Home Top Ad

Responsive Ads Here

Search This Blog

এক ছিল বুড়ি। তার বুড়ো ছিল না। থাকার মধ্যে ছিল এক ছেলে । ছেলেটি দিন দিন বড় হচ্ছে। যতই বাড়ছে মায়ের স্নেহও বাড়ছে হু হু করে। এক মুহুৰ্তও স...

সাদাসিধে বালক ও হারানো নীলকান্তমণি -- তিব্বরের লোককাহিনী

এক ছিল বুড়ি। তার বুড়ো ছিল না। থাকার মধ্যে ছিল এক ছেলে । ছেলেটি দিন দিন বড় হচ্ছে। যতই বাড়ছে মায়ের স্নেহও বাড়ছে হু হু করে। এক মুহুৰ্তও সে ছেলেকে না দেখে থাকতে পারে না। তার কেবল ভয় ছেলে যদি ঘরের বাইরে যায় তাহলে না-জানি কী বিপদে পড়ে। আর এতে যদি বেঘোরে মারা যায় তাহলে বুড়ি একেবারে একা হয়ে যাবে। কাজেই ছেলে যত বড় হচ্ছে মায়ের ভয় ততই শুধু বাড়ছে। কিন্তু এভাবে ছেলেকে কত দিনই-বা সে আগলে রাখবে। একদিন তো ছেলেকে ঘর ছেড়ে বের হতেই হবে, তার ভাগ্য খুঁজে নিতে হবে পৃথিবী ঢুঁড়ে।
এভাবে একদিন ছেলেটির বয়স হল পনেরো বছর। তখন বুড়ি বছরের ষষ্ঠ মাসের পনেরো তারিখের অপেক্ষায় রইল। শেষে দিনটি এল। তখন বুড়ি ছেলেকে কাছে ডাকল। ডেকে তাকে এক প্রস্থ নতুন কাপড় দিল। তারপর একটি ঘোড়া, একটি কুকুর এবং একটি তলোয়ার দিয়ে বলল, আদরের বাছা, এখন তুই একা এসব নিয়ে বেরিয়ে পড়, তোর ভাগ্য খুঁজে নে।’ ছেলে এসব জিনিস পেয়ে মহাখুশি এবং দুঃসাহসিক অভিযানে বেরিয়ে পড়ার কথা ভাবল । 

যেমন ভাবা তেমন কাজ । মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে পড়ল ছেলে। চড়ে বসল ঘোড়ায়, পায়ে পায়ে চলছে কুকুর। বাড়ি থেকে বেরিয়ে ঢালু পথে ঘোড়া ছুটিয়ে দিল। সারা দিন সে ঘোড়ায় চড়ে ঘুরল কিন্তু অপ্রত্যাশিত কিছু ঘটল না, উত্তেজনাপূর্ণ কোনো অভিজ্ঞতাও হল না। 
বিকেলের দিকে সে পাহাড়ের এক উঁচু মালভূমিতে এসে পৌছল। চারদিকে তিব্বতের পাহাড় আর পাহাড়, সবচেয়ে উঁচু পাহাড়ের মাথায় সাদা বরফের স্তুপ। সেই মালভূমি পেরিয়ে যাওয়ার সময় হঠাৎ একটা খেঁকশিয়াল তার সামনে দিয়ে লাফিয়ে ছুটে গেল। দেখেই কুকুরটা সঙ্গে সঙ্গে তাড়া করল। 

ছেলেটি ভাবল, শেষ পর্যন্ত কিছু-একটা ঘটতে যাচ্ছে তাহলে । এই ভেবে সে ঘোড়াকে দ্রুতবেগে ছুটিয়ে দিল কুকুরের পিছু পিছু। কিছু দূর তাড়া করল ঠিকই, কিন্তু একসময় শেয়াল একটা গর্তে ঢুকে পড়ল। ছেলেটি ঘেমে-নেয়ে ঘোড়া থেকে নামল। গর্তের মুখ খুঁজে বের করল এবং বুদ্ধি করতে লাগল কী করে শেয়ালটাকে ধরা যায়। ছেলে তখন গায়ের কোট খুলে ঘোড়ার পিঠের গদির বন্দুক ও তলোয়ারের সঙ্গে বেঁধে রাখল। তারপর ঘোড়াটাকে শেয়ালের গর্তের মুখের অদূরে দাঁড় করিয়ে রাখল। 

এদিকে কুকুরটাকে ডেকে সতর্ক করে রাখল যাতে শেয়াল গর্ত থেকে বের হলেই ধরতে পারে। তারপর সে মাথার টুপিটা দিয়ে গর্তের মুখ চাপা দিয়ে রাখল। আর নিজে হাতে একটা বড় পাথর নিয়ে রাখল যাতে শেয়ালটা বের হলেই তার মাথায় মারতে পারে। এভাবে অপেক্ষা করে রইল । একটু পরে হঠাৎ শেয়ালটা গর্ত থেকে বেরিয়ে সোজা পাহাড়ের দিকে ছুটল। 

টুপিটা তখন শেয়ালের মাথায় । শেয়ালটা বেরিয়ে এমন আচমকা দৌড় দিল যে ছেলেটি হাতের পাথরটি ছুড়ে মারার সময় পেল না, দৌড়েও ধরতে পারল না। শেয়ালকে ছুটতে দেখে কুকুরটা ঘেউ ঘেউ করতে করতে দৌড় দিল। হঠাৎ কুকুরের চিৎকার শুনে ঘোড়াটাও ওর পেছন পেছন ছুটল। মুহুর্তের মধ্যে শেয়াল, কুকুর ও ঘোড়া তার চোখের আড়ালে চলে গেল । এদিকে অন্ধকারও নেমে এসেছে। সবকিছু সেই আঁধারে হারিয়ে গেল । 

বেচারা ছেলেটি তখন তার সর্বস্ব হারিয়ে একা হয়ে পড়ল। ঘোড়া, কুকুর, বন্দুক, তলোয়ার, টুপি এবং এমনকি কোটটা পর্যন্ত রইল না। ওটা সে একটু আগেই ঘোড়ার পিঠের গদির সঙ্গে বেঁধে নিয়েছিল। এদিক-ওদিক কিছুক্ষণ খুঁজে বেচারী হয়রান হয়ে একসময় খোজা বন্ধ করে দিল। এখন তার দরকার রাতে থাকার মতো অন্তত একটা বড় পপলার গাছ । ভোরে ঘুম থেকে জেগে সে গাছের ডালের দিকে তাকিয়ে দেখল। দেখল পাহাড়ী বড় দাঁড়কাকের একটি বাসা। মা দাঁড়কাকি তখন তার ডিমে তা দিচ্ছিল, পাশে বাবা দাঁড়কাক একটা ডালে বসে আছে। দিনের আলো আরও একটু ফুটতেই ওরা কথা শুরু করল। 

মা দাঁড়কাকি বলল, সুপ্রভাত আমার ডিমদের বাবা দাঁড়কাক । গাছতলায় কে শুয়ে আছে গো? বাবা দাঁড়কাক বলল, ‘ও এক সাদাসিধে বোকা ছেলে। দুনিয়া সম্পর্কে তার কোনো ধারণাই নেই। গতকাল সন্ধেয় সে একটা শেয়াল ধরতে গিয়ে নিজের ঘোড়া, বন্দুক, তলোয়ার, কুকুর সবকিছু হারিয়ে বসে আছে।

এমনকি গায়ের কোটটিও গেছে। তার কোনো ধারণাই নেই যে এসব সে কোথায় পাবে বা কীভাবে উদ্ধার করবে।’ 

মা দাঁড়কাকি বলল, ‘হ্যা, তাইতো দেখছি। তবে এত কিছুর পরেও তার জন্য সৌভাগ্য অপেক্ষা করছে গায়ের ওই পুবমুখী পথটিতে। পথটি ধরে সে যদি গ্রামে গিয়ে পৌছায় তাহলে সেখানে তার ভাগ্য খুলে যাবে।' 

শুনেই ছেলেটি পুবমুখী গায়ের পথ ধরে চলতে শুরু করল। কিছুদূর যেতে সে বুড়ো এক ভিখিরির দেখা পেল। এই ভিখিরিকে সে তার দুর্ভাগ্যের কাহিনী খুলে বলল এবং তার কাছে হারানো ঘোড়ার হদিস জানতে চাইল । বুড়ো ভিখিরি তার গায়ে কোট বা মাথায় টুপি না দেখে তাকে ভিখিরি বালক ছাড়া কিছুই ভাবতে পারল না। ভিখিরি তার কথা এক কণাও বিশ্বাস করল না। তাই হাসতে হাসতে তাকে উপহাস করে বসল। ছেলেটি শেষ পর্যন্ত রেগে গেল । ভিখিরিও একরকম অবজ্ঞা করে ছেলেটিকে নিজের পথে চলে যেতে দিল, কিন্তু একটুও সান্তুনা বা সাহায্য করল না। 

ঘুরতে ঘুরতে সে একটি বড় বাড়ির সামনে এসে পড়ল। সেই বাড়িতে চলছিল বিয়ের উৎসব। সে ভীরু পায়ে দরজা দিয়ে অতিথিদের দেখতে চেষ্টা করল। তখন বাড়ির এক চাকর সেদিক দিয়ে যাচ্ছিল । ছেলেটি তাকে তার দুঃখের কথা জানাল। ঠিক সে সময় ছেলেটি বরের চোখে পড়ে গেল। 

বর কর্কশ গলায় বলে উঠল, ‘কে তুমি, ওখানে? আমার বিয়ের উৎসবে এসে কান্নাকাটি জুড়ে দিয়েছ? আমরা তোমার মতো মলিন কালিঝুলি মাখা মুখ দেখে আজকের দিনে অমঙ্গল ডেকে আনতে পারি না। দূর হয়ে যাও, হতভাগা কোথাকার।’ 

কাজেই ছেলেটি সেখান থেকে বেরিয়ে এল। তারপর ঘুরতে ঘুরতে রাতের আগে পুব দিকে আর একটি বড় বাড়ির সামনে গিয়ে হাজির হল। বিয়ে বাড়িতে সে যে ব্যবহার পেয়েছে তাতে সে আর বাড়িটিতে ঢোকার সাহস পেল না। এমনকি বাড়ির দরজায় গিয়ে ভিক্ষে চাইবে সে সাহসও তার হল না। কাজেই সে বাড়ির পেছন দিকে বাগানের জন্য রাখা সারের স্তুপে একটা গর্ত করে মাথাটা বের করে সেখানে ঢুকে পড়ল। এতে অন্তত শরীরটা গরম থাকবে । এভাবে সে রাতটা কাটিয়ে দিল । 

পরদিন সকালে অনেকগুলো শুয়োর সেই সারের জায়গায় খাবার খুঁজতে এল। তারা এসে তার মাথা শুকে দেখল, ঘোৎ ঘোৎ করে ওল্টাতে-পাল্টাতে চেষ্টা করল সেটা কোনো ভালো খাবার কিনা পরখ করে। সে বেশিক্ষণ এসব সহ্য করতে পারল না । তখন সে সাহস সঞ্চয় করে সেখান থেকে বের হল ।

তারপর ঘরের পেছনের দরজায় গিয়ে দাড়াল। একজন চাকরকে দেখতে পেয়ে তার কাছ থেকে একখানা ছোরা ধার চাইল । তাকে বলল যে তার সকালের খাবারের মাংসের টুকরো কাটার জন্য একটা ছোরা দরকার। চাকরটা তাকে একটা ছোরা দিল । ছোরাটা পেয়েই সে একটা শুয়োরকে একদিকে ডেকে নিয়ে তার মাথাটা কেটে নিল। তারপর কিছু মাংসের টুকরো কেটে নিয়ে সে সারের স্তুপের সেই জায়গায় চলে গেল আর সেখানে লুকিয়ে রইল। 

শুয়োরের মাথাটা নিয়ে সে অপেক্ষা করে রইল তার ভাগ্যে কী আছে দেখার জন্য । দুপুরের দিকে বাড়ির মহিলা মালিক ঘর থেকে বেরিয়ে আঙিনায় এল। সে চারদিক ঘুরে-ফিরে ভিটের বাগান তদারক করে দেখতে শুরু করল। এসময় তার মাথার পোশাক থেকে একটি বড় নীলকান্তমণি সেখানে পড়ে গেল। নীলকান্তমণিটা আঙিনার মাঝামাঝি জায়গায় পড়ে রইল। ছেলেটি ভাবল যে এটা তার জন্য একটা সুবর্ণ সুযোগ । সে নীলকান্তমণিটা নেবে ঠিক করল। কিন্তু তার জায়গা থেকে বের হতে সাহস হল না, পাছে জানাজানি হয়ে যায় এবং ধরা পড়ে যায়। 

সে তখন সারের স্তুপ থেকে একটা বড় ছেড়া ন্যাকড়া নিয়ে নীলকান্তমণিটার উপর ছুড়ে মারল। ফলে মণিটা তাতে চাপা পড়ে আড়াল হয়ে গেল । কিছুক্ষণ পরে বাড়ির এক দাসি সেখানে এলে পথের উপর এক টুকরো ফেলে দিল । সেই সঙ্গে নীলকান্তমণিটিও সেখানে চলে গেল । 

ঠিক সে-সময় ঘরের মধ্যে মহা শোরগোল শুরু হয়ে গেল। বাড়ির মহিলা তখন জানতে পারল যে তার দামি নীলকান্তমণিটি হারিয়ে গেছে। বাড়ির সকলের ডাক পড়ল। প্রত্যেকেই এক সঙ্গে শুরু করল খোঁজাখুঁজি । অল্পক্ষণের মধ্যে সারা ঘরে বিশৃঙ্খলা দেখা দিল। সবাই এখানে-সেখানে খুঁজছে তো খুঁজছে। ঘরের আনাচ-কানাচ আর বাকি থাকল না। কিন্তু কেউ সেই দেয়ালের ফাটলের মধ্যে পড়ে থাকা ন্যাকড়া উল্টিয়ে দেখল না। কে আর ভেবেছে যে বাগানের দেয়ালের ফাটলে নীলকান্তমণিটা ন্যাকড়ার ভেতরে করে চলে যেতে পারে! সমস্ত চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে গেলে বাড়ির মালিক মহিলা এলাকার এবং চারদিকের দৈবজ্ঞ, জাদুকর ও লামাদের ডেকে পাঠালেন। তারা এল । তুকতাক, ঝাড়ফুক, জাদুটোনা ইত্যাদি সব রকম চেষ্টা শুরু করে দিল। কিন্তু সব চেষ্টা বিফলে গেল । নীলকান্তমণির হদিস তারা বের করতে পারল না।

বিকেলের দিকে তারা জাদুটোনার জিনিসপত্র, হাড্ডিগুড্ডি ও তেল-কড়ির সরঞ্জাম নিয়ে চলে গেল । সবাই চলে গেলে ছেলেটি সারের গোপন আস্তানা থেকে বেরিয়ে এল এবং সাহসের সঙ্গে মহিলার বাড়িতে ঢুকে পড়ল। সে দাবি করে বসল যে, সে একজন বিখ্যাত জাদুকর এবং একমাত্র সে-ই নীলকান্তমণিটা খুঁজে বের করতে পারে। 

সে বলল পরদিন সকালে সমস্ত লামা, জাদুকর ও দেবজ্ঞদের ডেকে পাঠাতে । সেই সঙ্গে পার্শ্ববতী বাড়ির লোকজনদেরও ডাকতে। বাড়ির মালিক মহিলা তো গোবর ও কালিঝুলি মাখা এই মলিন ছেলেটিকে পাত্তাই দিতে চাইল না। বড় বড় দৈবজ্ঞরা যা পারল না তা কিনা এই পুঁচকে ছেলেটি করতে পারবে? কিন্তু সবাই বলল যে ছেলেটিকে একবার সুযোগ দেওয়া উচিত। তখন মহিলা তার পরামর্শ মতো কাজ করতে রাজি হল । 

তারপর বাড়ির চাকরকে আদেশ দিল ছেলেটিকে ভালো করে রাতের খাবার দিতে । ছেলেটি তখন খিদেয় অস্থির । আগে তার খাওয়া দরকার। পরদিন সকাল দশটায় বাড়ির আঙিনায় অনেক মানুষ জড়ো হল। আগের দিন আসা দৈবজ্ঞ ও লামারা এসে হাজির ৷ প্রতিবেশীরাও ডাক পেয়েছে। তাদের মধ্যে সেই বিয়ে বাড়ি থেকে যে তাকে তাড়িয়ে দিয়েছিল সেও এল । সেই ভিখিরিও এসেছে। চাকর-বাকরেরাও এসে হাজির । ছেলেটি তার বগলের নিচে শুয়োরের যে মাথাটি রেখেছিল সেটি সবার সামনে রাখল । 

তারপর সে সকলকে লক্ষ করে বলল, ‘এখন সামান্য সময় পরে আশা করি হারানো নীলকান্তমণিটি পাওয়া যাবে। কারণ আমি জাদুশক্তির অধিকারী । এই কাজে আমি এই শুয়োরের মাথাটির সাহায্য নেব যা এতোক্ষণ আমার বগলের নিচে ছিল। এর মধ্যে আছে জাদুমন্ত্র। এর দ্বারা আমি চোরকে ধরতে পারব অথবা অসাধু লোককে এক্ষুণি বের করে নিতে পারব। আর হারানো জিনিসটা তো পাবই।’ এই বলে সে শুয়োরের মাথাটা দু হাতের মধ্যে নিয়ে মুখটি জনতার দিক করে ধরল। তারপর সে ঘুরে ঘুরে প্রত্যেকের কাছে গেল, প্রত্যেকের সামনে অল্পক্ষণের জন্য থামল। তারপর ওই সদ্য বিয়ে করা যুবকটির সামনে গিয়ে থামল। কারণ যুবকটি তার বিয়েতে এই জাদুকরের প্রতি খুব খারাপ ব্যবহার করেছিল। এমন সময় শুয়োরের মাথাটি প্রবলভাবে বাকুনি দিয়ে উঠল এবং সদ্য বিবাহিত যুবককে জোরে একটা গুতো দিল । ‘এই যে, এই লোকটি স্পষ্টতই অসাধু লোক। একে মেরে এখান থেকে তাড়িয়ে না দিলে আমাদের কাজ কিছুতেই ভালোভাবে শেষ হবে না।’—

বলে ছেলেটি জনতার দিকে তাকিয়ে রইল । লোকজন মিলে তখন তাকে আচ্ছা করে ধোলাই দিয়ে সেখান থেকে বের করে দিল । তারপর রইল সেই ভিখিরিটি যে তাকে সেদিন অপমান করেছিল রাস্তার ধারে এবং সে তার বিপদের কাহিনী বিশ্বাস করে নি। ওর কাছে আসতেই শুয়োরের মাথাটা আবার প্রবল ঝাকুনি দিয়ে উঠল এবং মুখ দিয়ে জোরে একটা গুতো মেরে বসল। কাজেই তাকেও আচ্ছা মতো ধোলাই দিয়ে সেখান থেকে বের করে দেওয়া হল। 

এই দুটি লোককে শাস্তি দিয়ে ছেলেটি আঙিনায় হাটতে শুরু করল । এ সময় সে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে শুয়োরের নাক-উচু মুখটি প্রত্যেকটা আনাচ-কানাচের দিকে নিয়ে গিয়ে হারানো জিনিসটি খুঁজতে লাগল। একসময় সে দেয়ালের সেই ফাটলের কাছে গিয়ে হাজির হল যেখানে বাড়ির দাসীটি ছেড়া ন্যাকড়া ছুড়ে মেরেছিল। সেখানে গিয়ে শুয়োরের মাথাটা প্রবলভাবে বাকুনি দিয়ে নড়ে উঠল। নিশ্চয়ই হারানো নীলকান্তমণিটি এখানে কোথাও রয়েছে।’ 

একথা শুনে সবাই সেখানে খুঁজতে শুরু করল। আর অল্পক্ষণের মধ্যে ন্যাকড়ার ভেতর থেকে নীলকান্তমণিটি বেরিয়ে এল সেই দেয়ালের ফাটলের জায়গা থেকে | বাড়ির কর্তী উল্লসিত হয়ে উঠল। সে সঙ্গে সঙ্গে ছেলেটিকে ঘরে নিয়ে গিয়ে প্রথমে উপহার দিল এক প্রস্থ নতুন জামা-কাপড়। তারপর দিল অনেক টাকা। তারপর যখন সে ঘরে ফিরে চলল তখন তার অবস্থা পথ দিয়ে প্রথম আসার সময়ের চেয়ে এবার হল অনেক অনেক ভালো। এখন ছেলেটি আর মলিন কালিবুলি বা গোবর-মাখা নেই।

0 coment�rios: