পরদিন রাজা সিংহাসনে বসতে গেলে মদনবতী নামে আর একটি পুতুল বললো, আগে আমার একটি গল্প শুনুন । তারপর সিংহাসনে বসবেন।
রাজা বিক্রমাদিত্য দেশভ্রমণ করতে খুব ভালবাসতেন। একদিন তিনি পৃথিবী পর্যটনে বেরিয়ে নানা দেবস্থান দর্শন করে এক প্রাসাদে এসে উপস্থিত হলেন। সেই প্রাসাদের মধ্যে রয়েছে বহু শিবালয় ও বিষ্ণুমন্দির। তার চারদিকে সোনার দেওয়াল।
সেই নগরের বাইরে একটি সরোবরের পাশেই রয়েছে বিষ্ণুমন্দির। রাজা সেই সরোবরে স্নান করে বিষ্ণুকে স্মরণ করলেন-হে নাথ, আমি আপনার মাহাত্ম্যের কিছুই জানি না। আমি আর কাউকে জানি না, অন্যের আশ্রয় চাই না, কেবল আমাকে আপনার শ্রীচরণের দাস করে নিন।
স্তব হয়ে গেলে রাজা বাইরে এসে দেখেন এক ব্রাহ্মণ এসেছেন। তিনি ব্রাহ্মণকে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি কোথা থেকে এসেছেন?
ব্ৰাহ্মণ বললেন, আমি একজন তীর্থযাত্রী। আপনি কোথা থেকে এসেছেন?
রাজা বললেন, আমিও আপনার মত একজন তীর্থযাত্রী।
ব্রাহ্মণ ভালভাবে দেখে বললেন, আপনাকে দেখে কিন্তু সাধারণ একজন তীর্থযাত্রী বলে মনে হচ্ছে না। আপনার দেহে রাজলক্ষণ রয়েছে। রাজসিংহাসনে না বসে তীর্থপর্যটন করছেন কেন?
তাঁর কথা রাজা স্বীকার করলেন। তারপর ব্ৰাহ্মণকে বললেন, আপনাকে এত পরিশ্রান্ত দেখাচ্ছে কেন?
ব্রাহ্মণ বললেন, শুনুন তবে, কাছেই নীল নামে একটা পর্বত আছে, সেখানে কামাক্ষী দেবীর অবস্থান। সেখান থেকে পাতালে প্রবেশের একটি সুড়ঙ্গপথ আছে। কিন্তু সেই সুড়ঙ্গের মুখ বন্ধ। একমাত্র কামাক্ষামন্ত্র জপ করলেই সেই দ্বার খুলে যায়। তার মধ্যে রয়েছে রসকুণ্ড। সেই রসের স্পর্শে অষ্ট ধাতু সোনায় পরিণত হয়। আমি বারো বছর কামাক্ষীমন্ত্র জপ করেছি, তবুও সেই দ্বার খোলে নি।
এইটুকু শুনেই রাজা নীল পাহাড়ে গিয়ে নিজ খড়গ তাঁর নিজের গলা লক্ষ্য করে তুললেন, অমনি দেবতা সেখানে আবির্ভূত হয়ে বললেন, আমি প্রসন্ন হয়েছি তোমার উপর, বর প্রার্থনা কর।
রাজা বললেন, হে দেবী, আমার প্রতি যদি প্রসন্ন হয়ে থাক তবে এই ব্ৰাহ্মণকে রস প্রদান কর।
দেবী “তথাস্তু’ বলে ব্ৰাহ্মণকে রস প্রদান করলেন। সেই ব্রাহ্মণ রাজার স্তুতিবাদ করে নিজের দেশে ফিরে গেলেন আর রাজাও পর্যটন শেষ করে তাঁর নগরে ফিরলেন।
পুতুল বললো, মহারাজ, আপনি কি পরের জন্য এতখানি ত্যাগ করতে পারবেন? ভোজরাজ চুপ করে রইলেন।
0 coment�rios: