেবো

হাত দেবো গায়!

সোণার নূপুর পায়,

খুকু নেচে নেচে যায়;

হাতে নিয়ে সবড়ি কলা

চুষে চুষে খায়;

খুকু ফিরে ফিরে চায়,

আর নাচে ধায় ধায়!

ব্যাং বলে, চ্যাং ভাই,

গর্তে ছিলুম ভালো;

চুণিলাল বেরিয়ে আমার

গা করলে কালো।

দ্যাল পড়ে ঝুরঝুরিয়ে,

মাটি পড়ে খসে;

সাত শ’ ব্যাঙে কীত্তন করে,

দেখে চুণিলাল বসে!

আয় রে হনু লাফি লাফি,

খোকা কাঁদছে ফুঁপি ফুঁপি!

দুধ দেখলে পালিয়ে যায়,

কলা খাবি ত ধরুব আয়!

ধন ধন ধনিয়ে,

কাপড় দেবো বুনিয়ে;

তাতে দেবো হীরের খোপ--

ফেটে মরবে পাড়ার লোক!

কাক ঝিঁঝি বকুল-বিচি

কাকের গলায় শিকলগাছি;

শিকল ধরে দিলাম টান,

ঝিঁঝি ভেঙ্গে খান খান।

লক্ষী পিঁড়ে সরু চিড়ে,

বাগবাজারের দৈ;

শান-বাঁধান ঘাট পাই ত

মনের কথা কই!

গড়গড়ের মা লো, গড়গড়ের মা,

তোর গড়গড়েটা কৈ?

হালের গরু বাঘে খেয়েছে

পিঁপড়ে টানে মই।

পুষ পুষ ময়না,

ভাত খাবি ত আয় না!

কাল দিইছি গয়না,

আজো বিয়ে হয় না--

পুষ পুষ ময়না।

খুকু যাবে শশুরবাড়ী

সঙ্গে যাবে কে?

বাড়ীতে আছে হুনো বেড়াল,

কোমড় বেঁধেছে।

আম কাঁঠালের বাগান দেবো,

ছায়ায় ছায়ায় যেতে;

শান বাঁধান ঘাট দেবো,

পথে জল খেতে।

ঝাড়-লন্ঠন জ্বেলে দেবো,

আলোয় আলোয় যেতে;

উড়কি ধানের মুড়কি দেবো,

শাশুড়ী ভুলাতে!

শাশুড়ী ননদ  বলবে দেখে,

“বৌ হয়েছে কালো!”

শ্বশুর ভাসুর বলবে দেখে

“ঘর করেছে আলো!

আয় ঘুম আয়

তাদের শেয়ালে শশা খায়!

তারা লূণ কোথা পায়?

আলুণ আলুণ খেয়ে

বনেতে পালায়।

খুকুনমণি দুধের ফেণী

কৌ-গাছের মৌ;

সব ছেলেদের বলবো খুকুন

হাঁড়িখাকীর বৌ!