কুদরত আগে নৌকা বাইত, এখন রিকশা চালায়। সেদিন সেই কথা সে এক সাহেবকে বলছিল। সাহেব তার রিকশায় উঠেছিলেন। বলছিল,আগে মাল্লা আছিলাম,অহন রিকশালা হইছি।
কুদরতের বয়স এগারো-বারো বছর। সাহেব তো ওইটুকু ছেলেকে রিকশা চালাতে দেখে অবাক। জিজ্ঞেস করেছিলেন, খোকা, তোর বয়েস কত?
সে বলেছে, ক্যান, এগারো-বারো বছর হইব।
কুদরত তখন সবচেয়ে সহজ উত্তরটাই দিয়েছিল। বলেছিল, দ্যাখতাছেন এই বয়সে মানষে রিকশা চালায়, তয় কন, এই বয়সে কেউ রিকশা চালায় নাকি!
মোটা সাহেবটি সে-দিন হো হো করে একপেট হেসে চুপ মেরে গিয়েছিলেন, আর কোনো কথা বলেন নি। শুধু বলেছিলেন, বাপু, অ্যাকসিডেন্ট ঘটিয়ে বসিস নি যেন—বড় জরুরী কাজে বাড়ির বার হয়েছি।
কুদরত ভাবে, ওই এক কথা পেয়েছে শহরের সাহেবরা। বড় জরুরী কাজে বাড়ির বার হয়েছি। সবাই জরুরী কাজে বাড়ির বার হয়েছে, কেবল এই কুদরত ছাড়া গায়ে হাওয়া লাগাবার জন্যে রিকশা নিয়ে পথে নেমেছে। তার ইচ্ছা হয় সাহেবদের ভালো করে দু-কথা শুনিয়ে দেয়। শুনিয়ে দেয়, সেও কম ঠেলায় পড়ে রাস্তায় নামে নি, হ্যাঁ। ইচ্ছা হয়, প্রত্যেকটা সাহেবকে সে এক এক করে শুনিয়ে দেয় তার সেই কাহিনী। শুনিয়ে দেয় কেন সে গ্রাম ছেড়ে শহরে এল— শুনিয়ে দেয়, ছিল নৌকার মাঝি, কেন রিকশাওয়ালা হলো।
কিন্তু সে চুপ করেই থাকে, সে কাহিনী আর কাউকে শোনায় না। শহরের মানুষ কে কার কথা শোনে।
যাই হোক, সেই সাহেব তবু লোক ভালোই ছিলেন। রিকশা থেকে নেমে পুরো আধুলিটাই কুদরতের হাতে তুলে দিয়েছিলেন। কিন্তু বেশির ভাগ সাহেব তো তাকে নাবালক পেয়ে ন্যায্য ভাড়াটাও দিতে চান না। শুধু তাই নয়, কত আজব রকমের সব কথা যে তারা খয়রাত করে যান। কেউ বলেন, এতটুকু ছোড়া, অত পয়সা দিয়ে করবি কী রে, অ্যাঁ? কেউ বলেন, বাছা, পয়সা দিয়ে তো সিগারেটই ফুকবি আর জুয়ো খেলবি। কেউ আবার অবাক হয়ে বলেন, একজন বড় মানুষ যা চায় তুইও যে দেখছি তাই চাইছিস খোকা?
এক সাহেব তো রিকশায় চড়ে সুরু করলেনঃ এই, তোর বয়েস কত রে? প্যাডেলে তোর পা-ই ঠেকে না, আর রিকশা নিয়ে বেরিয়েছিস যে বড়? আবার দ্যাখো না, রিকশাখানাকে ছোটাচ্ছে কী রকম। বলি, এই ছোড়া, অ্যাকসিডেন্ট করবি নাকি রে—অ্যাঁ?
তাই শুনে কুদরত ছুটন্ত রিকশার আসনে বসে কোমর বেঁকিয়ে মুখ ঘুরিয়ে বলেছিল, এইডি আমার ময়ুরপঙ্খী নাও।
কিন্তু সেই সাহেব তার গন্তব্যে পৌছে রিকশা থেকে নেমে ভাড়া দেয়ার বেলায় দিচ্ছেন কত? না আট আনার জায়গায় চার আনা পয়সা। সে অবাক হয়ে বলে, কী দ্যান সা’ব?
সাহেব বলেন, ক্যান, যা ভাড়া তাই দি? চাইর আনা কি ভাড়া অইল সা’ব? কই কোন হালায় রিকশালা আপনেরে আমতলি থিকা বেলতলি চাইর আনায় লয় তাই জিগান দেহি কেউরে?
সাহেব তখন বলেন, হোনো আজব কথা। হ্যাঁ রে, তরে আবার রিকশালা কইব কোন হালায়—তুই হলি গিয়া রিকশালার ছাও। তর বাপরে যেই ভাড়া দেওন লাগত হেই ভাড়া তুই তরে দিবার কস?
কুদরত তখন বলেছিল, সাহেব, এইডা কি একডা কথা অইল? আপনে ইমান থেক্যা কন, আমি কি বেশী সময় লাগাইছি, না আপনেরে কষ্ট দিছি, না—
সাহেব বাঁধা দিয়ে বলেন, দ্যাখ, মানুষের ইমান লইয়া কথা কইস না। আমার ইমান ঠিকেই রইছে। ল, আর এক আনা ল।
আর এক আনা পয়সা দিয়ে তিনি গট্গটিয়ে চলে গিয়েছিলেন। কুদরত আর কী করে, তার ঘামে-ভেজা কপাল, ঘাড় আর কচি গাল দুটো গামছায় মুছতে মুছতে সাহেবের চলে যাওয়ার পানে তাকিয়ে থেকেছে। রাত্রির অন্ধকারে মুরগির ঘাড় মটকে ধরে শিয়াল যেভাবে পালায়, তিনি তখন সেইভাবে পালাচ্ছিলেন। কিন্তু তখন আকাশে মাটিতে কড়া রোদ্দুর। সেই কড়া রোদুরে গা ডুবিয়ে বেলা এগারোটার তপ্ত ধোয়াটে আকাশের দিকে মুখ করে কুদরত শুধু বলেছিল, আল্লা, আমারে জলদি সেয়ানা কর—আমারে জলদি বড় কর!
এখন তার রিকশায় যাচ্ছেন এক ‘ম্যাম-সা’ব। এই মেম-সাহেবদের কুদরত বড় ভালোবাসে। তারা তার মা-বহিন-তুল্য। তাদের সে ভালোবাসে এইজন্যে যে তারা বড় কম কথা বলেন। এইটুকু ছেলেকে রিকশা টানতে দেখে শুধু মুখে চুক্ৰ চুক্ৰ শব্দ করেন, কোনো কথা বলেন না। মনে দুঃখ পান বলেই মুখে কথা ফোটে না। এবং রিকশা থেকে নেমে ঠিক ভাড়াটি দেন। এইজন্যেই তাদের কুদরত বড় ভালোবাসে। ভালো লাগার আরো একটা কারণ—আহা, তারা সুন্দর সেজেগুজে থাকেন। যেমন তাদের মন সুন্দর, তেমনি বসনভূষণ সুন্দর। তারা চুলে পরেন ফুল, সঙ্গে সুবাস বয়ে আনেন। ছোটো-চাচার কাছে সেই যে ফুলপরীর গল্প শুনেছিল, সেই ফুলপরীরাই তো তার রিকশায় এসে ওঠে। যদি একটি গাছের ছায়ায়, কি পথের মোড়ে, কি বাড়ির দরজায় কোনো মেম-সাহেবকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এদিক ওদিক তাকাতে দেখে, আমনি সে রিকশা নিয়ে ছুটে যায় হাওয়ার বেগে। বলে, ‘আহেন আম্মা—কই যাইবেন? এই হলো তার স্বভাব।
আর তিনি রিকশায় উঠে বসলে তখন কুদরতের গায়ে একগুণ বল দিগুণ হয়, হ্যান্ডেলের উপর দুই মুঠি যেন বজ্র-মুঠি হয়ে ওঠে, প্যাডেলের উপর পা-দুটিতে তখন তার অসম্ভব শক্তি। সে তখন ঝনঝনিয়ে ঘন্টি বাজিয়ে গান পর্যন্ত ধরেঃ
ওরে ও রে আমার ময়ুরপঙ্খী নাও !
মেমসাহেবদের নিয়ে রিকশা ছোটাতে তার ভারি ভালো লাগে তার কারণ তারা তার রিকশায় চড়লে তার অকারণ বু-জানের কথা মনে হয়। মনে হয়, বু-জানই বা চড়েছে তার রিকশায়।
হায় বু-জান কখনো তার রিকশায় চড়ে না। কত সাধ তাকে রিকশায় চড়াবে। কিন্তু বু-জান শুনলেই আঁৎকে উঠে জিভ কেটে বলে, হায়, এইডা তুই কেমন কথা কস। তুই আমার পরানের ভাই—তর রিকশায় আমি চড়মু। তর রিকশায় চড়নও যা তর মাথায় পারা দেওনও তা।
তাই শুনে কুদরত হাসে। মনে মনে বলে, বু-জান এতকাল শহরে থাকলে কী হবে, তার গায়ের এখনো গাঁয়ের গন্ধ যাইতে দেরি আছে।
অথচ কুদরত নৌকার বৈঠা ছেড়ে রিকশার হাতল ধরেছে বু-জানেরই জন্যে। বা-জান বড় শখ করে বু-জানের বিয়ে দিয়েছিল শহরে। স্বামী তার চাকরি করত কারখানায়—তেজগাঁয়। তের’শ ছিয়াত্তরের বৈশাখের ঝড়ে কারখানার বিরাট বাড়ির নিচে চাপা পড়ে সে মারা গেল। খবর পেয়ে বাপ-বেটা দুজনেই শহরে ছুটে এসেছিল। বু-জান তখন তিনটি ছোটো ছেলেমেয়েকে দুই হাতে আঁকড়ে ধরে বুক চাপড়ে কাঁদছে। কুদরত দুই হাতে চোখের পানি মুছতে মুছতে বলেছিল, বু-জান, চলো—গেরামে চলো। শহরে আর থাওনের কাম নাই।
কিন্তু বা-জান বলেছিল, বা-জান, তোর বইন গেরামে গিয়া খাইত কীডা, হেই কথাডা আগে চিন্তা করিস। আমাগোরই দিন চলে না—আমরাই শহরে আইয়া ভিখ মাইগ্যা প্যাট চালানের কথা ভাবতা আছি।
কুদরত তখন বলেছিল, তাইলে বা-জান,তুমি যাও গিয়া। আমি আর গেরামে ফিরতাম না—বু-জানের লগে থাকতাম।
বা-জান বলেছিল, এহানে তুই কী করতিস বা-জান?
কুদরত বলেছিল, সাহেবগো বাড়ি কাম করতাম—ক্যান আমাগো রশিদ-ভাই আর তার বইন লতিফন যেই কাম করে।
বা-জান বলেছিল, এতগুলি মানষের হেতে প্যাট ভরত না রে বা-জান। সে কথা ঠিক ! সাহেবদের বাড়ি চাকর-নফরের কাজ করে কেবল নিজের পেটটাই চলে, অন্যের পেট চালানো যায় না। তাই কুদরত শেষ পর্যন্ত রিকশা চালানোর কাজ নিয়েছে। রিকশা চালানোর তার বয়স হয়নি। রিকশার সীটে বসলে প্যাডেলে পা-ই ঠেকে না। সীট ছেড়ে রডে বসে কোমর বেঁকিয়ে কোনো রকমে প্যাডেল ঘোরাতে হয়। কোনো রিকশার মালিক তার হাতে রিকশা ছাড়তেই চায় না। শেষ পর্যন্ত হাতে-পায়ে ধরে একজনকে রাজি করিয়েছে। সে-দিন এক ভদ্রলোক তার রিকশায় চড়ে বলেছিলেন, তোদের রিকশা চালাতে দেয় কে তাই ভাবি। হ্যাঁ রে, এই বয়েসে রিকশা টানিস, লাজ-রোগে যে মরবি!
কুদরত বাই বাই করে রিকশা ছোটাতে ছোটাতে বলেছিল, কী যে কন সাব—মরমু ক্যা? আমরা যদি মরি, আপনাগোরে চালাইত কেডায়? আপনেরা আমাগো পায়ে চলেন কিনা কন?
হ্যাঁ, যে কথা বলতে গিয়ে এত কথা-—মেমসাহেবরা তার রিকশা কেরায়া নিলে তার বড় আনন্দ হয়। কিন্তু তার চেয়েও আনন্দ হয় ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা তার রিকশায় চড়লে।
ছোটো ছোটো ছেলেমেয়েরা তার রিকশায় চড়লে কুদরতের কী যে ভালো লাগে। ছোটো ছোটো ছেলেমেয়েগুলিই শুধু কুদরতকে মানুষ বলে গণ্য করে। আর তাদের মনে ভয়-ডরও কম। বড়রা যদি রিকশায় চড়ল তো কত রকমের কথা। এই আস্তে চালা, সাবধানে চালা—অ্যাকসিডেন্ট করিস না বাছা—এই যে দ্যাখো, লাগাল বুঝি ধাক্কা। এমনি যত প্যানপ্যাননি। সব ছাগলের বাচ্চা।
কিন্তু কুদরত কখনো কোথাও ধাক্কা লাগায় না। ধরো, রিকশায় বসে হঠাৎ সামনে একেবারে চোখের উপর বিরাট ট্রাক দেখে সাহেব হয়তো আঁৎকে উঠলেন। কিন্তু তখন কুদরত তাদের গায়ের সেই কার্তিক মাসের ছোটো নদীটিতে স্বচ্ছ স্রোতে চিকন মউরালা মাছটির মতন সাৎ করে রাজপথের কল্লোলে ঠিকই ঢাউস ট্রাকটিকে পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে গেছে। তার একটু বুক কাঁপে নি।�
কিন্তু বাচ্চা মানুষদের অমন ভয়-ডর নাই। তারা হই হই করে উঠবে রিকশায়। উঠে কেউ বসল, কেউ বসল না—আমনি তাড়া লাগাবেঃ রিকশাওয়ালা, জোরে চালাও, জোরে—আরো জোরে।
তাছাড়া, ফুটফুটে বাচ্চা মানুষগুলি রিকশায় চড়লে কুদরতের তার রিকশাকে আর রিকশা বলে মনে হয় না, মনে হয়, সে ডোঙা বোঝাই ফুল নিয়ে যাচ্ছে—পদ্মফুল—লাল সাদা তাজা উজ্জ্বল পদ্মফুল। তাদের গায়ের পদ্ম-বিলে কত পদ্ম। সেখানে ডোঙায় করে মাছ ধরতে গিয়ে সে তো শুধু মাছ নিয়ে আসে না, মাছের সঙ্গে পদ্ম আনে ডোঙা বোঝাই করে।
কুদরত তাই স্কুলের ছুটির সময় স্কুলের ধারে-কাছে থাকে। ছুটির ঘন্টা পড়লে ওরা গেট পেরিয়ে বাঁধ-ভাঙা পানির মতো ছুটে আসে। তাদের মধ্যে দু-তিন জন বাচ্চা মানুষ যখন ব্যাগ-হাতে পড়ি-মরি করে ছুটে এসে তার রিকশায় ওঠে, তার গর্বের অন্ত থাকে না। সে তখন রাজপথের জনস্রোত আর গাড়ি-ঘোড়ার ভিড়ের দিকে নজর ফেলে কল্পনা করে, সে জবর মাল্লা। খ্যাপা গাঙের খরস্রোতে শক্ত হাতে বৈঠা বেয়ে তাকে যাত্রী পার করতে হবে—নিরাপদ ঠিকানায় পৌছে দিতে হবে তাকে। ঘাম চকচকে শরীরে গায়ের সকল বল একত্রিত করে সে ক্রিং ক্রিং ঘন্টা বাজিয়ে রিকশা নিয়ে রাজপথের স্রোতে নেমে পড়ে। খানিকক্ষণ গাড়িটাকে হাতে টেনে তারপর প্যাডেলে পা রেখে লাফিয়ে উঠে গান ধরেঃ হুশিয়ার ! হুশিয়ার ! ও মাঝি রে— আজি ঝড় তুফানে চালাও তরী।হুশিয়ার! হুশিয়ার !
সে-দিন সকালবেলা দুই সাহেব তার মেজাজটাকে খারাপ করে দিলেন। খালি গায়ে সকালবেলার ফুরফুরে হাওয়া লাগিয়ে গান গাইতে গাইতে সে রিকশা নিয়ে বেরিয়েছিল। বড় রাস্তার মোড়ে গিয়ে দাঁড়াতে কোথেকে দুই সাহেব এসে উঠলেন। তারা তাকে রাস্তায় রাস্তায় কম ঘোরানো ঘোরালেন না। কুদরতের ঘাম ছুটে গেল। তারপর ভাড়া দেয়ার বেলায় দেখা গেল, তারা আসলে কিপটের বাদশা। ভাড়ার পয়সা হাতে নিয়ে কুদরত বলল, এই আপনেগো ইনসাফ?
তাদের একজন বললেন, তুই ইনসাফের কী বুঝিস রে? ব’লে তারা আর দাঁড়ালেন না।
বেচারা কুদরত আর কী করে, তার মনটা তেতো হয়ে গেল। সে পেছন থেকে চীৎকার করে বলল, আমি এত বড় একখানা সংসার চালাইতেছি, আমি ইনসাফ বুঝমুনা?
কিন্তু সাহেবরা তা শুনলেন কিনা কে জানে। কুদরত লুঙির খুঁটে কপালের ঘাম মুছে খালি রিকশা নিয়ে আবার যাত্রা করল। সে আস্তে আস্তে প্যাডেল করছে। হঠাৎ দেখে, বিরাট একখানা ঘিয়া রঙের চকচকে গাড়ি রাস্তার মাঝখানে অচল হয়ে পড়ে রয়েছে। গাড়িটা নড়েও না চড়েও না। শুধু প্রথম বর্ষার কোলাব্যাঙের মতো থাবা গেড়ে বসে মাঝে-মাঝেই ঘ্যাঙর ঘ্যাঙর ডাক ছাড়ে। কিন্তু ইস্টার্ট আর নেয় না। কুদরত তাই দেখে খুব হাসতে লাগল।
রিকশা চালাতে চালাতে এই রকমের দৃশ্য দেখলে কুদরতের মজা লাগে। সে দু-একটা ইয়ারকি-ফাজলামি না করে পারেই না। গাড়িটার পাশ দিয়ে যেতে যেতে সে হাত দুলিয়ে উঁচু গলায় বলল, ও মিয়া, আপনাগো গাড়ির যে সর্দি অইছে—বুকে তইল মালিশ করন লাগব—হ।
বলে সে গান ধরেছিল, আর ফিরে তাকায় নি। তখন তাকে পিছন থেকে কারা ডাকল। কচি মিষ্টি আওয়াজে কারা কলকলিয়ে ডাকল। কুদরত পেছনে মুখ ঘুরিয়ে দেখল, দুটি বাচ্চা মেয়ে আর একটি বাচ্চা ছেলে স্কুলের পোষাক পরে বইয়ের ব্যাগ পানির বোতল হাতে গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়িয়ে আছে। তারাই তাকে হাত নেড়ে ডাকছে।
কুদরতের বুঝতে দেরি হলো না। সে ব্রেক কষে কোমর বেঁকিয়ে রিকশা থামাল। তারপর নেমে রিকশার মুখ ঘোরাল। গাড়ির কাছে রিকশা নিয়ে গিয়ে দাঁড়াল। বলল, কোন ইশকুলে যাইবেন? আহেন, ওডেন। আহা, আপনাগো গাড়ি খারাপ অইছে? তয় ডর নাই, আহেন, আমি পৌছাইয়া দিমু।
খোকা-খুকুরা কুদরতের রিকশায় উঠে খুব আনন্দে কলরব করতে লাগল। প্রতিদিন গাড়িতে করে স্কুলে গিয়ে গিয়ে তারা ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল কিনা, তাই আজ খোলা রিকশায় খোলা আকাশের নিচে হেলে দুলে ছুটতে তাদের কী যে মজা লাগছে।
কুদরত মুখ ঘুরিয়ে বলল, আপনের পন্থীরাজের কিসসা হোনেন নাই?
ওরা সমস্বরে বলল, শুনেছি শুনেছি!
আমার এই রিকশা সেই পন্থীরাজ।
খোকা-খুকুরা বলল, সত্যি সত্যি সত্যি।
তারপর ওরা হাসতে লাগল। কুদরত রিকশাওয়ালাও ওদের সঙ্গে হাসতে লাগল।
ডাউনলোড PDF : ডাউনলোড
0 coment�rios: