রাঙামুখো বানরের বাবার বিরাট কাঠের বাড়ি, বাড়ি খুব উঁচু, গাছের মাথার সমান। সামনে-পিছনে এদিকে-ওদিকে অনেকটা বাগান। কত গাছ সেই বাগানে।
একদিন বানর বনের পথে রওনা দিল। বাড়িতে বলে গেল, তার ফিরতে দেরি হবে, খুব জরুরি কাজে সে বেরুচ্ছে। তার হাতে এক বিরাট চামড়ার থলে। তার মধ্যে রয়েছে খুব সুমিষ্ট মদ। বানর চলেছে, পিঠে ঝুলছে মদের থলে।
বন ক্রমশ ঘন হচ্ছে। পাহাড়ও এগিয়ে আসছে। পাহাড়ি বনে রাঙামুখো বানর গুনগুন করে গান করতে করতে হাঁটছে। অনেক দূর এসে সে একটা গাছের তলায় বসল।
এমন সময় দেখে পাশের ঝরনায় তিনটে গোরু জল খাচ্ছে। তাকে দেখেই গোরুগুলো পালাতে চেষ্টা করল। পালাতে দেখেই বানর বলল, “বন্ধু, তোমরা পালাচ্ছ কেন? আমি তো তোমাদের বন্ধু! আমায় ভয় কি? আমার বড্ড তেষ্টা পেয়েছে, আমাকে একটু জল দেবে? গোরুগুলো বুনো, তারা সরল। তার ওপরে একজন জল খেতে চেয়েছে, জল না দিলে যে বড় অন্যায় হবে। তাই আর না পালিয়ে তারা বানরকে জল দিয়ে বলল, “তুমি তো আমাদের মতো দেখতে না, তাই আমরা ভয় পেয়েছিলাম।অল্প একটু জল খেয়েই মুখ বেঁকিয়ে বানর বলল, “ইস, তোমরা এই জল খাও? এ তো একটুও মিষ্টি নয়! এসো, আমার জল খেয়ে দেখ।
গোরুরা অবাক হল। জল আবার অন্যরকম হয় নাকি! বানরের দেওয়া জল খেয়ে তারা আরও অবাক হল। এত সুন্দর, এত মিষ্টি ! দেহমন ভরে গেল। তারা ঠোঁট-জিভ চাটতে লাগল।
বানর বলল, “কি, বলিনি? আমার জল মিষ্টি না? গোরুরা স্বীকার করল। বানর তাদের আর একবার তার জল খেতে দিল। গোরুরা খাচ্ছে, আমেজে তাদের চোখ বুজে আসছে।
এই সময় বানর বলল, “তোমরা আমার ভাই, আমার বন্ধু। চলো না আমাদের বাড়ি, সেখানে এমন মিষ্টি জলের নদী রয়েছে। কত খাবে? চলো না আমার সঙ্গে।
গোরুরা তো সরল, অতশত বোঝে না তারা। বানরের পেছন পেছন রওনা দিল। যেতে যেতে বানর বলল, ‘একটা কথা, আমার বাবা খুব বদরাগী। তা সে কিছু না। তোমাদের দুচার কথা বললেও কানে তুলো না। কিছু করলেও চুপ করে থেকো। দুদিন পরেই ঠিক সয়ে যাবে। ওরকম তো হয়ই।
গোরুরা ভয় পেল, আবার অভয়ও পেল। তারা বন পেরিয়ে এগোতে লাগল। বিরাট বাগানের কাঠের দরজা পেরিয়ে চারজন ঢুকল। গোরুদের দাঁড়াতে বলে বানর বাড়ির মধ্যে চলে গেল।
একটু পরে তিনজন রাঙামুখো বানর বেরিয়ে এল। তাদের হাতে বুনো গাছের লম্বা মোটা লতার দড়ি। তিনজন চলে এল গোরুদের কাছে। তাদের গলায় দডির ফাস পরিয়ে দিল। তরপরে বেরিয়ে এল তাদের বন্ধু বানর।
গোরুরা বলল, “বন্ধু, গলায় লতার দড়ি কেন?
বানর বলল, ‘ও কিছু নয়। তোমাদের তো বলেছি, বাবা বদরাগী, ওরকম একটু হবেই। সব ঠিক হয়ে যাবে।
গোরুরা বিশ্বাস করল। তাদের টেনে নিয়ে যাওয়া হল বাড়ির পেছনে ভাঙাচোরা একটা ঘরে। বিরাট মোটা কাঠের সঙ্গে তাদের বেঁধে রাখা হল।
একদিন যায়, দুদিন যায়, বানর আর আসে না। তাদের খেতে দেওয়া হয় দুর্গন্ধ খাবার। কোথায় গেল সেই মিষ্টি জলের নদী? গোরুরা ভাবে, গলার দড়ি দেখে অবাক হয়। জীবনে তো কাউকে তারা দড়ি বাধা দেখে নি। কোথায় গেল বানর? এইসব তারা ভাবে।
বেশ কয়েকদিন কেটে যাবার পরে একদিন ভোরবেলা বানর এল। তার হাতে লম্বা মতন একটা দড়ি। বানর এসে বলল, “তোমরা তো এখন থেকে এখানেই থাকবে। তা শোনো, খাওয়া-দাওয়ার কোন চিত্তা নেই। এখন তোমাদের আমার সঙ্গে বনে যেতে হবে। ওখানে অনেক কাঠ কেটে সন্ধের সময় বয়ে নিয়ে আসতে হবে। এখন তাহলে গলার বাঁধন খুলে দি, কি বলো?
গোরুরা অবাক হল। এ কি সেই বানর? আমরা কি তাহলে আর কোনদিন আমাদের বাড়ি যেতে পারব না?
তারা বলল, “আমরা এখানে থাকতে চাই না। আমাদের ছেড়ে দাও, আমরা বাড়ি চলে যাব। আমাদের কাজ করেও দরকার নেই, খেয়েও কাজ নেই।
হাঃ হাঃ করে দাতঁ বের করে হাসতে লাগল বানর। হাসি থামিয়ে চোখ পাকিয়ে বলল, ‘সেটি হচ্ছে না, আর কোনদিন বাড়ি যেতে পারবে না। এখন কাজে চলো ।
যাব না, গোরুরা একসঙ্গে চেঁচিয়ে উঠল। সপাং করে চাবুক এসে পড়ল একজনের চোখে। একি? এই দড়িতে এত লাগে?
কোনদিন তো এরকম দেখিনি? আবার সপাং শব্দ...আবার...আবার। বানর চিৎকার করছে আর মারছে। এমন সময় খুব কাছে আসতেই একটা গোরু শিং দিয়ে মেরেছে এক গুতো, ছিটকে পড়ল বানর।
মাটি থেকে উঠেই বানর বেরিয়ে গেল। গোরুরা ভাবছে কি করবে। একি হল? আবার ফিরে এল বানর, তার হাতে মস্ত বড় চকচকে অস্ত্র। বানর ঢুকেই একটা গোরুর মাথায় মারল সেই অস্ত্র, বুনো তৎপর গোরু-মাথা সরিয়ে নিল। অস্ত্র লাগল কাঠে, পায়ের ওপর ঠিক থাকতে না পেরে বানর গেল পড়ে। সঙ্গে সঙ্গে প্রচণ্ড লাথি মারল একটা গোরু, ছিটকে পড়ল বানর। সে কাতরাচ্ছে।
সমস্ত শক্তি দিয়ে বাঁধন ছিড়তে চেষ্টা করল তারা। পটাং করে দড়ি গেল ছিঁড়ে। বাগানের মধ্যে দিয়ে ছুটে বেড়া ভেঙে তিনজন ছুটে চলল বনের পথে, রাঙামুখো বানরের দিকে একবারও ফিরে তাকাল না।
পাহাড়ি বনে এসে তারা হাঁফ ছাড়ল। অনেক কষ্টে অন্য গোরুরা তাদের গলাঁর দড়ি দাঁত দিয়ে কেটে দিল। সেদিন থেকে তারা সবাই সাবধান হল। রাঙামুখো বানর দেখলেই তারা আরও গভীর পাহাড়ি বনে ঢুকে পড়ত।
গল্পটি পড়া শেষ! গল্পটি কি সংগ্রহ করে রাখতে চাও? তাহলে নিচের লিঙ্ক থেকে তোমার পছন্দের গল্পটি ডাউনলোড করো আর যখন খুশি তখন পড়ো; মোবাইল, কস্পিউটারে কিংবা ট্যাবলেটে।
0 coment�rios: