Home Top Ad

Responsive Ads Here

Search This Blog

এক সময় এক গ্রামে পাশাপাশি দুই পড়শী থাকত। একজন ছিল ধনী, আরেকজন গরিব । ধনী লোকটির নাম ৎসে-রিং। সে ছিল খুব দাম্ভিক, রাগী এবং কিপটে । গরিব লোক...

দুই পড়শী-- তিব্বতের লোকাকাহিনী

এক সময় এক গ্রামে পাশাপাশি দুই পড়শী থাকত। একজন ছিল ধনী, আরেকজন গরিব । ধনী লোকটির নাম ৎসে-রিং। সে ছিল খুব দাম্ভিক, রাগী এবং কিপটে । গরিব লোকটির নাম চাম্‌-বা। সে খুব দয়ালু, সাধ্যমতো পাড়াপড়শীর উপকার করার চেষ্টা করত। 
চাম্‌-বার ঘরের দরজার মুখে চালের খোপে এক জোড়া চড়াই পাখি বাসা করেছিল । এক সময় তাদের একটি ছানা হয় ডিম থেকে । মা ও বাবা চড়াই দু’জনেই বাচ্চার খাবারের খোজে বাইরে যেত। একটা এলে আরেকটা যেত। একদিন দুটি চড়াই একসঙ্গে খাবার আনতে যায়। সে সময় কী করে যেন ছানাটি বাসা থেকে পড়ে যায় এবং তার একটি পা মচকে যায়। চাম্‌-বা বাইরের থেকে এসে ঘরে ঢোকার সময় দেখে বাচ্চাটি দরজায় পড়ে আছে।
সে উড়তেও শেখে নি আর পায়ের ব্যথায় দাড়াতেও পারছে না। চাম-বা ছানাটিকে যত্ন করে হাতে নিয়ে দেখে তার একটা পা মচকে গেছে। সে তখন পাতলা একখানা ন্যাকড়া ও সুতো দিয়ে সেখানে পট্টি বেঁধে দেয়। তারপর পরম মমতাভরে তাকে বাসায় তুলে দেয়। 
হয়েছে কি পাখির ছানাটি ছিল ছদ্মবেশী পরী। চাম্‌-বা সেটা জানত না। আস্তে আস্তে চড়াই ছানাটি ভালো হয়ে উঠল। উড়তে শিখল। একদিন সে উড়ে গিয়ে ঠোঁটে করে একটি ভুট্টার দানা নিয়ে এসে চাম্‌-বার ঘরের টেবিলে বসল। চাম্‌-বা ছানাটিকে মনোযোগ দিয়ে দেখছিল। দেখে কি ছানাটি চিক চিক করে কথা বলছে। সে বলল, “এই ভুট্টার দানাটি তোমার দয়ার প্রতিদান হিসেবে তোমাকে দিলাম। এটি তোমার বাগানে রুয়ে দিও, তারপর দেখো কী হয়। এই বলে চড়াই ছানা উড়ে চলে গেল । 

চড়াই ছানার কথা বলা শুনে চাম-বা অবাক হয়ে ভাবতে লাগল, উপহার হিসেবে ভুট্টার একটা দানা এমন কিছু না। কিন্তু কী তার কৃতজ্ঞতাবোধ। আর উপহার তো সব সময় অসামান্য, ছোট হলেও তার মূল্য অনেক। আমি ভুট্টার দানাটি অবশ্যই রুয়ে দেব।’ 

এই ভেবে চাম-বা তার ঘরের ঠিক সামনে উঠোনে দানাটি রুয়ে দিল । তারপর সংসারের টানাটানিতে সে ওই ঘটনার কথা একরকম ভুলেই গেল । 

দিনে দিনে ভুট্টা গাছটি বড় হতে লাগল। মাস দুয়েক পরে ভুট্টা পেকে উঠতেই খোসা খুলে দেখে চাম্‌-বা তো অবাক! আরে, এতো ভুট্টার দানা নয়, প্রত্যেকটি মূল্যবান মণিমুক্তো। সে কী জৌলুস তাদের, ঠিকড়ে পড়ছে তাদের দ্যুতি । দেখে-শুনে সে মহাখুশি । যত্ন করে সে প্রত্যেকটি সেগুলো বেচতে । সবগুলো বেচে সে অঢেল টাকা পেল । রাতারাতি চাম-বা হয়ে গেল বড় ধনী । এখন তার আর কোনো অভাব রইল না। লোকজনও দানধর্ম ও ভালো ব্যবহারের জন্য তাকে আরও সমীহ করতে লাগল । 

পড়শী ৎসে-রিং সব দেখে-শুনে একদিন চাম-বার ঘরে গেল ব্যাপার কি জানার জন্য। একজন গরিব মানুষ রাতারাতি এত ধনী হয় কী করে! যাওয়ার সময় শুভেচ্ছার নিদর্শনস্বরূপ বড় এক মগ খুব ভালো পানীয় নিয়ে গেল। ৎসে-রিং সেই পানীয় চাম-বাকে দিয়ে কথা শুরু করল । দু’জনে পানীয় পান করতে করতে আলাপে মশগুল হয়ে গেল। ৎসে-রিং তখন আসল কথা পাড়ল। চাম-বা তো ভালো মানুষ, তার মনের মধ্যে কোনো রকম কুষ্ঠা বা বদবুদ্ধি নেই। সে চড়াইছানার পুরো কাহিনী এক নিশ্বাসে বলে গেল। ৎসে-রিং এভাবে জানতে পারল চাম-বার ধনী হওয়ার গুপ্ত রহস্য । তারপর সে ঘরে ফিরে এল এবং ভাবতে লাগল কী করে সেও চাম-বার মতো ধনী হতে পারে। 

হয়েছে কী এক জোড়া চড়াই পাখি ৎসে-রিং-এর দরজার ওপরে চালে বাসা করল । বাসায় একদিন ডিম ফুটে বাচ্চা হল । ৎসে-রিং একদিন মই বেয়ে উঠে বাসা থেকে চড়াইছানা তুলে নিল এবং উপর থেকে নিচে ফেলে দিল । এতে চড়াইছানার একটা পা ভেঙে গেল। সে তখন নিচে নেমে ভাঙা  পায়ে পট্টি বেঁধে তাকে আবার বাসায় তুলে দিল । তারপর মনে মনে বলল তার এই উপকারের ফলে চড়াই ছানা যেন তাকে দয়া করে পড়শি থেকেও বড় ধনী করে দেয়।

চড়াইছানা সত্যিই একদিন ভালো হয়ে উঠল এবং উড়তে শিখল । একদিন সে মুখে কয়েকটি দানা নিয়ে টেবিলের ওপর বসে ৎসে-রিংকে বলল, “এই দানাগুলো তোমার উপকারের প্রতিদান হিসেবে দিলাম। এগুলো সাবধানে রুয়ে দিও। তারপর দেখো কী হয়। এই বলে চড়াইছানা উড়ে চলে গেল । 

শুনে ৎসে-রিং মহাখুশি । সে তখন তার ভিটের সবচেয়ে উর্বর জায়গায় বীজগুলো রুয়ে দিল। আর প্রতিদিন দেখতে লাগল চারাগুলো উঠছে কিনা, কত বড় হচ্ছে, কী সোনাদানা তার থেকে হয়। 

কিছুদিন পরে এদিকে হয়েছে কি চাম্‌-বা দেশ ভ্রমণে যাবে বলে ঠিক করল। তার তো এখন অভাব নেই, কাজেই কোথাও বেড়াতে যাওয়াও তার জন্য কিছুই না। যাওয়ার আগে সে এক থলে সোনার টুকরো ৎসে-রিংকে দিয়ে বলল, ‘বন্ধু, আমার এই থলেটা তুমি একটু যত্ন করে রেখো। ওতে সোনা আছে। বিদেশে যাচ্ছি তাই জিনিসগুলো তোমার কাছে গচ্ছিত রেখে গেলাম। এসে তোমার কাছ থেকে ফেরত নেব।” ৎসে-রিং রাজি হল । কিন্তু তার লোভী মন কিছুতেই মানছিল না। সে ওই থলে থেকে এক টুকরো এক টুকরো করে সোনা সরাতে লাগল। এভাবে একদিন থলের সব সোনা শেষ হয়ে গেল। তখন সে থলেটা বালিতে ভরে রেখে দিল আর ভয়ে ভয়ে অপেক্ষা করতে লাগল কখন চাম-বা ফিরে আসে । কিছুদিন পরে চাম্‌-বা ঘরে ফিরল। 

এসেই সে ৎসে-রিংকে সোনার থলে ফেরত দিতে বলল। ৎসে-রিং থলেটা তাকে ফিরিয়ে দিল কিছু না বলে। চাম-বা থলেটা হাতে নিতেই কেমন সন্দেহ হল এবং সেটা খুলতেই দেখল সেখানে সোনার বদলে বালি । চাম-বা চিৎকার করে বলল, কী ফেরত দিলে আমাকে? আমি তোমাকে বিশ্বাস করে এক থলে সোনার টুকরো দিয়ে গেলাম, তার বদলে তুমি ফেরত দিলে বালি?’ অসৎ ৎসে-রিং-এর তো বলার মতো কোনো যুক্তি নেই। তার বদলে সে অবাক হওয়ার ভান করে বলল, বন্ধু, তোমার সোনা বালি হয়ে গেছে ।"

চাম-বা কোনো কথা না বলে বালির থলে নিয়ে ঘরে চলে এল । 

ওদিকে চড়াইছানার দেওয়া দানাগুলো ততদিনে চারা থেকে গাছ হয়ে গেছে। একদিন সকালে ৎসে-রিং রোজকার মতো সেগুলো দেখতে গিয়ে একেবারে থ। বড় বড় পুষ্ট বালিগাছের বদলে দেখে কি এক বিকটদর্শন লোক এক বান্ডিল কাগজপত্র নিয়ে সেখানে দাড়িয়ে আছে। ক্ষেতের মাঝখানে এভাবে তাকে দেখে ৎসে-রিং ভয় পেল। ভয়ে ভয়ে সে বলল, ‘কে তুমি? 

আগন্তুক বলল, তুমি তোমার পূর্বজন্মে আমার কাছ থেকে প্রচুর ধার-দেনা করেছিলে । আমার সমস্ত পাওনার কাগজপত্র নিয়ে এসেছি। চড়াইছানাটি তোমার নিষ্ঠুরতার শিকার হয়ে আমাকে আসতে সাহায্য করেছে। আমি এখন আমার সব পাওনা দাবি করছি।’ 

এই সমস্ত কাগজপত্র দেখিয়ে আগন্তুক লোকটি ৎসে-রিং-এর বসতবাড়ি, গরু-ভেড়া ও জমিজমা সব দখল করে নিল । সব হারিয়ে ৎসে-রিং লোকটির বাড়িতে চাকর হিসাবে খাটতে লাগল। 

এর কিছুদিন পরে চাম-বা একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করল। তার উদ্দেশ্য সেই বিদ্যালয়ে গরিব ছেলেমেয়েরা বিনা বেতনে পড়াশুনো করবে। ৎসে-রিং এই সুযোগ নিতে ছাড়ল না। সে তার ছেলেকে বিদ্যালয়ে ভর্তি করে দিল । ছেলেও পড়তে যেতে লাগল। 

কিছুদিন পরে ৎসে-রিংকে কয়েক দিনের জন্য পাশের শহরে পাঠাল তার মনিব । শহরে যাওয়ার আগে সে তার ছেলেকে পড়শী চাম-বার কাছে রেখে গেল । ৎসে-রিং যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চাম-বা একটি বানরছানা পুষে তাকে কয়েকটি শব্দ শেখাতে লাগল। কথাগুলো হলো, বাবা, আমি এখন এই হয়েছি। 

বাবা, আমি এখন এই হয়েছি।" আস্তে আস্তে বানরছানা এই কটি শব্দ ভালোভাবে শিখল । এদিকে ৎসে-রিং কাজ শেষ করে ফিরে এল। তখন বিদ্যালয়ে পাঠ চলছিল। সে তাড়াতাড়ি তার ছেলেকে দেখতে ছুটল সেখানে। সে দেখল চাম-বা চেয়ারে বসে বাচ্চাদের পড়াশোনা শেখাচ্ছে। ৎসে-রিং এদিক-সেদিক খুঁজে ছেলেকে দেখতে পেল না। তারপর একটা বানরছানাকে দেখতে পেল বাচ্চাদের সঙ্গে বেঞ্চিতে বসে আছে। তার হাতেও একটি বই। 

ৎসে-রিং চাম-বার কাছে গিয়ে বলল, আমার ছেলে কই? সে পড়াশুনো ঠিকমতো করছে তো?
চাম-বা কিছু না বলে বানরছানাকে দেখিয়ে দিল ।

এমন সময় বানরছানা বলে উঠল, “বাবা, আমি এখন এই হয়েছি। বাবা, আমি এখন এই হয়েছি।"
ৎসে-রিং প্রচণ্ড রেগে গিয়ে চিৎকার, চেচামেচি ও হস্থিতম্বি শুরু করল। কিন্তু তাতে কোনো ফল হল না। কিছুক্ষণ পরে সে নিজের দোষ খুঁজে পেল। শেষে ঠিক হল, সে চাম-বার সোনা যা লুকিয়ে রেখেছিল সবটাই ফেরত দেবে, তার বদলে চাম-বাকে ফেরত দিতে হবে ৎসে-রিং-এর ছেলেকে ।

0 coment�rios: