দারোগা বটে দুর্গাচরণ চক্রবর্তী। কী দাপট ছিল তাঁর। বাঘে-গরুতে নাকি জল খেত সেই দুগ্গা দারোগার এক হুমকিতে।
তা এমন যে ডাকসাইটে জবরদস্ত দারোগা, রঘু ডাকাত কিনা তার চােখেই বারবার ধুলো দিয়ে সটকে পড়ছে। কী যে ধড়িবাজ ওই রঘুটা। আজ এখানে হা-রে-রে-রে তো কাল ওখানে হা-রে-রে-রে। দুর্গাচরণকে জ্বলিয়ে খাচ্ছে শয়তানটা।
তবে রঘু কি যে সে ডাকাত ?
সেকালে রঘুডাকাতের নামেই পিলে চমকে উঠত সকলের। অমুক বাড়িতে ডাকাতি করব বললে আর রক্ষে নেই। যতই আটঘট বাঁধ, হবেই ডাকতি।
মস্ত লাঠিয়াল রঘু। দশাসই চেহারা। ইয়া চওড়া বুকের পাটা কালো কুচকুচে গা। মাথায় বাবরি। চোখ দুটাে জবাফুল। বনবন করে লাঠি ঘুরিয়ে, সেপাই-পুলিশের ব্যূহ ভেদ করে সে পালাত। ধন্যি তার সাহস। আগেভাগে চিঠি দিয়ে সে ডাকাতি করত। দিনক্ষণ জানিয়ে। রণপায়ে চেপে হনহনিয়ে ছুটত ডাকাতি করতে—এক এক রাতে পাঁচশ-তিরিশ মাইল দূরে।
দুর্গাচরণ এখন নৈহাটি থানার দারোগা।
সরকার থেকে ঘোষণা করা হয়েছে।—রঘুকে জ্যান্ত বা মরা ধরতে পারলে অনেক টাকার পুরস্কার। আর থানায় থানায় হুকুম এসেছে—যেভাবেই হােক রঘু ডাকাতকে ধরতে হবে। এই নিয়ে তো অষ্টপ্রহর দুশ্চিন্তা দুর্গাচরণের। কী যে করবেন তিনি!
হঠাৎ একটা চিঠি পেলেন দুর্গাচরণ।
কার চিঠি ?
রঘু ডাকাতের। লিখেছে—
দারোগাবাবু, আপনার সহিত আমার শীঘ্রই দেখা হইবেক। প্রস্তুত থাকিতে অনুরোধ হয়।
ইতি—
দীন সেবক
রঘু
চিঠি পড়ে তো দুগ্গা দারোগা রেগে আগুন তেলে বেগুন। কী এতবড় স্পর্ধা রোঘোটার? দারোগার সঙ্গে মস্করা। আচ্ছা, আসুক না একবার ধারে-কাছে, দেখাচ্ছি মজা ।
কিন্তু মজা দেখাল রঘুই।
দুর্গাচরণ একদিন থানার বারান্দায় গুডুক গুডুক করে তামাক খাচ্ছেন। আর ভাবছেন, কী করে ধরা যায় রঘু ডাকাতকে। নিজেই সে আসবে? আসুক না। সেপাই-সান্ত্রি সব হাঁশিয়ার। চারদিকে কড়া পাহারা। এলেই—
কে যেন থানার দিকেই আসছে না ? ওঃ, ও তো একটা জেলে। বিরাট সাইজের দু-দুটাে পাকা রুই তার মাথায়। লোকটার মাছের দিকেই নজর দিলেন দারোগাবাবু।
বাঃ, খাসা মাছ তো ?
লোকটা গুটি গুটি বারান্দায় উঠে এল। মাছ দুটােকে ধপাস করে ফেলল। দারোগাবাবুর পায়ের কাছে। তারপর হােঁটমুণ্ডু হয়ে প্ৰণাম করে ট্যাঁক থেকে একটা চিরকুট বের করল।
একটা চিঠি। সুখচরের জমিদার চিঠিটা লিখেছেন দুর্গাচরণবাবুকে।
মান্যবরেষু,
আমার নাতির অন্নপ্রাশন উপলক্ষে বড় দীঘিতে জাল ফেলা হইয়াছিল। শুনিলাম ব্যস্ততা হেতু আপনি আসিতে অপারগ। যাই হইক, সামান্য দুইটি মাছ পাঠাইলাম। গ্রহণ করিলে আমার নাতির মঙ্গল হইবেক। বাহক আমার বিশ্বাসী প্ৰজা।
দুর্গাচরণ তো খুব খুশি। জমিদারের লোকটিকে উপযুক্ত বখশিস দিয়ে বিদেয় করলেন। সে নমস্কার করে হাসিমুখে চলে গেল।
রঘু ডাকাতকে ধরার জন্যে প্ৰাণপণে চেষ্টা করেন দুর্গাচরণ। তক্কে-তক্কে থাকেন। খবর পেলেই দলবল নিয়ে ছোটেন। ওঁৎ পেতে ফাঁদ পেতে বনে-জঙ্গলে মশার কামড় খান।
কিন্তু সবই বৃথা। রঘু ডাকাত ধরা পড়ে না। এমন সময় আর একটা চিঠি পেলেন দুর্গাচরণ। দারোগাবাবু, কথা রাখিয়াছি। আপনার সহিত দেখা করিবার কথা ছিল, সেদিন দেখা করিয়াছি। মাছ কেমন খাইলেন ?
ইতি—
আমার দাসানুদাস
রঘু
চিঠিটা পড়ে দুগ্গা দারোগা তো হায় হায় করে উঠলেন। এমন নাগালে এসেও ফসকে গেল। রঘুটা ?
ওঃ কী শয়তান! কী ধূর্ত! দুৰ্গাচরণ আঙুল কামড়াতে লাগলেন।
রঘু কিন্তু গরিব মানুষের বন্ধু ছিল। ভুলেও সে গরিবের গায়ে হাত দিত না। ডাকাতির টাকা পয়সা এককথায় বিলিয়ে দিত। তাদের মধ্যে। কত যে উপকার করত। গরিবের ওপর বড়লোকদের অন্যায় জোর-জুলুম দেখলে রুখে দাঁড়াত। অত্যাচারীকে শাস্তি পেতে হত।
রঘু ডাকাতকে নিয়ে কত যে গল্প লোকের মুখে ছড়িয়ে আছে।
একবার এক বামুনের মেয়ের বিয়ে।
মেয়ের বাবা বড় গরিব। বিয়ে যদি বা ব্যবস্থা হল, শেষপর্যন্ত পণের টাকা যোগাড় হল না।
বামুনের মাথায় হাত!
বিয়ের দিন নৌকো এসে ভিড়ল নদীর ঘাটে। নৌকোয় বর ও বরযাত্রীর দল।
বরের বাবা নৌকো থেকে খবর পাঠাল-বেয়াই-মশাই, পণের টাকা আগে পাঠান, না হলে এই ঘাট থেকেই বিয়ে ভেঙে দিয়ে ফিরে যেতে বাধ্য হব।
কিন্তু কনের বাবা কোথায় পাবেন অত পণের টাকা ?
এদিকে লগ্ন যে বয়ে যায়।
হায়, হায় কী হবে উপায় ?
বিয়েবাড়ির সব আলো যেন কেউ একফুয়ে নিভিয়ে দিল। কান্নার রোল উঠল। কনে কাঁদে। কনের মা-মাসি কাঁদে। পাড়াপাড়শীও কাঁদে। আর কনের বাবা মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকেন ঘরের বাইরে, চণ্ডীমণ্ডপের ধারে পথের ওপর।
সন্ধে পেরিয়ে গেছে। আঁধার ঘন হয়েছে।
শুকনো পাতায় খড়মড় শব্দ।
কে যেন আসছে।
লম্বাচওড়া ষণ্ডামার্কা একটা লোক।
পেন্নাম হই ঠাকুর। এমন ভরসন্ধ্যেবেলায় মাথায় হাত কেন ? কী হয়েছে তোমার ?
বাজখাই গলার আওয়াজে চমকে উঠলেন বেচারা বামুন।
কে তুমি?
আমি যেই হই। তোমার কী হয়েছে খুলে বল, নইলে আমি নড়ছিনে এখান থেকে।
বামুনকে বলতেই হল তার দুঃখের কথা।
সব শুনে সেই অচেনা লোকটি বলল, “এই ব্যাপার? আচ্ছা, তবে তুমি বিয়ের আয়োজন কর, ঠাকুর। আমি এখুনি বর নিয়ে আসছি। কিছু ভেবো না, তোমার মেয়ে বিয়ে হবেই।”
বলেই লোকটি উধাও হয়ে গেল।
খানিক বাদে ওদিকে এক কাণ্ড । নদীর ঘাটের কাছে ঝোপ-ঝাড়ে হঠাৎ মশাল জ্বলে উঠল। সেই আলোয় ফুটে উঠল কয়েকটা মুখ।
নৌকোর কাছে এগিয়ে এল। তাগড়াই চেহারার একদল মানুষ। একজন আবার যেমন লম্বা তেমন চওড়া। সেই বোধহয় পালের গোদা।
লোকটি এসেই হুকুম করল, “নৌকো থেকে নাম সব। বিয়ের লগ্ন পেরিয়ে যাচ্ছে, বরকে এখুনি বিয়েবাড়িতে নিয়ে যাও।”
হঠাৎ এমন হুকুম শুনে প্রথমটায় হকচকিয়ে গেল। একটু সামলে নিয়ে বরকর্তা গলা চড়িয়ে বলল, “ইস, বললেই অমনি নেমে যেতে হবে ? যতক্ষণ না পণের টাকা আসছে আমরা নামবই না নৌকো থেকে।”
তোমাদের নামতেই হবে।
তোমার হুকুমে নাকি?
হ্যাঁ, আমার হুকুমে।
উরি বাস রে! বিষ নেই কুলোপনা চক্কর! কে হে তুমি, যে এমন হুকুম করার সাহস পাও?
লোকটি এবার তাড়াক করে নৌকোয় লাফিয়ে উঠল। বুক চিতিয়ে বলল, আমি রঘু ডাকাত।
রঘু ডাকাত! :
বরের বাবার তো আক্কেল গুডুম! তার হাত-পা যেন পেটের মধ্যে সেঁধিয়ে গেল। বর ও বরযাত্রীরা ভয়ে কাঁপতে লাগল ঠকঠক করে।
রঘু ডাকাত গর্জে উঠল কি, যাবে এবার? না লাঠিপেটা করে নিয়ে যেতে হবে?
ব্যস, অমনি সুড়সুড়ি করে সবাই নেমে এল নৌকো থেকে। বর, বরযাত্রী বরকর্তা-সবাই।
বিয়েবাড়িতে গিয়ে কনের বাবার হাতে পণের টাকাও গুঁজে দিল রঘু।
বামুনের মেয়ের বিয়ে হল।
শাঁখ বাজল। উলুধ্বনি হল।
মেয়ের মুখে হাসি ফুটল। সেই হাসি ছড়িয়ে গেল মেয়ের মা-বাবার মুখেও ।
এই ছিল রঘু ডাকাত। বড়লোকের যম, গরিবের বন্ধু।
যতই যাই হােক, রঘু তো আসলে ডাকাত। তার একটা ডাকাতির গল্প শোন এবার ।
এক ধনী জমিদার ছিলেন। তার বিরাট জমিদারি, বিস্তর তালুক-মুলুক, প্রচুর সোনা-দানা টাকা-পয়সা ।
সেই জমিদারের খুব গর্ব-রঘু ডাকাতের সাধ্যি নেই যে তার বাড়ির ত্ৰিসীমানায় ঢোকে। বাড়ির চারদিক ঘিরে বিরাট উঁচু পাঁচিল। অনেক পাইকবরকন্দাজ, সেপাই-লেঠেল সর্বক্ষণ পাহারা দিচ্ছে। ছুঁচটিও সহজে গলবে না তার বাড়িতে।
ডাকাতি করবে রঘু? আসুক না দেখি।
কথাটা রঘুর কানে গেল।
জমিদারবাবু চিঠি পেলেন।
আপনার বাড়িতেই যথাশীঘ্ৰ দেখা করব। প্রস্তুত থাকিবেন।
ইতি—
রঘু
তা প্রস্তুত হতেই হল জমিদারকে। রঘুর চিঠি। মুখে যতই বড়াই করুন, বেশ কিছুটা ভয় পেলেন মনে মনে।
পাহারা জোরদার হল। সারারাত লণ্ঠন জ্বেলে দারোয়ানরা খাড়া রইল। আরও লেঠেল এল।
তাতেও নিশ্চিত হতে পারলেন না জমিদার, থানার দারোগাকে অনুরোধ করলেন, পাহারা বসাবার জন্যে। দারোগাবাবু নিজে এসে প্রতি রাতে জমিদার বাড়িতে থাকতে লাগলেন। সঙ্গে অনেক পুলিশ-টুলিশ।
একদিন এক ভদ্রলোক এলেন ফিটনে চেপে। গায়ে ফিনফিনে মসলিনের জামা, পরনে শান্তিপুরী ধুতি, গলায় সোনার চেন, পায়ে নাগরা জুতো। সব মিলিয়ে বেশ বড়লোক বলেই মনে হয়।
ভদ্রলোক জমিদারবাবুর সঙ্গে দেখা করতে চান। গেটের দারোয়ান সেলাম ঠুকে গেট খুলে দিল। জমিদার তখন মোসাহেবদের নিয়ে খোশমেজাজেই ছিলেন। রঘুকে নিয়ে ঠাট্টা-তামাশা করছিলেন। বলছিলেন, ওহে, তোমাদের রঘু ডাকাতের কী হল, গর্তে ঢুকে গেল নাকি? সেই কবে থেকে এই আসে এই আসে করে অপেক্ষা করছি, তা এল? তার জন্যেই এত আয়োজন সবই যে বৃথা হল দেখছি।”
মোসাহেবরা বলল, “আপনার বাড়িতে রঘু ব্যাটা আসবে? সে মুরোদ কি আছে তার ?”
কথাবার্তায় বাধা পড়ল সেই ভদ্রলোকটি ঘরে ঢুকতে।
জমিদারবাবুকে নমস্কার করলেন ভদ্রলোকটি। জমিদারবাবুও পাল্টা নমস্কার করে তার পরিচয় জানতে চাইলেন।
মশায়ের নাম ? নিবাস কোথায় ?
আজ্ঞে আমার নাম ঈশ্বরচন্দ্ৰ বন্দ্যোপাধ্যায়। নিবাস সুখচর।
তা কী প্রয়োজনে আসা বলুন।
ভদ্রলোক তার প্রয়োজনের কথা বললেন। সুখচরে জমিদারের যে তালুক আছে, সেটা তিনি কারুকে পত্তনি দিতে চান শুনেই ভদ্রলোক এসেছেন। বললেন, “ওই পত্তনি যদি দয়া করে আমাকে দেন তো বড়ই উপকৃত হই।”
জমিদার রাজি হলেন। কথাবার্তা পাকা হল। ভদ্রলোক নমস্কার করে, ফিটন হাঁকিয়ে অদৃশ্য হলেন। তারপর দিন যায়। রঘু ডাকাতের দেখা নেই। ভয় কমে। পাহারার কড়াকড়িও কমতে থাকে। থানার পুলিশ-চৌকি উঠে যায়। জমিদারের তখন কিছুটা নিশ্চিন্তু-নিশ্চিন্ত ভাব।
না, রঘু ডাকাত আর আসবে না।
বেশ কিছুদিন পরের কথা । অমাবস্যার ঘুরাঘুট্টি রাত। তীরবেগে একটা ছিপনৌকো এসে লাগল। জমিদারবাড়ির ঘাটে। নৌকা থেকে কারা যেন নামল। ছায়ামূর্তির মতো। তাদের হাতে হাতে লাঠি-সড়কি বর্শা-বল্লম।
নিঃশব্দে গুড়ি মেরে তারা চলে এল পাঁচিলের গায়ে। এদিককার একএকটা গাছের ডাল ধরে তারা টপটপ লাফিয়ে পড়ল পাঁচিলের মাথায়, তারপর ওদিকে বাগানের বড় বড় গাছের ডাল ধরে ঝুপঝাপ নেমে পড়ল মাটিতে।
রাত তখন গভীর। জমিদারবাড়িটা যেন ঘুমপুরী। যে যেখানে সবাই ঘুমিয়ে। ওরা ঢুকল খিড়কি দিয়ে। সোজা উঠে গেল বাড়ির বারান্দায়। সেখানে লণ্ঠন জ্বেলে দারোয়ানরা ঘুমিয়ে পড়েছে। ঘড়র-ঘড়র করে নাক ডাকছে। তাদের তলোয়ারগুলো দেয়ালে ঝোলানো।
ওরা করল কি, লণ্ঠনগুলো আগে নিভিয়ে দিল। তারপর সবকটা তলোয়ার হাতিয়ে নিয়ে উঠে গেল উপরিতলায়। তখন আর তাদের পায় কে ? রাতের নিশুতি খানখান করে চিৎকার করে উঠল ডাকাতের দল-হা-রে-রে-রে।
তারপর দরজা ভাঙার শব্দ-দমাদম দমাদম। ধড়মড়িয়ে জেগে উঠল গোটা পাড়া। ডাকাত পড়েছে জমিদারবাড়িতে! সোনা-দানা টাকা-কড়ি যেখানে যা ছিল—সব লুঠ হয়ে গেল। কে তাদের বাধা দেবে ? দারোয়ানরা হাত বাড়িয়ে দেখে-তাদের তরোয়ালগুলো সব বেহাত হয়ে গেছে। খালি হাতে কে লড়বে?
লুঠপাট শেষ করে ডাকাত সর্দার ঢুকাল জমিদারবাবুর ঘরে। ভয়ে গোঁ গোঁ করে তিনি বোধ হয় মূৰ্ছা গেলেন।
জমিদারবাবুর তখন কীসের ভয়? প্রাণের?
না, ডাকাতসর্দার তাকে প্ৰাণে মারল না, শুধু হাত-পা বেশ করে বেঁধে ফেলল। তারপর খাটের ওপর শুইয়ে রেখে চলে গেল।
কদিন পরেই একটা চিঠি পেলেন জমিদার।
রাজাবাবু,
আপনার বাড়িতে সেদিন দেখা করিয়া সুখচারের পত্তনি পাইয়াছি। পরে গত অমাবস্যার রাতে আপনার বহু মূল্যবান সম্পদ যাহা পাইয়াছি নির্বিঘ্নে লইয়া আসিয়াছি। আপনি ঘুমাইতেছিলেন, তাই দেখা হইল না। যাহা হউক আমি আপনার বা আপনার পরিবারের কাহারও গায়ে আঁচড় পর্যন্ত কাটি নাই। আপনার যাহা কিছু লইয়াছি, সবই গরিব দুঃখীদের মধ্যে বিতরণ করিব। ক্ষমা করিবেন।
ইতি—
আপনার সেবক
রঘু
পড়লে তো সেকালের রঘুড়াকাতের চিঠি ?
আজ এসব গল্পকথা। কিন্তু প্ৰায় সবটাই সত্যি। তখনকার সরকারি দলিল-দস্তাবেজে, নথি-পত্রে আর পত্র-পত্রিকায় রঘু ডাকাতের নানা কীর্তি-কাহিনী ছাপা হয়েছিল। সেসব বিখ্যাত শিশুসাহিত্যিক যোগেন্দ্রনাথ গুপ্ত ‘বাংলার ডাকাত’ নামে বইটিতে রঘুডাকাতের কথা লিখেছিলেন। বইটি তোমাদের জন্যেই লেখা। পড়ে দেখতে পার।
রঘু ডাকাতের এক বংশধরের সঙ্গে কয়েক বছর আগে আমার আলাপ হয়েছিল। সে বোধহয় রঘুর নীতির নাতি। নাম কালী সর্দার। তারও বিশাল চেহারা। গায়ের রং মিশমিশে কালো।
তিন পুরুষ আগে নাকি তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য ছিল। এখন যেসব নেই। কালী চাকরি করে রেলে। থাকে ঢাকুরিয়া অঞ্চলে।
কালীর কাছে রঘু ডাকাতের অনেক গল্প শুনেছি। তাদের ঢাকুরিয়ার বাড়িতে গিয়ে বিরাট আকারের একটা খাড়াও দেখেছি। সেটা নাকি রঘু ডাকাতের খাড়া। সত্যি, খাড়াটা দেখলেই গা ছমছম করে!
রঘু ডাকাতকে নাকি শেষ পর্যন্ত কেউ ধরতে পারেনি। আর একটা আশ্চর্য কথা কালী সর্দার আমাকে বলে। রঘু সবাইকে বলত, মরতেই যদি হয় শুয়ে মরব কেন? আমি দাঁড়িয়ে মরব।” রঘু তার কথা রেখেছিল। মৃত্যুকালে রঘুকে ধরে দাঁড় করানো হয়। দাঁড়িয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে। ডাকাত সর্দার রঘু।
0 coment�rios: