খেতে না পেয়ে পেয়ে কালো শুয়োর শুকিয়ে যাচ্ছে। এক সময় কত মোটাসোটা ছিল, থলথল করত তার দেহ। আর আজ চামড়ার ওপরে হাড় দেখা যাচ্ছে, পায়ে আগের মতো জোর নেই। মনও তাই ভালো থাকে না। দিনে দিনে সব কেমন হয়ে যাচ্ছে।
তাই একদিন শুয়োর কাজের খোঁজে বেরিয়ে পড়ল। বাবা-মা বেঁচে থাকতে সে পেটের কথা চিত্তা করেনি। আজ আর সেদিন নেই। এখানে-ওখানে বহু জায়গায় শুয়োর কাজের জন্য ঘুরছে, কিন্তু কোথাও কাজ পাচ্ছে না। সবাই বলছে, আমার মাঠে কাজের জন্য লোক আছে। কিন্তু শুয়োর যে আর পারে না। তাকে যে কিছু জোগাড় করতেই হবে।
এমনি করে ঘুরতে ঘুরতে শুয়োর একদিন হাজির হল এক সাদা ইঁদুরের কাছে। ইঁদুর তাকে বলল, “তোমার তাহলে নেহাৎই কাজ দরকার। আচ্ছা, আমি তোমায় রাখব। তুমি হবে আমার চৌকিদার। রোজ রাতে তুমি আমার খামার পাহারা দেবে। মনে হচ্ছে, কেউ আমার ফসল চুরি করছে। কি, রাজি তো?
শুয়োর আস্তে আস্তে বলল, ‘হ্যাঁ রাজি। তা, কি রকম কি খেতে পরতে দেবেন? শুয়োরের মনে ভয়, যদি একথা বলাতে তার কাজ না হয়? তবু মুখ ফসকে বেরিয়ে গেল কথাগুলো। ইঁদুর মাথা নেড়ে বলল, 'আরে বাবা, কাজে তো আগে লেগেই পড়ো। যা দেব, খারাপ দেব না। আর মনে রেখো, কাজের লোকের অভাব নেই। তোমাকে সাড়ে তিন পয়সা মাইনে দেব প্রতি সপ্তাহে। থাকার জায়গাও পাবে। তবে খাওয়া-দাওয়াটা তোমার। চমকে উঠল শুয়োর। সাত দিনে মাত্র সাড়ে তিন পয়সা। এর মধ্যেই আমাকে খাওয়া-দাওয়া চালাতে হবে। তা কি করে হবে? সে কাজটা নিতে চাইল না। মাথা নাড়ল। হঠাৎ পেটের মধ্যে কেমন করে উঠল। ভাবল, তাও তো কিছু হচ্ছে, এটা না নিলে একেবারেই তো মৃত্যু। যাক, এটা পেয়ে পরে ভালোমত কিছু একটা খুঁজে নিলেই হবে। সাত দিন তো করি।
শুয়োর রাজি হয়ে গেল। কিন্তু সাত দিনের জন্য। সাদা ইদুঁর হাসল। সারা রাত জেগে শুয়োর খামার পাহারা দেয়। আগে কোনদিন রাত জাগেনি সে। আরামে ছোট ঘরে ঘুমিয়ে থাকত। আর আজ? রাতে চোখ জড়িয়ে আসে ঘুমে, সকালে চোখ লাল হয়ে থাকে, দেহ কেমন অবশ। কাজ খোঁজার আর উৎসাহ থাকে না তার। ঘুমিয়ে ঘুমিয়েই দিন কাটে। তবু রাতে সে কাজ করে চলে।
সাত দিন কেটে গেল। ইঁদুর তাকে সাড়ে তিন পয়সা দিল। শুয়োরের কান্না পেল। মাইনে নিয়ে সে বেরিয়ে এল ইঁদুরের বাড়ি থেকে। পেছনে তাকিয়ে শুয়োর দেখে, সাদা ইঁদুর হাসছে।
বাজারের দিকে গেল শুয়োর। সেখানে সে কিছু খেল। দেখা হল এক কালো কুকুরের সঙ্গে। কুকুর আপনমনে গান গাইছে,
রারাবুম রারাবুম
জেগে রই, রাত নিঝুম
রারাবুম রারাবুম
রাতে কাজ দিনে ঘুম।
গান শুনে অবাক হল শুয়োর। আরে! কালো কুকুর কি তার কথাই বলছে? তাকেই ঠাট্টা করছে? কিন্তু তা কি করে হবে? কুকুর তো তাকে চেনেই না।
গুটি গুটি শুয়োর এগোল কুকুরের কাছে। শুয়োর বলল, “বন্ধু, তুমি কি আমায় চেনো? আমার নামে তুমি গান করছ কেন?
কুকুর বলল, “তোমার নামে? কই না তো। আমি যে আমার গান গাইছি। আজ কুড়ি বছর ধরে মনিবের চৌকিদার আমি। আমি তার খামার পাহারা দি। এ গান তো আমার গান।
শুয়োর অবাক হল। কুড়ি বছর ধরে রাত জাগা ! সে বলল, “বন্ধু আমিও চৌকিদার, কিন্তু সাত দিন কাজ করে আজ ছেড়ে দিয়ে এসেছি। মাত্র সাড়ে তিন পয়সা মাইনে। চলবে কি করে বলো? তাই ছেড়ে দিলাম।
সমস্ত দেহ কাঁপিয়ে কুকুর হেসে উঠল। বলল, ‘সাড়ে তিন পয়সা। বাঃ, বেশ ভালো মাইনে বলতে হবে। আমি যখন প্রথম কাজে ঢুকি, আমার মাইনে ছিল এক পয়সা। আর তুমি প্রথমেই সাড়ে তিন পয়সা। জানো, এখন আমি মাইনে পাই পাঁচ পয়সা। কুকুর আবার গান গাইতে লাগল। হঠাৎ গান দিল থামিয়ে। রেগে গিয়ে বলল, “তুমি কাজটা ছেড়ে দিয়ে এলে? তুমি কি পাগল? যাও, এখন মরগে না খেয়ে। কে তোমায় কাজ দেবে?
শুয়োর বলল, ‘বন্ধু, পেট ভরে না, রাত জাগতে পারি না। কি করি বল?
চুপ করে রইল কালো কুকুর। একটু পরে মুখ নামিয়ে আস্তে আস্তে বলল, বন্ধু, আমারও ওই রকম হত। কিন্তু আজ সব সয়ে গিয়েছে। দিনে ঘুমোই, রাতে জাগি । আগে খুব খিদে পেত, আজ আর পায় না। আগে কত কি ভাবতাম ! এখন অবশ্য আর ভাবি না। যাও ভাই, কাজ করো, ছেড়ে দিয়ো না। কোথাও পাবে না।
আস্তে আস্তে কুকুর চলে গেল। শুয়োর দেখল, কুকুরের কোঁচকানো চোখের কোণে জল চিকচিক করছে।
শুয়োর কিছুক্ষণ ভাবল। শেষকালে রওনা দিল আগের পথে। এগিয়ে আসছে ইঁদুরের বাড়ি। কাছে আসতেই শুয়োর দেখল, সাদা ইদুর বাড়ির বাগানে দাঁড়িয়ে তার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে হাসছে।
শুয়োর খামারে ঢুকে পড়ল মাথা নিচু করে।
গল্পটি পড়া শেষ! গল্পটি কি সংগ্রহ করে রাখতে চাও? তাহলে নিচের লিঙ্ক থেকে তোমার পছন্দের গল্পটি ডাউনলোড করো আর যখন খুশি তখন পড়ো; মোবাইল, কস্পিউটারে কিংবা ট্যাবলেটে।
0 coment�rios: