বৃদ্ধ উজির খুব সকালে রাজ প্রাসাদে উপস্থিত হলেন। তার মন দুঃখে ভরে ছিল। কেননা প্রতিদিন সকালে রাজ দরবারে এসেই বাদশা তার বেগম হত্যার খবর ঘোষনা করেন। কিন্তু বাদশা আজ তেমন কিছুই বললেন না। বৃদ্ধ উজিড় অবাক হয়ে ভাবলেন, ‘তাহলে কি আমার মেয়ে বেঁচে আছে?’ কিন্তু তিনি বাদশাকে বলার সাহস পেলেন না।
বাদশা শারিয়ার সারাাদিন রাজ দরবারের কাজে ব্যস্ত থাকলেন। তারপর সূর্য ডুবতেই সব কাজ ফেলে প্রাসাদের মধ্যে এসে শাহরাজাদকে বললেন, বেগম, তোমার গল্প শুরু কর। তোমার গল্প শুধু তোমার বোনেরই ভাল লাগেনি, আমারও ভাল লেগেছে।
বেগম শাহরাজাদ বলতে শুরু করল,--‘বাছুরটার আচরণে বুনো ছাগলের মালিকের মন গলে গেল। সে তার চাকরকে বলল, ‘বাছুরটাকে গোয়ালে বেঁধে রেখে, অন্য একটি গরু কিনে নিয়ে আয়।’ চাকরটা মালিকের আদেশ পেয়ে আবার হাটের দিকে ছুটল।
হঠাৎ দৈত্যটা গল্পের মধ্যে বলে উঠল,--‘ এ কী আজব গল্পরে বাবা! শুনতে শুনতে দম বন্ধ হয়ে আসছে!’
বুনো ছাগলের মালিক আবার কাহিনী বলতে লাগল--‘আমার বিবি একটু দূরেই দাঁড়িয়ে ছিল। যখন সে শুনল আমি বাছুরটাকে কোরবানি দেব না তখন সে আমাকে জোর করতে লাগল সেই বাছুরটাকেই কোরবানি দেবার জন্য। কিন্তু আমার মন তাতে সাড়া দিল না। এভাবে সেই দিন চলে গেল।
পরেরদিনের কথা। আমার চাকর খুব সকালে এসে আমাকে বলল,--‘হুজুর একটা আজব ঘটনা ঘটেছে। কাল যে বাছুরটা আমাকে গোয়ালে রাখতে বলেছিলেন সে বাছুরটা আর কেউ নয়, সে আপনার ছেলে।আমার মেয়ে এক বুড়ির কাছে থেকে যাদুবিদ্যা শিখেছিল। আমি বাড়ির মধ্যে বাছুরটাকে নিয়ে যাওয়া মাত্রই সে ঘরের মধ্যে দৌড় দিল। আমি অবাক হলাম ভেবে যে, সেখানে আর কোন পরপুরুষ ছিল না যার জন্য আমার মেয়ে ঘরে মধ্যে দৌড় দেবে। আমি তাকে ঘরের মধ্যে গিয়ে তার দৌড়ে আসার কারন জিজ্ঞাসা করলাম। উত্তরে সে বলল, আমি যে বাছুরটাকে বাড়ির মধ্যে এনেছি সে আসলে কোন বাছুর নয়, সে আপনার ছেলে। আর গতকাল যে গাভীটাকে জবাই করা হল, সে আসলে আর কেউ নন, তিনি আপনার দ্বিতীয় বিবি। আপনার ছেলের মা। আপনার প্রথম বিবি তাদের যাদু বলে পশু করে দিয়েছে।
এই কথা শুনে আমি প্রথমে বিশ্বাস করতে পারলাম না। তবুও আমি চাকরের সাথে তার বাড়িতে গেলাম। গিয়ে আমি আবার আমার চাকরের মেয়ের মুখ থেকে সব ঘটনা শুনলাম। সব কথা শুনে আমার মন কেঁদে উঠল। তখন চাকরের মেয়ে বলল, হুজুর আমি আপনার ছেলেকে ফিরিয়ে দিতে পারি দুই শর্তে। যদি শর্ত দুটি মানেন তবে আমি আপনার ছেলেকে ফিরিয়ে দেব।
আমি বললাম,--‘ কী সে শর্ত?’
মেয়েটি বলল,--‘ আমার প্রথম শর্ত হল আপনার ছেলের সাথে আমার বিয়ে দিতে হবে আর দ্বিতীয় শর্ত হল আমি আপনার বিবিকে আমার ইচ্ছামত পশুতে পরিনত করব।
শর্তের কথা শুনে আমার মনটা ভেঙে গেলেও ছেলের কথা ভেবে আমি রাজি হলাম। তখন চাকরের মেয়ে ঘরের মধ্য থেকে একটা পিতলের গামলা নিয়ে এল। সেই গামলাতে কিছু পানি নিয়ে মুখ দিয়ে কি যেন বিরবির করে বলল। তারপর সবটুকু পানি বাছুরটার উপরে ছিটিয়ে দিল। হে দৈত্য, আমার চোখের সামনে বাছুরটা আমার ছেলেতে পরিনত হল। আমি তাকে কাঁদতে কাঁদতে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরলাম।
আমি আমার কথা মত, সেই রাতেই ছেলের সাথে চাকরের মেয়ের বিয়ে দিলাম। আর মেয়েটা তার দ্বিতীয় শর্তমতে আমার বিবিটাকে ছাগল করে দিল।
আমি বাড়ি এসে ছেলের হাতে ঘরবাড়ি জমিজমা সব বুঝিয়ে দিয়ে এই ছাগলটাকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। আজ ত্রিশ বছর হল আমি একে নিয়ে ঘুরছি।
ঘুরতে ঘুরতে এই পথ দিয়েই যাচ্ছিলাম। এই সওদাগরকে কাঁদতে দেখে আমার খুব কৌতুহল হল। আমি সওদাগরের কাছে সব ঘটনা শুনলাম। কিন্তু এর শেষ দেখার জন্য আমি থেকে গেলাম।
আফ্রিদি দৈত্য এবার আনন্দে আত্মহারা হয়ে বলল, ‘তোমার কাহিনী আমার ভাল লেগেছে। আমি খুব খুশি হয়েছি। আমি সওদাগরের অপরাধের তিনভাগের একভাগ মাফ করে দিলাম।
0 coment�rios: