Home Top Ad

Responsive Ads Here

Search This Blog

        যে-কুকুরটি ভেড়ার পাল পাহারা দিত তার প্রভু ছিল নিষ্ঠুর। তাকে সে পেট ভরে খেতে দিত না। প্রভুর ব্যবহার অসহ্য হয়ে উঠলে বিষণ্ণ মনে তার...

কুকুর আর চড়ুই - জার্মানের রূপকথা

        যে-কুকুরটি ভেড়ার পাল পাহারা দিত তার প্রভু ছিল নিষ্ঠুর। তাকে সে পেট ভরে খেতে দিত না। প্রভুর ব্যবহার অসহ্য হয়ে উঠলে বিষণ্ণ মনে তার বাড়ি ছেড়ে সে চলে গেল। পথে তার সঙ্গে এক চড়ুইয়ের দেখা। চড়ুই তাকে বলল, “কুকুর ভায়া, তোমাকে আমন মনমরা দেখাচ্ছে কেন?”
        কুকুর বলল, “আমার ক্ষিদে পেয়েছে। কিছুই খেতে পাই নি।”
        তার কথা শুনে চড়ুই বলল, “আমার সঙ্গে শহরে এসো। পেট ভরে খেতে দেব।”
        একসঙ্গে শহরে আসার পর তারা পৌছল এক কসাইয়ের দোকানে। চড়ুই তখন কুকুরকে বলল, “ঐখানটায় দাড়াও। তোমার জন্যে এক টুকরো মাংস ঠোঁটে করে নিয়ে আসছি।”

        দোকানের সামনে বসে ঘাড় ফিরিয়ে চড়ুই দেখে নিল কেউ তাকে লক্ষ্য করছে কি না। তার পর এক টুকরো মাংস অনেকক্ষণ ধরে ঠুকরে ঠুকরে টেবিলের কিনারে এনে ফেলে দিল ফুটপাথের উপর। সেটা এক কোণে নিয়ে গিয়ে কুকুর খেয়ে ফেলল।
        চড়ুই তখন বলল, “এবার আরেকটা দোকানে যাওয়া যাক। সেখান থেকে তোমাকে আরেক টুকরো মাংস দেব। তা হলেই তোমার পেট একেবারে ভরে যাবে।”
        মাংসর দ্বিতীয় টুকরোটা কুকুর খাবার পর চড়ুই প্রশ্ন করল, “পেট ভরেছে তো, ভায়া?”
        কুকুর বলল, “মাংস খেয়ে তৃপ্তি হয়েছে। কিন্তু এখনো রুটি খেতে পাই নি।”
        চড়ুই বলল, “রুটিও পাবে। আমার সঙ্গে এসো।”
        চড়ুই তাকে নিয়ে গেল এক রুটিওয়ালার দোকানে। সেখানে গোটা দুই রুটি ঠুকরে ঠুকরে সে পথে ফেলল। সেগুলো খাবার পর কুকুর চাইল আরো রুটি খেতে। তাই তারা গেল আর এক রুটিওয়ালার দোকানে আর সেখানেও ঘটল একই ঘটনা।
        চড়ুই তখন জিজ্ঞেস করল, “এবার পেট ভরেছে তো, ভায়া?”
        কুকুর বলল, “হ্যাঁ, এবার শহরের বাইরে খানিক বেড়ানো যাক ৷” তাই তারা গেল বড়ো রাস্তায়। দিনটা ছিল গরম। খানিক যাবার পর কুকুর বলল, সে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে, খানিক ঘুমতে চায়।
        চড়ুই বলল, “বেশ কথা, ঘুমোও। আমি একটা গাছের ডালে -বসে থাকব।”
        কুকুর শুয়ে পড়ল আর অল্পক্ষণের মধ্যেই পড়ল গভীর ঘুমে ঘুমিয়ে। সে যখন ঘুমচ্ছে তিন-ঘোড়ায়-টানা এক মালগাড়ি চালিয়ে পথে দেখা গেল এক গাড়োয়ানকে আসতে। মালগাড়িতে ছিল দু পিপে মদ। চড়ুই দেখল পথের চাকার দাগের মধ্যে কুকুর যেখানে ঘুমচ্ছে সেখান দিয়ে গাড়োয়ান গাড়িটা চালিয়ে নিয়ে যাবে। তাই সে চেঁচিয়ে উঠল:
        “গাড়োয়ান, কুকুরের ওপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ো না। চালালে তোমাকে গরিব করে দেব।”
        গাড়োয়ান খিঁচিয়ে উঠে বলল, “হ্যাঃ, চড়ুই আমাকে গরিব করে দেবে।” এই-না বলে ছিপটি হাকিয়ে ঘুমন্ত কুকুরের গায়ের উপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে নিয়ে গেল। ফলে কুকুর গেল মরে।
        তাই-না দেখে চড়ুই বলল, “আমার কুকুর-ভায়াকে তুমি মেরে ফেললে। তার জন্যে তোমায় দুটো ঘোড়া খেসারত দিতে হবে।”
        গাড়োয়ান আবার খিঁচিয়ে উঠে বলল, “হ্যাঃ, আমাকে নাকি দুটো ঘোড়া খেসারত দিতে হবে। তুই আমার কী করতে পারিস, শুনি?” এই— না বলে সে গাড়ি হাঁকিয়ে চলতে লাগল।
        চড়ুই তখন মাল-ঢাকা কাপড়ের নীচে চুপি চুপি সেঁধিয়ে ঠোঁট দিয়ে ঠুকরে একটা পিপে ফুটো করে দিল। ফলে সব মদ গেল পড়ে। গাড়োয়ান টের পেল না। খানিক পরে পিছনে তাকিয়ে সে দেখে মদ ঝরে যাচ্ছে। পিপে দুটো পরীক্ষা করে দেখে, একটা খালি! তাই-না দেখে সে চেঁচিয়ে উঠল, “হায় হায়। ভারি লোকসান হয়ে গেল।”
        চড়ুই বলল, “পুরোপুরি গরিব হতে এখনো তোমার বাকি আছে।” এই-না বলে একটা ঘোড়ার মাথায় উড়ে গিয়ে বসে ঠুকরে তার চোখদুটো চড়ুই উপড়ে ফেলল।
        তাই দেখে গাড়োয়ান একটা ইট তুলে ছুড়ল চড়ুইয়ের দিকে। চড়ুই উড়ে গিয়ে বসল একটা গাছে আর ইটটা লাগল আর-একটা ঘোড়ার মাথায়, আর সঙ্গে সঙ্গে ঘোড়াটা মরে পড়ে গেল।
        “হায় হায়, আমি গরিব হয়ে পড়লাম” বলে চেঁচিয়ে উঠল গাড়োয়ান। দুটো ঘোড়া নিয়ে গাড়োয়ান যখন চলে যাচ্ছে চড়ুই তখন চেঁচিয়ে উঠল, পুরোপুরি গরিব হতে এখনো তোমার বাকি আছে।” এই-না বলে দ্বিতীয় ঘোড়াটার মাথায় বসে চড়ুই তার চোখদুটো উপড়ে দিল।
        দারুণ রেগে চড়ুইয়ের দিকে অন্ধের মতো আবার সে ইট ছুড়ল। কিন্তু চড়ুইয়ের বদলে সেটা লাগল তার তৃতীয় ঘোড়ার মাথায় আর সেটাও মরে পড়ে গেল।
        “হায় হায়, আমি গরিব হয়ে পড়লাম,” বলে চেঁচিয়ে উঠল গাড়োয়ান।
        চড়ুই বলল, “পুরোপুরি গরিব হতে এখনো তোমার বাকি আছে। এবার তোমায় বাড়িতে গরিব করব।” এই-না বলে চড়ুই উড়ে গেল। ভীষণ চটে আর বিরক্ত হয়ে মালগাড়িটা ফেলে বাড়ি ফিরতে বাধ্য হল গাড়োয়ান। বউকে সে বলল, “হায় হায় বউ, আমার কপাল খুব খারাপ। পিপে থেকে সব মদ পড়ে গেছে আর ঘোড়া তিনটে মরেছে।” তার বউ বলল, “এখানে এমন একটা পাজি পাখি এসেছে যে তুমি ধারণাই করতে পারবে না। সেটা সঙ্গে করে এনেছে আরো অনেক পাথি। আমাদের সব ফসল পাখিগুলো খেয়ে শেষ করল।
        গাড়োয়ান গিয়ে দেখে হাজার-হাজার পাখি তাদের ফসল খাচ্ছে আর সেই চড়ুই বসে আছে তাদের মাঝখানে। “হায় হায়, আমি গরিব হয়ে পড়লাম,” বলে চেঁচিয়ে উঠল গাড়োয়ান।
        চড়ুই বলল, “পুরোপুরি গরিব হতে এখনো তোমার বাকি আছে। যা করেছ তার জন্যে এবার তোমার প্রাণ যাবে, গাড়োয়ান।”
        গাড়োয়ানের তখন আর কিছুই নেই। তিতিবিরক্ত আর ভারি মনমরা হয়ে সে গিয়ে বসল উনুনের পাশে।
        বাইরে জানালার কিনারে বসে চড়ুই বলল, “যা করেছ তার জন্যে এবার তোমার প্রাণ যাবে, গাড়োয়ান।”
        রাগে পাগল হয়ে গাড়োয়ান তার ছোটো কুড়লটা ছুড়ল। কুড়লটা গিয়ে উনুন ভেঙে দু টুকরো করল। চড়ুই তখন লাফিয়ে-লাফিয়ে যেতে লাগল এক জায়গা থেকে আর-এক জায়গায়। আর কুড়লটা তার পিছু নিয়ে ভেঙে চলল আসবাব-পত্র, আয়না, ছবি, চেয়ার, টেবিল—সব-কিছু। শেষটায় সেটা গিয়ে ভাঙল বাড়ির দেওয়ালগুলো কিন্তু চড়ুইকে স্পর্শ করল না। শেষটায় গাড়োয়ান কিন্তু চড়ুইকে মুঠো করে ধরে ফেলল।
        তার বউ বলল, “দাও, ওটাকে আছড়ে মারি।”
        গাড়োয়ান বলল, “না-না, আছড়ে মারলে ওটার উচিত সাজা হবে না। আমি ওটাকে গিলে খাব।” এই-না বলে গাড়োয়ান গিলে ফেলল চড়ুইকে। চড়ুই কিন্তু তার পেটের মধ্যে গিয়ে ডানা ঝাপটাতে শুরু করে দিল। আর ডানা ঝাপটাতে ঝাপটাতে লোকটার মুখের মধ্যে উঠে এসে নিজের ছোটো মাথাটা বার করে চড়ুই চেঁচিয়ে উঠল, “যা করেছ তার জন্যে এবার তোমার প্রাণ যাবে, গাড়োয়ান।”
        গাড়োয়ান তখন বউয়ের হাতে কাটারিটা তুলে দিয়ে বলল, “বউ আমার মুখের মধ্যে ওটার ওপর একটা বাড়ি মার।”
        তার বউ কাটারি তুলে বাড়ি বসাল। কিন্তু তার হাত ফসকে বাড়ি পিয়ে পড়ল গাড়োয়ানের মাথায়। সঙ্গে সঙ্গে মরে সে মেঝেয় পড়ল। আর ফুড়ৎ করে উড়ে পালাল চড়ুই ৷

0 coment�rios: