পরদিন রতি লীলা নামে আর একটি পুতুল ভোজরাজকে বললো, রাজন, আমি একটি গল্প বলছি, শুনুন।
রাজা বিক্রমাদিত্যের বুদ্ধিসিন্ধু নামে একজন মন্ত্রী ছিলেন। সেই মন্ত্রীর একটি পুত্র ছিল এবং তার নাম ছিল অনর্গল। সে ভাল ভাল খাবার খেত আর খেলাধুলা করে বেড়াত, লেখাপড়া একেবারেই করত না।
একদিন তার পিতা তাকে ডেকে বললেন, তুমি আমার ছেলে হয়েও বিদ্যাভ্যাস কর না, মূর্খ হয়ে রইলে। যে মূর্খ তার হৃদয় থাকে না। শাস্ত্রেও আছে । —যে পুত্র বিদ্বান এবং ধর্মপরায়ণ নয় সে পুত্রের কি প্রয়োজন? যে গাভী বাছুর দেয় না এবং দুধ দেয় না সে গাভীর কি প্রয়োজন? মৃত এবং মূর্খ এই দুইয়ের মধ্যে মৃত তবু ভাল কারণ তা থেকে অল্প দুঃখ পাওয়া যায় কিন্তু মূর্খ যতদিন বেঁচে থাকে ততদিনই দুঃখ দেয়।
পিতার মুখে এই কথা শুনে অনর্গলের অনুতাপ হল। সে আর দেশে না থেকে দেশান্তরে গমন করল।
ঘুরতে ঘুরতে এক নগরে উপস্থিত হয়ে জনৈক উপাধ্যায়ের শিষ্যত্ব গ্রহণ করে সকল প্রকার নীতিশাস্ত্র অধ্যয়ন করে দেশের পথ ধরল। পথের মধ্যে অরণ্যে সে একটি দেবালয় দেখতে পেল। সে দেবালয়ের কাছেই একটি সুন্দর সরোবর, সেই সরোবরের একদিকের জল খুব গরম। ক্রমে সূর্য গেল অস্তাচলে। রাত্রিকালে সেই গরম জলের মধ্য থেকে আটজন সুন্দরী মেয়ে উঠে এলো। তারা দেবালয়ে গিয়ে পূজা ও নাচগান করে দেবতাকে সন্তুষ্ট করলো। দেবতা সন্তুষ্ট হয়ে তাদের প্রসাদ দিলেন।
সকাল হলে তারা অনর্গলকে দেখতে পেল। তাদের মধ্যে একজন বললো, আমাদের সঙ্গে নগরে এস।
অনর্গলের মনের ইচ্ছা তাদের সঙ্গে যায় কিন্তু সেই গরম জলে তাদের প্রবেশ করতে দেখে ভয়ে সে যেতে পারল না।
অনর্গল যথাসময়ে নিজ নগরে ফিরে এল।
রাজা কুশল জিজ্ঞাসা করে বললেন, ওহে অনর্গল, দেশান্তরে গিয়ে আশ্চর্য কিছু দেখেছ কি?
অনর্গল গরম জলের ঘটনাটা বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করল।
রাজা কৌতুহলী হয়ে অনর্গলকে সঙ্গে নিয়ে সেখানে উপস্থিত হলেন। সূর্য গেল অস্তাচলে।
মধ্যরাত্রে সেই মেয়েরা এসে পূজা ও নাচগান করে দেবতাকে তুষ্ট করে সকালে যখন ফিরে যাচ্ছিল তখন তাদের মধ্যে একজন রাজাকে দেখে বললো, আমাদের সঙ্গে নগরে এস।
সাহসী এবং বীর রাজা এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান না করে তাদের সঙ্গে জলে ডুব দিলেন। জলের তলায় সপ্ত পাতালে তাদের নগর। তার রাজাকে সম্বর্ধনা জানিয়ে বললো, আপনার মত বীর ও শৌর্যসম্পন্ন কেউ নেই, আপনি এই রাজ্যের রাজা হোন, আমরা সকলে আপনার সেবা করব।
আমি নিছক কৌতুহলের বশবর্তী হয়েই এখানে এসেছি।
তারা বললো, আমরা সকলেই আপনার উপর প্রসন্ন হয়েছি। আপনি বর প্রার্থনা করুন।
রাজা বললেন, আপনারা কারা? পরিচয় দিন। তারা বললো, আমরা অষ্ট্র মহাসিদ্ধ।
রাজা বললেন, তাহলে আমাকে অষ্ট মহাসিদ্ধ প্রদান করুন |
তারা রাজাকে অষ্টগুণযুক্ত আটটি রত্ন দান করলেন।
রাজা সেই রত্নগুলি নিয়ে নিজ নগরের পথে রওনা হলেন। পথে এক ব্রাহ্মণ এসে তাঁকে আশীর্বাদ করে বললেন, মহারাজ, আমার অনেকগুলো পোষ্য – আমি এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ। স্ত্রীর ভৎসনা সহ্য করতে না পেরে বিদেশে এসেছি। নীতিশাস্ত্রে বলেছে, নির্ধন পুরুষকে বাড়ির সকলেই পরিত্যাগ করে।
রাজা ব্রাহ্মণের কথা শুনে মনে বড় ব্যথা পেলেন এবং তাঁকে কিছুক্ষণ আগে পাওয়া বিশেষ গুণসম্পন্ন আটটি রত্ন দান করে নিজ নগরে ফিরে এলেন ।
পুতুল বললো, হে রাজন, আপনার যদি এরূপ ঔদার্য ও দানশীলতা থাকে তবে সিংহাসনে বসুন। সেদিনও ভোজরাজের সিংহাসনে বসা হল না।
0 coment�rios: