পরদিন সুভগা নামক একটি পুতুল বললো, শুনুন মহারাজ, বিক্রমাদিত্যের রাজত্বকালে পুরন্দরপুরী নামে একটি নগরী ছিল। সেই নগরে সম্পদশালী নামে এক বণিক বাস করতেন। একদিন তিনি তাঁর চার পুত্রকে ডেকে বললেন, আমার মৃত্যুর পর তোমরা চার ভাই একসঙ্গে বসবাস করবে এ কথা ভাবতে পারছি না। তাই আমার সমস্ত সম্পত্তি বড় ছোট অনুসারে ভাগ করে রাখছি। আমার মৃত্যুর পর আমার নির্দেশমত তোমরা তা গ্রহণ করবে।
পুত্ররা এতে রাজী হল।
একদিন বণিকের মৃত্যু হল।
তখন চার ভাই শান্তিতে থাকবার আশায় একত্র মিলিত হয়ে স্থির করল পিতার নির্দেশমত সমস্ত সম্পত্তি যার যা ভাগে পাওনা হয় তাই নিয়ে পৃথক থাকাই ভাল।
এই ঠিক করে খাটের নীচে মাটি খুঁড়ে একটি বড় ভাড়ের মধ্যে চারটি কোটো তারা পেল। তার একটির মধ্যে রয়েছে মাটি, একটিতে কয়লা, অন্য একটিতে হাড় ও শেষটিতে কিছু খড়।
এই সব দেখে পুত্রদের বিস্ময়ের অন্ত রইল না। তখন চার ভাই মিলে রাজসভায় এসে উপস্থিত হল। সভায় অনেক পণ্ডিত ব্যক্তি উপস্থিত থাকলেও এর কিছুই বুঝতে পারল না। তখন তারা অন্য এক নগরে গিয়ে উপস্থিত হল।
এই সময় এক কুমোরের বাড়িতে রাজা শালিবাহন এসেছিলেন। তিনি জানতে পেরে সভায় উপস্থিত হয়ে বললেন, এর মধ্যে বিস্ময়ের কি আছে? বুদ্ধি খাটাবারই বা বিশেষ কি প্রয়োজন আছে। এরা চারজন একই বিত্তবান পিতার পুত্র। সেই ব্যক্তি বেঁচে থাকতেই তাঁর অতুল সম্পদ ভাগ করে রেখে গেছেন। তিনি জ্যেষ্ঠকে মাটি দিয়ে গিয়েছেন, তার অর্থ হল সমস্ত ভূসম্পত্তি জ্যেষ্ঠপুত্র পাবে। দ্বিতীয় পুত্রকে দিয়েছেন খড়, তার মানে যত ধান আছে সব দিয়েছেন তাকে। তৃতীয়জনকে দিয়েছেন হাড়, অর্থাৎ সমস্ত গৃহপালিত পশু তার অধিকারে থাকবে। আর চতুর্থ পুত্রকে দিয়েছেন কয়লা তার মানে এই পুত্র পাবে সমস্ত সোনা।
শালিবাহন ব্যাপারটা বুঝিয়ে দিলে চার ভাই সন্তুষ্ট হয়ে বাড়ি ফিরল।
রাজা বিক্রমাদিত্য এই কথা শুনে তাঁর বিস্ময়ের সীমা রইল না। তিনি তখনই এক দূত পাঠিয়ে শালিবাহনকে আহ্বান করলেন। কিন্তু শালিবাহন রাজার এই আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে বললেন, কে এই রাজা যে ডাকলেই তার কাছে যেতে হবে? যদি তার প্রয়োজন হয় তবে সে নিজেই আমার কাছে আসবে, আমার তাকে কোন প্রয়োজন নেই।
শালিবাহনের এমন স্পর্ধার কথা দূত মুখে শুনে তিনি রেগে গিয়ে বিশাল সেনা নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন যুদ্ধের উদ্দেশ্যে।প্রতিষ্ঠান নগরে পৌঁছে প্রথমে দূত পাঠালেন শালিবাহনের কাছে।
দূত শালিবাহনকে গিয়ে বললো, মহারাজ এসেছেন, আপনি তাঁর সঙ্গে দেখা করুন!
শালিবাহন উত্তরে বললেন, ওহে দূত, আমি রাজার সঙ্গে দেখা করব তবে সেটা যুদ্ধক্ষেত্রে,দেখতে চাই রাজা বিক্রমাদিত্য কেমন বীর!
দূত মুখে শালিবাহনের এই কথা শুনে রাজা যুদ্ধক্ষেত্রে উপস্থিত হলেন।
শালিবাহন কুমোরের ঘরে তৈরী হাতি, ঘোড়া রথ প্রভৃতি চতুরঙ্গ সেনা গঠন করে মন্ত্রে তাদের প্রাণদান করে যুদ্ধক্ষেত্রে উপস্থিত হলেন।
দুই পক্ষের সৈন্যের মধ্যে ভীষণ যুদ্ধ হল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত রাজা বিক্রমাদিত্য শালিবাহনের সমস্ত সৈন্যকে পরাজিত করে ফেলল। অবশেষে শালিবাহন উপায় না দেখে শেষ নাগকে স্মরণ করলেন। শেষ নাগ পাঠালেন অসংখ্য সাপ। তারা যুদ্ধক্ষেত্রে এসে বিক্রমাদিত্যর সৈন্যদের কামড়াতে লাগল।
এই দৃশ্য দেখে রাজা একা নগরে ফিরে এসে সৈন্যদের বাঁচাতে জলে অর্ধেক দেহ নিমগ্ন করে বাসুকি মন্ত্র জপ করলেন।
বাসুকি সন্তুষ্ট হয়ে বললেন, বর প্রার্থনা কর। বিক্রমাদিত্য বললেন, সপরাজ, যদি আমার প্রতি প্রসন্ন হয়ে থাক তবে শালিবাহনের সঙ্গে যুদ্ধে তোমার দ্বারা প্রেরিত যে সব সাপ আমার সৈন্যদের কামড়ে হত্যা করেছে তাদের বাঁচিয়ে তোলার জন্য অমৃতকুম্ভ প্রদান কর।
সেই মত বাসুকি অমৃতকুন্তু প্রদান করলেন।
মহারাজ বিক্রমাদিত্য সেই অমৃতকুম্ভ নিয়ে দিয়ে সৈন্যদের শরীরে ছিটিযে দিতে সব সৈন্য জীবিত হয়ে উঠল। তারপর তিনি শালিবানকে পরাজিত করলেন। শালিবাহন যুদ্ধে পরাজিত হয়ে রাজার কাছে ক্ষমা চাইলেন। রাজা শালিবানকে ক্ষমা করে দিলেন।
পুতুল বলল, পারবেন আপনি বিক্রমাদিত্যের মতো ক্ষমাশীল হলে।
ভোজরাজা চুপ করে রইলেন।
0 coment�rios: