অনেক অনেক কাল আগে এক ঘন জঙ্গলে বাস করত এক মস্ত শিকারি। তার নাম সুমরো। সে একা। তার বউ ছিল না, তার কোন ছেলেমেয়ে ছিল না। শুধু ছিল তির আর ধনুক। এই নিয়ে সুমরো বনের এক দিক থেকে অন্য দিকে শিকার করে বেড়াত। সে কখনও বনের বাইরে আসত না।
তীর-ধনুক বাগিয়ে সুমরো একদিন চলেছে। ধনুকে তীর লাগানোই রয়েছে, ঘাসের ওপর দিয়ে চলেছে, চোখ ওপরের গাছের দিকে। হঠাৎ সে দেখল, একটা গাছের উঁচু মগডালে বসে রয়েছে দুটো সাদা সারস পাখি। থেমে পড়ল সুমরো। আস্তে আস্তে কোন শব্দ না করে গাছের নীচে দাঁড়িয়ে পড়ল। ধনুক তুলে তাক করল। তীর ছুটে গেল ওপরে। ধপ করে পড়ে গেল একটা পাখি। পুরুষ সারস পাখি। অন্য পাখিটা ডানা ঝটপট করে নীচে তাকাল। চুপ করে বসে রইল ডালে।
সুমরো শুকনো কাঠ-পাতা এনে আগুন জ্বালাল। পাখির পালক ছড়িয়ে গোটা পাখিটাকে উলটে-পালটে ঝলসাতে লাগল। মাংস বেশ পুড়ে এসেছে। পোড়া মাংসের ধোয়া ওপরে উঠছে। সুমরো বেশ খুশি। ওপরে সারসের বউ তার স্বামীর মাংসের পোড়া গন্ধ পেল, ধোঁয়া এসে নাকে ঢুকল। ডাল থেকে আলগা হয়ে গেল তার পা, সে ধপ করে আছড়ে পড়ল আগুনের মধ্যে। আগুনে পড়ে ঝলসে সারস-বউ মরে গেল।
সুমরো চমকে উঠল। সে মুগ্ধ হল। তার চোখের পাতা ভিজে এল। স্বামীর প্রতি এত গভীর ভালোবাসা! এরকম প্রেমিক-যুগল সে আগে কখনও দেখেনি। সে ঝলসানো পাখিটাকে খেল না। আগুন থেকে দুটো পাখিকে হাতে তুলে নিল।
ওপর দিকে পাখি-দুটোকে তুলে ধরে সুমরো বিড়বিড় করে বলল, “তোমরা দূর আকাশে চলে যাও। সেখানে সুখে বাস করো। তোমরা হবে আকাশের সবচেয়ে উজ্জ্বল দুই তারা, পাশাপাশি থাকবে। তোমাদের সুখি সংসারে আসবে অসংখ্য সন্তান, তারা আকাশ ছেয়ে ফেলবে। এই মাটির পৃথিবীতে তোমাদের দেহ ছিল সাদা ধবধবে ও পরিষ্কার। দূর আকাশে তোমরা হবে আরও উজ্জ্বল। এখানকার সব মানুষ তোমাদের দেখবে আর প্রশংসা করবে। যাও তোমরা দূর আকাশে ।
এমনি করেই আকাশ হল তারায় ভরা। সবচেয়ে উজ্জ্বল তারা দুটি এল প্রথমে, তারপরে তাদের ছেলেমেয়ে অন্য সব তারা।
0 coment�rios: