এক বৃদ্ধা নারীর চক্ষু নিতান্ত নিস্তেজ হইয়া গিয়াছিল। এ জন্য তিনি কিছুই দেখিতে পাইতেন না। নিকটে এক প্রসিদ্ধ চিকিৎসক ছিলেন। বৃদ্ধা তাঁহার নিকটে গিয়া বলিলেন, আমার চক্ষুর দোষ জন্মিয়াছে। আমি কিছুই দেখিতে পাই না। আপনি আমার চক্ষু ভাল করিয়া দিন। আমি আপনাকে বিলক্ষণ পুরস্কার দিব। কিন্তু ভাল করিতে না পারিলে, আপনি কিছুই পাইবেন না।
চিকিৎসক বৃদ্ধার প্রস্তাবে সম্মত হইয়া, পরদিন প্রাতঃকালে তাঁহার আলয়ে আসিয়া উপস্থিত হইলেন। বৃদ্ধার গৃহে নানাবিধ দ্রব্যে পরিপূর্ণ দেখিয়া চিকিৎসকের লোভ জন্মিল। তিনি স্থির করিলেন, প্রতিদিন ইহাকে দেখিতে আসিব, এবং এক-একটি দ্রব্য লইয়া যাইব। এজন্য, যাহাতে শীঘ্ৰ তাহার পীড়ার শান্তি হইতে না পারে, সেরূপ ঔষধ দিয়া, কিছুদিন গোলমাল করিয়া কটাইলেন। পরে একে একে সমস্ত দ্রব্যাদি লইয়া গিয়া তিনি রীতিমত ঔষধ দিতে আরম্ভ করিলেন। বৃদ্ধার চক্ষু অল্পদিনেই পূর্ববং নির্দোষ হইল। তিনি দেখিলেন তাঁহার গৃহে যে নানাবিধ দ্রব্য ছিল, তাহার একটিও নাই। অনুসন্ধান দ্বারা জানিতে পারিলেন, চিকিৎসক একে একে সমুদয় লইয়া গিয়াছেন।
পীড়ার শান্তি হইলে আমায় পুরস্কার দিবে বলিয়াছিলে। এক্ষণে প্রতিশ্রুত পুরস্কার দিয়া সন্তুষ্ট করিয়া আমায় বিদায় কর। বৃদ্ধ চিকিৎসকের আচরণে অতিশয় অসন্তুষ্ট হইয়াছিলেন। এজন্য কোন উত্তর দিলেন না। চিকিৎসক বারংবার চাহিয়াও পুরস্কার না পাইয়া বৃদ্ধার নামে বিচারালয়ে অভিযোগ করিলেন।
বৃদ্ধা বিচারকদিগের সম্মুখে উপস্থিত হইলেন এবং চিকিৎসককে স্পষ্ট বাক্যে চোর না বলিয়া কৌশল করিয়া কহিলেন, কবিরাজ মহাশয় যাহা বলিতেছেন, তাহা যথার্থ বটে। আমি অঙ্গীকার করিয়াছিলাম, যদি আমার চক্ষু পূর্ববৎ হয়, কোনও দোষ না থাকে, তবে উহাকে পুরস্কার দিব। উনি বলিতেছেন, আমার চক্ষু নির্দোষ হইয়াছে। কিন্তু আমি যেরূপ দেখিতেছি, তাহাতে আমার চক্ষু নির্দোষ হয় নাই। কারণ যখন আমার চক্ষুর দোষ জন্মে নাই, আমার গৃহে যে নানাবিধ দ্রব্য ছিল সে সমস্ত দেখিতে পাইতাম। পরে চক্ষুর দোষ জন্মিলে, সে সকল দেখিতে পাই নাই। এখনও সে সকল দেখিতে পাইতেছি না। ইহাতে তাঁহার চিকিৎসায় আমার চক্ষু নিদোৰ্থ হইয়াছে, আমার সেরূপ বোধ হইতেছে না। এক্ষণে আপনাদের বিচারে যাহা কৰ্ত্তব্য হয় করুন।
বিচারকেরা বৃদ্ধার উক্ত বাক্যের মর্ম বুঝিতে পারিয়া, তাঁহাকে বিদায় দিলেন, এবং যথাযোথ তিরস্কার করিয়া চিকিৎসককে বিচারালয় হইতে চলিয়া যাইতে বলিলেন।
Dialogue formet e ei story ta dorkar
উত্তরমুছুন