Home Top Ad

Responsive Ads Here

Search This Blog

বনের ধারে ছোট্ট একটি ঘর । সেখানে থাকে সাতটি ছাগলছানা আর তাদের মা। ছাগলছানারা নেচে গেয়ে ঘুরে বেড়ায় । গান গায় চিকন সুরে । যা পায় তাই খায়...

সাতটি ছাগল ছানা -- নরওয়ের রূপকথা

বনের ধারে ছোট্ট একটি ঘর ।
সেখানে থাকে সাতটি ছাগলছানা আর তাদের মা। ছাগলছানারা নেচে গেয়ে ঘুরে বেড়ায় । গান গায় চিকন সুরে । যা পায় তাই খায়। মায়ের সঙ্গে মাঝে মাঝে যায় দূরের বনে ।
একদিন ছাগল-মা বলল, আমি আজ কাজে বের হচ্ছি। যাব বেশ দূরেই। ফেরার সময় তোমাদের জন্য নিয়ে আসব ভালো ভালো খাবার |
তাই না শুনে ছাগলছানারা খুব খুশি ।
মা বলল, কিন্তু বাছারা— একটা কথা । দিনকাল ভালো নেই। তোমরা কিন্তু ঘর থেকে বেরুবে না একদম । কোথায় কোন বিপদ ঘটবে কেউ তা বলতে পারে না।’
‘তা হলে আমরা কী করব? জানতে চাইল ছাগলছানারা ।
দরজা-জানালা বন্ধ করে ঘরের মধ্যে খেলাধুলা করবে। আমি ছাড়া অন্য কেউ এলে ভুলেও দরজা খুলবে না।’
এই না বলে ছাগল-মা রওনা দিল নিজের কাজে ।
কিন্তু সেই বনে ছিল দুষ্ট পাজি বদমেজাজি এক নেকড়ে। যেমন তার হাঁকডাক তেমন তার তেজ । সারাক্ষণ হুমহুম, সবার ওপর করে জুলুম । নেকড়ে অনেকদিন ধরেই তক্কে তক্কে ছিল, কী করে ছাগলছানাদের সাবাড় করা যায়।
ছাগল-মা ঘর থেকে বেরিয়ে যেতেই নেকড়ে বুঝল, এইতো সুযোগ । নেকড়ে পা টিপে টিপে এল ছোট্ট ঘরের সামনে । দরজার পাশে দাঁড়িয়ে নাক উচু করে শ্বাস টানল ।
আহা, চনমনিয়ে উঠল নেকড়ের খিদে ৷
তখন সে ছাগল-মা'র মতো গলার স্বর নকল করে ডাক দিতে লাগল। তবু তা শুনেই ছাগলছানারা বুঝে গেল, এটা তাদের মায়ের ডাক নয়।
তুমি আমাদের মা নও। আমাদের মায়ের ডাক আরও মিষ্টি । আরও চিকন । নেকড়ে টের পেল, সে ধরা পড়ে গিয়েছে। মন খারাপ করে সে গেল এক বুড়ো ভালুকের কাছে ।
ভালুক ভায়া, ভালুক ভায়া— আমায় একটু মধু দেবে? ভালুকের মধু খেয়ে, গলাটাকে আরও নরম করে নেকড়ে গেল আবার ছাগলছানাদের কাছে। এবার তার কণ্ঠটা ভারি নরম, ভারি চিকন ।
বাছারা, দরজা খোল, আমি তোমাদের মা এসেছি।’ ছাগলছানারা বুঝল, সত্যি বুঝি ওদের মা এসেছে। বড় জন জানালার খড়খড়ি তুলে যেই না তাকিয়েছে বাইরে, অমনি দেখে কালো কালো লোমশ দুটি থাবা। জলদি করে বন্ধ করে দিল সে জানালা । তারপর ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বলল, ‘তুমি আমাদের মা নও। আমাদের মায়ের পায়ে বড় বড় লোম নেই।’
এই না শুনে নেকড়ে একেবারে চুপ মেরে গেল। তাই বলে নিরাশ হলে চলবে না। আবার সে নতুন ফন্দি আঁটতে লাগল। ছুটতে ছুটতে গেল সে এক নাপিতের বাড়ি । ---
নাপিত ভায়া, নাপিত ভায়া— ক্ষুর দিয়ে আমার পায়ের লোমগুলো একটু চেছে দাও না ভাই ।”
নাপিত বেচারা ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে খুব তাড়াতাড়ি নেকড়ের লোম সাফ করে দিল ।
এইবারে নেকড়ে খুব মনের আনন্দে হেলেদুলে এল সেই ছোট্ট ঘরের সামনে । খুব ধীরে ধীরে দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়াল সে। তারপর নরম সুরে বলল, বাছারা, শিগগির দরজা খোল । আমি তোমাদের মা এসেছি।’
ছাগলছানারা ভাবল, সত্যি তাদের মা এসেছে। জানালা খুলে পায়ের দিকে দেখল, এই পা ওদের মায়ের পা । তারপর দরজা খুলল তারা । নেকড়ে তখন হুংকার দিয়ে ঢুকল ভেতরে। ভয়ে-আতঙ্কে চিৎকার শুরু করল ছাগলছানারা । 'বাঁচাও! বাচাও!” কেউ লুকাল টেবিলের তলায়। কেউ লুকাল চেয়ারের পাশে । কেউ গেল চুলোর ধারে । কেউ লুকাল খাটের তলায়। কেউ গেল বালিশের পাশে । নেকড়ের চোখে তখন লোভের আগুন জ্বলছে জ্বলজ্বল করে।
এক-একজনকে ধরে, আর কপাত করে গিলে খায় । মনের আনন্দে টেকুর তোলে। এইভাবে ঝটপট ছয়জনকে সাবাড় করে ফেলল নিমেষে। সবচেয়ে ছোট্ট যে ছাগলছানাটি সে লুকিয়ে ছিল বালিশের পাশে । নেকড়ে তাকে আর
খুঁজে পেল না।
ছয়জনকে সাবাড় করে নেকড়ের তখন ভরাপেট । প্রাণ করে আইঢাই, কোথায়
যাই কোথায় যাই। কিছুদূর হাটতেই নেকড়ে টের পেল শরীর যেন আর চলে না। চোখ জুড়ে নেমে আসছে ঘুম ।
নেকড়ে একটা বটগাছের ছায়ায় চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ল। তারপরই সে তলিয়ে গেল গভীর ঘুমে।
ওদিকে বিকেলবেলা ছাগল-মা ফিরল কাজ সেরে । দরজা খোলা দেখেই আঁতকে উঠল। সর্বনাশ! বিপদ ঘটে গেছে। ঘরে ঢুকেই ছাগল-মা পাগলের মতো এদিকে ছোটে, ওদিকে ছোটে। নেই, কোথাও কেউ নেই। তখন কুইকুই করে কাঁদতে কাঁদতে বেরিয়ে এল ছোট্ট ছাগলছানা ।
মা-কে খুলে বলল সব ঘটনা। আর মায়ের কোলের পাশে বসে তিরতির করে কাঁপতে লাগল ভয়ে। ছাগল-মা খুব বুদ্ধিমতী । মাথা ঠাণ্ডা রেখে সে ঘর থেকে বেরুল নেকড়ের খোঁজে। কিছুদূর গিয়েই দেখল, চিৎপটাং হয়ে মনের সুখে গাছের তলায় ঘুমুচ্ছে নেকড়ে শয়তানটা। ছাগল-মা তার পাশে গিয়ে ধাক্কাধাক্কি করল। কিন্তু কোনো সাড়াশব্দ নেই। নেকড়ের পেটের মধ্যে কান দিতেই ছাগল-মা শুনতে পেল ছাগলছানাদের নড়াচড়ার শব্দ । মায়ের মন তখন খুশি হয়ে উঠল। তখনই ঘরে ফিরে সে ছুরি আর সুই সুতো নিয়ে আবার গেল নেকড়ের কাছে। ছুরি দিয়ে নেকড়ের পেট চিরল ধীরে ধীরে। পেটের মধ্যে থেকে বেরিয়ে এল ছয়টি ছাগলছানা। ওরা কেউ মরেনি। কারণ নেকড়ে ওদের গিলে খেয়েছিল। ছাগলছানারা নতুন জীবন ফিরে পেয়েই নাচতে লাগল তিড়িং বিড়িং।
ছাগল-মা বলল, শিগগির তোরা পাথরের টুকরো নিয়ে আয়।’
তারপর তারা সবাই মিলে পাথরের টুকরো ভরল নেকড়ের পেটে । ছাগল-মা খুব সুন্দরভাবে পেটটা সেলাই করে দিল। নেকড়ের কিছুই বুঝবার কোনো উপায়ই রইল না ।
ছাগল-মা ফিরে এল আপন ঘরে । ছানাদের নিয়ে একসঙ্গে খেতে বসল মনের আনন্দে |
আর নেকড়ের সেই ঘুম ভাঙল অনেক রাতে। হাই তুলে নেকড়ে যখন চোখ মেলেছে, দেখে চারদিকে কেমন অন্ধকার। আর পিপাসায় যেন কলজে ফেটে যাচ্ছে। কোনোমতে সে উঠে দাঁড়াল। পেট যেন আগের চেয়ে অনেক বেশি ভারী মনে হচ্ছে। কোনোমতে টলতে টলতে নেকড়ে গেল নদীর ধারে ।
আর যেই না সে নেমেছে পানিতে আমনি পেটের পাথরের ওজনের তাল সামলাতে পারল না বেচারা । অত ওজন নিয়ে তলিয়ে গেল পানির গভীরে ।
ছাগলছানারা তারপরে, লতাপাতা খেয়ে, বনে-বাদাড়ে ঘুরে বড় হতে লাগল নিশ্চিন্ত মনে ।

0 coment�rios: