গাড়ির শব্দে বারান্দা থেকে পাতিহাসের মত গলাটা বাড়িয়ে নিচের দিকে ঝুঁকিয়ে দেকে নিয়েই পিন্ধি চীৎকারে করে উঠল ‘ওমা: পাউরুটি মাসি !!’
আহ্লাদে পিঙ্কির চুলগুলো সোনালী আর মুখটা রূপোলী হয়ে উঠল। আর এমন দুদ্দাড়িয়ে সিঁড়ি দিয়ে নেমে এল যে, নেমেই ধাক্কা নানকুর সঙ্গে। নানকুও উঠছিল কিনা হুড়মুড়িয়ে।
অন্যদিন হলে অবশ্য এই ধাক্কার ফলে খুনোখুনি হয়ে যেত, কিন্তু আজ নানকু সেদিকে গেল না, চাপা গলায় চেঁচিয়ে উঠল, পিঙ্কি সববোনাশ! পাউরুটি মাসসি!’
পাউরুটি মাসি ওদের প্রাণের দেবী, ছুটি ছাটাই যখনই কলকাতায় চলে আসে পাউরুটি মাসি, পিঙ্কি নানকু আহ্লাদের সাগরে ভাসে।
কারণ?
কারণ ফুলো ফুলো গোলগাল পাউরুটি মাসির গুণের যে তুলনা নেই! পাউরুটি মাসি গান গায় সুন্দর, কথা বলে মিষ্টি, গল্প বলে অপূর্ব আর সর্বদাই যেন হাসি খুশির খনি।
তা ছাড়া পাউরুটি মাসি এলে – মা?
মা তো একেবারে অন্য মানুয!
সারা বছরে আর কবে মা এমন আহ্লাদের পাহাড়, আর উদারতার অবতার হয়ে ওঠেন?
পাউরুটি মাসি থাকাকালীন অবস্থায় কত কী-ই না বাগিয়ে নেওয়া যায়। যা চাও — মা স্রেফ কল্পতরু ! হাসবেন আর বলবেন, “দেখছিস তো পাউরুটি, কি রকম চাঁদচাওয়া আবদার আমার ছেলেমেয়ের! ধরেছ যখন তোমরা ছাড়বে না জানি। এই নাও টাকা!’
অথচ অন্য সময় ?
অন্য সময় রেগে গেলে বলবেন, চাঁদচাওয়া আবদার, ছেলেমেয়ের! টাকা যেন গাছে ফলে!”
মানে?
মানে হচ্ছে, মা অর্থাৎ পাউরুটি মাসির রাঙাদি, চান তাদের দুই মাসতুতো বোনের অনর্গল গল্পের মধ্যে কোনো ব্যাঘাত এসে না নাক গলায়! অতএব পিঙ্কি নানকু জিনিস চাইলে জিনিস, পড়ায় ছুটি চাইলে ছুটি, যা খুশি করতে চাইলে যা খুশির অনুমতি।
এই পাউরুটি মাসির আবির্ভাবে সববোনাশ!
পিঙ্কির সোনালী-হয়ে-ওঠা চুল কালো হয়ে গেল, সজারুর কাটার মত খাড়া হয়ে উঠল। পিঙ্কি দাঁড়িয়ে পড়ে চোখ পাকিয়ে বললো, সববোনাশ মানে কী রে দাদা?
সববোনাশ মানে সববোনাশ! মানে আজই এক্ষুণি পটকাকাকু আসছে!
সিঁড়িতে বসে পড়ে পিঙ্কিও বলল, সববোনাশ!
পটকাকাকুও ওদের প্রাণের ঠাকুর, তার সরু লম্বা খটখটে হাড়ে হাজার ভেলকি। পটকাকাকু ঘড়ি গুড়িয়ে আস্ত করা, নোট উড়িয়ে ঘুড়িধরা, ইত্যাদি করে একশো রকম ম্যাজিক জানে, পটকাকাকু পঞ্চাশ প্রাণীর ডাক ডাকতে পারে, আর স্বৰ্গ মৰ্ত্ত পাতাল তিন ভূবনের খবর নির্ভুল বলতে পারে। ভূত ভবিষ্যৎ বর্তমান তিনকালেরও পারে। তাছাড়া পটুক কাকু এলেই তো বাবা করুণাপারাবার, মহতের অবতার!
নিজে ডেকে ডেকে বলবেন,‘পিঙ্কি নানকু তোমরা আজ কোন দিকে বেড়াতে চেতে চাও বল। আমি গাড়ি রেখে যাচ্ছি। আচ্ছা পটকাকেই বোলো তার যেদিকে ইচ্ছে! পেট্রলের টাকা রেখে গেলাম রে পটকা, বেশ পেটঠেশে তেল ভরে নিবি।”
এই পেটঠাশার ব্যাপারের লক্ষ্যটা যে বাবার পিসতুতো ভাই পটকা, পিঙ্কি নানকু উপলক্ষ্য মাত্র, তা কি আর বোঝে না ওরা? কিন্তু বুঝে ক্ষতি কি? ওদের তো হু হু করা বাতাস চোখে মুখে লাগিয়ে মাইলের পর মাইল গাড়ি চড়ার সুখটা জোটে।
আবার নিজেও পটকা কাকু কম নাকি?
পটকা কাকু মানেই সার্কাস, সিনেমা, খেলাদেখা, ইত্যাদি কের রাজ্যির আমোদ।
আর পটকা-কাকুর অনারে রান্নাঘরে রোজ উৎসব। অথচ পিঙ্কি বলল, পটকা-কাকু? সববোনাশ!
মানে কি?
মানে তাহলে খুলেই বলতে হয়। মানে হচ্ছে পাউরুটি মাসি যেমন মার প্রাণের পুতুল, পটকা কাকু তেমনি বাবার প্রাণের মাণিক! কাজেই পাউরুটি মাসি এলে মার মনে হয় তেমন যত্ন হচ্ছে না, বাবা মোটেই আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। আর পটকা কাকু এলেই বাবার মনে হয় তেমন যত্ন হচ্ছে না, মা মোটেই আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।
অতএব?
অতএব ওঁদের কেউ একজন এলেই বাবাতে আর মা-তে রোজ ধুন্ধুমার বাধে।
পাউরুটি মাসি এক মাস থাকলে বাবা যদি উনত্রিশ দিন গাড়ি দান করেও একটা দিন বিশেষ কাজে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যান, মা আক্ষেপ করে বলেন, এবারে আর পাউরুটিকে নিয়ে বেড়ানোই হল না! অথচ কত জায়গায় নিয়ে যাব ভেবেছিলাম —
আর পটকা কাকু দু’মাস থাকলে মা যদি উনষাট দিন ভোজপর্ব চালিয়ে একটা দিনও শুধু সাধাসিধে ডাল ভাত রাঁধেন, বাবা মনঃক্ষুন্ন হয়ে বলেন, এবার আর পটকাকে তেমন জুৎ করে খাওয়ান হল না। অথচ পটকা খেতেটেতে ভালবাসে—
কথাটা অবিশ্যি সত্যি।
পিঙ্কি নানকু জানে সে কথা। বরং তারা অবাক হয়ে গবেষণা করে— পটকা কাকুর ওই সরু লম্বা দেহটার মধ্যে এত খাবার-দাবার ঢোকে কোথায়, আশ্রয় নেয় কোথায়! কুড়িটা লুচি, বারোটা ফ্রাই, ষোলটা চপ, এক সের মাংস, গোটা আষ্টেক রাজভোগ, বড় একবাটি পায়েস এক সঙ্গে পেটের মধ্যে চালান করে দিয়েও, পটকা কাকু যখন দাঁড়িয়ে ওঠে, দেখতে পাওয়া যাবে যেখানকার পেট সেখানে !
সেই পেটে পিঠে এক, হাড় আর চামড়া।
এত মাল যায় কোথায়?
ভেবেছে ওরা অনেক দিন। সারা গায়ে ছড়িয়ে গেলেও তো গায়ে একটু মাংস লাগবে?
পিঙ্কির বাবাও সেই কথাই বলেন, যত্নআত্তি পেলে তো গায়ে একটু মাংস লাগতো! বারো মাস মেসে পড়ে থাকে যত্ন পায় না! নিজের বোনটি যখন আসে, তখন তো বেশ তিনদিনের পাঁউরুটিকে ফুলিয়ে তুলোর গাঁট করে তুলতে পারে।
ব্যস !
বুঝতেই পারছো?
আর মার রাগ হবারই কথা। পাউরুটি মাসি কোনোদিন তিনটের বেশি লুচি খেতে পারেন নি, আধখানা ছাড়া একখানা চপ খায় না, আর মিষ্টি? সে তো দেখলেই চোখ বোজে !
তবে বাবা বিশ্বাস করেন না। বাবা বলেন, হুঁ ৷ হলেই হল! তা হলে বলতে হবে গ্যাসবেলুনের মত বাতাস পাম্প করা হয় ওকে!
কাজেই – নারদ! নারদ !
কিন্তু সে তো এক একজনের জন্যে ।
এক সঙ্গে দু’জন হলে কী হবে, বা হতে পারে, অথবা হওয়া সম্ভব, তা আন্দাজ করতে না পেরে ওরা দুজনেই বলে, সববোনাশ!
তারপর অবশ্য ছুটে বাইরে বেরিয়ে যায় দুজনেই কারণ আর একটা গাড়ির শব্দ হয়ে গেছে ততক্ষণে।
বাবা চেঁচাতে চেঁচাতে বাড়ি ঢোকেন, এই শুনছো, পটকু এসেছে। ইস, কতদিন পরে যে এলি পটকু !
মা রান্নাঘর থেকে বেরিয়েই চেঁচিয়ে ওঠেন ও মা পাউরুটি তুই? ওরে বাবারে কী মজারে! উঃ কত দিন যে দেখিনি তোকে পাউরুটি!"
পাউরুটি মাসি আর পটকাকাবু দুজনেই একসঙ্গে মাকে আর বাবাবে প্রণাম করেন, কিন্তু ততক্ষণে তো শুরু হয়ে গেছে ধুন্ধুমার।
‘পাউরুটির দিকে তুমি তাকালে না যে বড়?’, মা বললেন রেগে রেগে।
বাবাও চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলে উঠলেন, তুমিও পটকার দিকে তাকাওনি ! ও বেচারী বারোমাস হোস্টেলে পড়ে থাকে। এতদিন পরে দিদির কাছে এল, ওর দিকে আগে তাকাব না ?
সারাক্ষণ তো তুমি এখন ভাইকে নিয়েই মত্ত থাকবে, আমার বোনটার যত্ন হচ্ছে কিনা, বেড়াতে পাচ্ছে কিনা, সিনেমা দেখল কিনা, এসব খোজই করবে না !
তুমিও সারাক্ষণ বোন নিয়ে মত্ত থাকবে, আমার ভাইটা খেতে পেল কিনা, শুতে পেল কিনা, তার জামা কাপড় শুকোলো কিনা খোঁজই করবে না !
তা মত্ত থাকবো না? জানো পাউরুটি আমার থেকে দশ বছরের ছোট ছোট্টবোনটি!
তা মত্ত থাকবার রাইট আমারও আছে, পটকাও আমার থেকে বারো বছরের ছোট ছোট্ট ভাইটি!
আহা! আহা! কত যে আদরের ও আমার !
দু'জনেই নিশ্বাস ফেললেন।
সেই অবসরে পটকা কাকু বলে উঠলো, সুটকেশটা কোথায় রাখবো বৌদি?
আর পাউরুটি মাসি বলে উঠল, ট্যাক্সিড্রাইভার কত নিল জামাইবাৰু?
পিঙ্কিদের মা এবার যাট্ যাট করে ছুটে এলেন, ওমা তুমি নিজে সুটকেশটা বইছো পটকা ঠাকুরপো! ছি ছি, রাখো রাখো ওইখানেই রাখো।'
নানকুদের বাবা বলে উঠলেন, আহা আহা তোকে আর ট্যাক্সিভাড়া নিয়ে মাথা ঘামাতে হবে না পাউরুটি, থাম! চুপ কর!
তখনকার মত অবশ্য কিঞ্চিত সন্ধি হল। কারণ মা ওদের জন্যে চা জলখাবার আনতে গেলেন, আর বাবা ওদের জন্যে চাকরকে বকবকি করতে গেলেন।
কিন্তু সে আর কতটুকু? সন্ধি তো এক্ষুণি বিচ্ছেদ হয়ে যাবে, জানা কথা! নানকু আর পিঙ্কির দিকে এতক্ষণে তাকালো পাউরুটি মাসি! হেসে ফেলে বললো, জামাইবাবু কী ঝগড়াটে !
পটকাকাকুও এতক্ষণ পরে তাকালো ওদের দিকে হেসে বললো, বৌদি কী রাগী!
তারপর নিজেরা তাকিয়ে বললো, আমাদের নিয়ে তাহলে এখন নারদ নারদ চলবে কি বল? :
তা চললোই।
উঠতে বসতে খেতে বেড়াতে বাবা বলছেন, পটকার কথা তুমি ভাবছই না! আর মা বলছেন. পাউরুটির কথা তুমি মনের কোণেও আনছো না!
বাবা যদি গাড়ি রেখে যান, মা বলেন নির্ঘাৎ ভাইয়ের জন্যে রেখে গেছেন, তোমাদের আর চড়ে কাজ নেই পাউরুটি!
যদি গাড়ি নিয়ে যান, মা বলে বেড়ান, নিৰ্ঘাং পাউরুটির জন্যে ! পাছে আমি ওকে নিয়ে একটু বেড়াতে যাই!
মা যেদিন রান্না ঘরে ভাল ভাল সব আইটেম করেন, বাবা তারিয়ে তারিয়ে খেতে খেতে বলেন, বুঝতে পেরেছি নিজের বোনের জন্যে! তা নইলে এত ভাল-মন্দের ব্যবস্থা ! যেদিন একটু ঝাড়া ঝাপটা রাঁধেন, বাবা ঘাড় নেড়ে বলেন, বুঝতে বাকি নেই, আমার ভাইয়ের জন্যে! পাছে সে একটু খায় দায়—
অবশ্য সঙ্গে সঙ্গেই দু’জনে ক্ষমা চেয়ে নেন পটকা ঠাকুরপো, তুমি কিছু মনে কোরনা ভাই, তোমার দাদার একচোখেনি দোষেই মন্দ হচ্ছি আমি !
পাঁউরুটি খাই তুই কিছু মনে করিস না, তোর দিদির একচোখোমির দোষেই অভদ্র হতে হচ্ছে আমায়।
ব্যস আবার লেগে গেল তুলোরাম খেলারাম!
কিন্তু এদিকে পিঙ্কি আর নানাকুর এবারের পুজোর ছুটিটাই গুবলেট ! ওরা না পাচ্ছে পটকাকাকুর কাছে পড়ে থাকতে, না পাচ্ছে পাউরুটি মাসির কাছেই বসে থাকতে। পাউরুটি মাসির স্কুলের ছাত্রীরা যে কী বেদম রামবোকা, এ গল্পতো কোনোই হল না। এবার আর পটকাকার কলেজের ছাত্ররা যে কি সাংঘাতিক বিচ্ছু চালাক, সে গল্পও কোনোই হল না। এবার আর পটকাকার কলেজের ছাত্ররা যে কি সাংঘাতিক বিচ্ছু চালাক, সে গল্পও থলে চাপা।
এদিকে পাউরুটি মাসি ডেকে ডেকে বলে, এবার আর তোরা গল্প শুনতে আসিস না কেন রে পিঙ্কি নানকু? কাকা এসেছে বলে বুঝি সাপের পা দেখেছিস ; মাসিকে আর চিনতেই পারছিস না?
অতএব এসে এসে পড়তে হয় ওদের। পটকা কাকুর যে নতুন মাজিক দেখাবে বলেছিল, যাওয়া হয় না সেদিকে।
ওদিকে পটকাকাকু ডেকে ডেকে বলে এবার বুঝি মাসিকে পেয়ে দিনে তারা দেখেছিস তোরা? কাকুকে আর চিনতেই পাচ্ছিস না!
কাজে কাজেই এসে বসে পড়তে হয় ওদের। অথচ ম্যাজিকে মন বসে না। ওদিকে ভূতের গল্প পড়ে আছে। কাজেই কেবলই মনে হয় কী যেন হারাচ্ছি, কী যেন হারাচ্ছি!
পাউরুটি মাসি বলে তোমার ছেলে মেয়ে এবার বদলে গেছে রাঙাদি । সে জেল্লা নেই, সে হাসি নেই।
পটকাকাকুর বলে তোমার ছেলে মেয়ে এবার বদলে গেছে নতুনদা, সে উৎসাহ নেই, সে স্ফূর্তি নেই।
পিঙ্কি আর নানকু মনের দুঃখে মনে মনে বলে, তোমরাই করেছ এটি। তোমরাই ঘুচিয়েছ আমাদের জেল্লা, হাস, স্ফূর্তি, উৎসাহ! না বলে কয়ে একই ছুটিতে দু’জন এসে ইহকাল পরকাল খেয়েছ আমাদের!
এর একটা প্রতিকার করতে হবে। বলল পিঙ্কি।
নানকু হতাশ গলায় বলল, এবারে আর উপায় কোথা : ছুটিতো শেষ হয়ে এল! দু’জনকেই এবার মা সত্যপীরের দিব্যি দিয়ে পায়ে ধরতে হবে, যেন আর কিবনে নোটিশে দু’জনে একদিনে এসে হাজির না হয় !
পিঙ্কি আরো হতাশ গলায় বলে, সে তো পরে! এবারে আর তাহলে কোনো আশাই নেই?
না !
বেশ চল, তবে বলিগে । পটকাকাকু যদি পুজোর ছুটিতে, তো পাউরুটি মাসি গরমের ছুটিতে আর পাউরুটির মাসি যদি পুজোর ছুটিতে তো পটকাকাকু গরমের ছুটিতে! তিনসত্যি করিয়ে নিইগে।
হঠাৎ চমকে ওঠে নানকু, তা হলে তো এটাও করা যেত যে পিঙ্কি, দুপুরে যদি পাঁউরুটির মাসির গল্প, তো সন্ধ্যের পটকাকুর, আর পটকাকুর যদি--
আহা ভারী তো বললি, পিঙ্কি ঝামরে ওঠে দুজনকেই যে আমাদের সকাল সন্ধ্যে দুপুর সর্বদা পেতে ইচ্ছে করে!
তা হলে?
তা হলে একটা কাজ করলে হয়—
কি হয় তা আর শোনা হল না নানকুর।
শুনতে পেল শুরু হয়ে গেছে ওদিকনে নারদ নারদ ।
মা বলছেন, তুমিই বল পটকা ঠাকুরপো, তোমাকে আমি অগ্রাহ্য করছি? অবহেলা করছি? খুব সুবিধে দেখছি না?
বাবা বলছেন, তুইই একবার বল পাঁউরুটি আমি তোকে অগ্রাহ্য করি, অবহেলা করি? কষ্ট আকষ্ট দেখিনা ।
কে কি বলত কে জানে, মা বলে উঠলেন, আগে পটকা ঠাকুরপো বলবে!
বাবা বলে উঠলেন, আগে পাউরুটি বলবে!
না, আগে পটকা ঠাকুরপো –
না, আগে ঠাকুরপো –
কক্ষণো না! আগে ঠাকুরপো –
আলবাৎ না, আগে পাউরুটি ---
আগে পট –
আগে পাঁউ —
ভাল হবে না বাপু —
ভাল হবে না বলছি –
হঠাৎ পাঁউরুটি মাসি আর পটকা কাকু দুজনেই ওঁদের রাঙাদি আর নতুনদা, বৌদি আর জামাই বাবুর গলার ওপরে গলা চড়িয়ে উদাত্ত স্বরে বলে ওঠেন, নতুনদা তোমাদের এই ঝগড়া কস্মিনকালেও থামবে বলে মনে হয় না। তার কারণ ঝগড়াতেই তোমাদের আহ্লাদ, ঝগড়াতেই তোমাদের ক্ষিদে বৃদ্ধি। কিন্তু যেহেতু আমরা দু’জনেই এই ঝগড়ার উপলক্ষ্য তখন তোমরা যতই আমাদের লজ্জিত হতে বারণ করো, হবোই লজ্জিত ! হচ্ছিও। অতএব—
পাঁউরুটি মাসির মিহি গলা আর এককাঠি চড়লো, অতএব আমরাই এটা মিটিয়ে ফেলবার ব্যবস্থা করবো ঠিক করেছি। আর বেশি দেরীও করবো না। সামনের এই পূর্ণিমাতেই –
পিঙ্কি চুপিচুপি বলে, পূর্ণিমার দিন ঝগড়া থামলে, আর কখনো বুঝি ঝগড়া হয় না দাদা?
নিশ্চয়ই! তাও জানিসনে বোকা? নানকু ও চুপিচুপি বলে, পূর্ণিমা মানে তো পুরোপুরি? তার মানেই পুরোপুরি মিটে যাবে!
কিন্তু পিঙ্কির বাবাও পিঙ্কির মতই বোকাটে গলায় বলে ওঠেন ঝগড়া থামানোর জন্যে আবার দিনস্থির করতে হয়? তা তো জানিনা। পূর্ণিমার দিন বুঝি —
হ্যাঁ শুভদিন — পটকা কাকু লজ্জা লজ্জা গলায় বলে ওঠে, ওই দিনটাই আমরা বিয়ের জন্যে ঠিক করেছি!
মা চেঁচিয়ে ওঠেন, বিয়ের ঠিক করেছ? কার বিয়ের দিন ঠিক করেছ?
পাঁউরুটি মাসি অাঁচলটা টেনে মুখ ঢাকে, আর পটকা কাকু রুমালে মুখ মুছতে মুছতে বলে, এই আমার আর পাউরুটির?
অ্যাঁ।
অ্যাঁ।
সত্যি।
সত্যি। -
কি আর করা। এ ছাড়া তো তোমাদের ঝগড়া থামাবার উপায় দেখছি না –
মা পটকা কাকুকে কথা শেষ করতে দেন না, বিষম উল্লাসে বলে ওঠেন, আমার বোনের বিয়েতে বেশি ঘটা করতে হবে তা বলে দিচ্ছি?
বাবা প্রবল প্রতাপে বলে ওঠেন আমার ভাইয়ের বিয়েতে এক ইঞ্চি কম হবে না তা বলে দিচ্ছি!
তোমার শাসন চলবে না –
তোমার আবদার কমাতে হবে –
সব মার্কেটিং আমি করবো –
তার মানে নিজের বোনের কোলে ঝোল টানবে —
ওরা আর শোনে না!
ওরা কে ঘরে এসে মাথায় হাত দিয়ে বসে।
একই দুঃখে দুঃখী দুই ভাইবোন!
নানকু একসময় নিশ্বাস ফেলে বলে, ও সব পূর্ণিমা ফুর্ণিমা বাজে! প্রেম চিরকাল চলবে! ...... তার মানে প্রতিকারের কোনো আশা নেই। তার মানে এরপর থেকে সব ছুটিই শুবলেট যখনি আসবে, দুজনে একই সঙ্গে আসবে।
দাদা!
পিঙ্কি ডুকরে উঠে বলে, তা হলে কী হবে?
হবে আবার কী! কিছু হবে না। সববোনাশের পর নতুন আর কিছু হয় নাকি।
ডাউনলোড PDF : ডাউনলোড
0 coment�rios: