এক চাষীর দুইটি গাধা ছিল। তাহারা একসঙ্গে মাঠে চরিয়া খাইত। মাঝে মাঝে একসঙ্গেই গান সাধিত। দুই জনের ভারি ভাব।
অবস্থা খারাপ হইলে চাষী গাধা দুইটি বেঁচিতে হাটে লইয়া আসিল । একটি গাধা কিনিল এক ধোপা। অপরটি কিনিল এক সার্কাসওয়ালা। সার্কাসওয়ালা গাধাটি লইয়া দেশে বিদেশে সার্কাস দেখাইতে চলিল। ধোপার গাধা দেশেই রহিল।
এক বৎসর পরে সার্কাসের দল দেশে ফিরিয়া আসিল - ধোপার গাধার সঙ্গে সার্কাসের গাধার আবার দেখা হইল। এতদিন পরে দুইজনে দুইজনকে দেখিয়া ভারি খুশী।
সার্কাসের গাধা ধোপার গাধাকে জিজ্ঞাসা করিল, “কেমন আছ ভাই ?" ধোপার গাধা বলিল, "আরে ভাই! আমি ধোপার বাড়িতে বেশ সুখে আছি। দু'বেলা জাব, খইল আর ইচ্ছামতো ঘাস খাই। ধোপার বাড়িতে বেশি কাজ নাই। সকালে কাপড়ের বোঝা লইয়া নদীর ঘাটে যাই। সেখানে বোঝা নামাইয়া দিয়া এখানে সেখানে ঘাস খাইয়া বেড়াই। আর মনের আনন্দে গান গাই। বিকাল হইলে কাপড়ের বোঝা পিঠে লইয়া বাড়ি ফিরি। তারপর মহাভোজ। দেখিতেছ না, আমার শরীর কেমন নাদুসনুদুস হইয়াছে। আচ্ছা ভাই! তোমাকে এমন শুকনা দেখাইতেছে যে?"সার্কাসের গাধা বলিল, “সেকথা আর জিজ্ঞাসা করিও না ভাই। সার্কাসের লোকেরা ভালোমতো খাইতে দেয় না। তাহাদের যত মালপত্র আমার পিঠে চাপাইয়া এদেশে সেদেশে যাইতে হয়। ভালোমতো খাইতে পাই না। দিনে দিনে আমি কমজোর হইয়া পড়িতেছি।"
ধোপার গাধা বলিল, “আচ্ছা ভাই। তুমি এই সার্কাসের দল ছাড়িয়া ধোপার বাড়িতে চলিয়া আসিলেই পার। এখানে কিছুদিন থাকিলে আমার মতোই তুমি খাইয়া দাইয়া নাদুসনুদুস হইবে।”
সার্কাসের গাধা বলিল, “কতবারই তো ভাবি তাহাই করিব। কিন্তু একটি আশায় সার্কাস দল ছাড়িতে পারি না।" ধোপার গাধা জিজ্ঞাসা করিল, “কি আশায় ভাই?"
সার্কাসের গাধা উত্তর করিল, “আমাদের সার্কাসওয়ালার মেয়েটি যখন দড়ির উপর উঠিয়া নাচিতে আরম্ভ করে তখন সার্কাসওয়ালা মেয়েটিকে বলে, “দেখ, যদি তুই দড়ির উপর হইতে পড়িয়া যাইবি, এই গাধার সঙ্গে তোর বিবাহ দিব।”
সেই আশায় না খাইয়া নানা দুঃখকষ্ট সহিয়াও সার্কাসের দল ছাড়িতে পারি না। কিন্তু ভাই! এই এক বৎসরের মধ্যে একবারও সে দড়ি হইতে পড়িল না। যদি কোনো সময় মেয়েটি দড়ি হইতে পড়িয়া যায় সেই আশারয়ই সার্কাসের দল ছাড়িতে পরিতেছি না।"
এরূপ মিথ্যা আশার লোভে বোকা লোকেরা বহু নির্যাতন ও অসুবিধা সহ্য করে।
0 coment�rios: