Home Top Ad

Responsive Ads Here

Search This Blog

        এক সময় ক্ল্যাব নামে ছিল গরিব এক চাষী। একদিন দুটো বলদে-টানা গাড়িতে শহরে কাঠ নিয়ে গিয়ে ছ শিলিং দিয়ে এক ডাক্তারকে সেটা সে বিক্রি...

ডাক্তার সবজান্তা - জার্মানের রূপকথা

        এক সময় ক্ল্যাব নামে ছিল গরিব এক চাষী। একদিন দুটো বলদে-টানা গাড়িতে শহরে কাঠ নিয়ে গিয়ে ছ শিলিং দিয়ে এক ডাক্তারকে সেটা সে বিক্রি করল। যখন তাকে দাম চুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে সে দেখল খুব ভালো-ভালো খাবার-দাবার নিয়ে ডাক্তার বসেছে খেতে। তাই তার খুব সাধ হল ডাক্তার হবার। সেখানে খানিক ঘুরঘুর করার পর ডাক্তারকে চাষী প্রশ্ন করল, সে-ও ডাক্তার হতে পারে কি না।
        ডাক্তার বলল, “নিশ্চয়ই। এটা আর এমন শক্ত কাজ কী।”
        চাষী প্রশ্ন করল, “কী-কী আমায় করতে হবে?”
        “প্রথমে একটা অ আ ক খ’র বই কিনো। সেটায় যেন থাকে, ‘অ-য়ে অজগর আসছে তেড়ে। তার পর তোমার গাড়ি আর বলদ দুটো বিক্রি করে কিনো ভালো পোশাক-আশাক আর ডাক্তারি করার জন্যে যাবতীয় জিনিসপত্র। তার পর একটা সাইনবোর্ডে লিখিয়ে নিয়ো “আমি ডাক্তার সবজান্তা’ আর সেটা পেরেক দিয়ে সেঁটে দিয়ো তোমার বাড়ির দরজার ওপর।”
        ফিরে গিয়ে ডাক্তারের কথামতো সব-কিছুই চাষী করল। কিছুদিন ডাক্তারি করার পর এক ধনী জমিদারের চুরি গেল কিছু টাকাকড়ি। ডাক্তার সবজান্তার কথা জমিদার শুনেছিলেন। শুনেছিলেন এই ডাক্তার সবজান্তা সঠিকভাবে বলে দিতে পারবে তার টাকাকড়ির খবর। তাই জমিদার গাড়ি হাঁকিয়ে চাষীর বাড়িতে হাজির হয়ে প্রশ্ন করলেন, সে ডাক্তার সবজান্তা কি না।
        চাষী বলল, “হ্যাঁ।”
        জমিদার বললেন, “তা হলে আমার সঙ্গে গিয়ে টাকাকড়ি উদ্ধার - করে দাও।”
        চাষী বলল, “আমার বউ মার্জারিও আমার সঙ্গে আসবে।” তাতে জমিদারের আপত্তি ছিল না। তাদের দুজনকে জুড়িগাড়িতে তুলে তিনি এলেন নিজের প্রাসাদে। সেখানে তখন ডিনারের জন্য টেবিল সাজানো হয়েছিল। জমিদার তাকে খেতে আমন্ত্রণ করলেন। চাষী বলল, “আমার বউ মার্জারিও কিন্তু আমার সঙ্গে খেতে বসবে।” জমিদারের আপত্তি হল না। তারা দুজনেই খাবার টেবিলের সামনে গিয়ে বসল।
        প্রথম ভৃত্য সুস্বাদু মাংসের ডিশ নিয়ে এলে চাষী তার স্ত্রীকে কনুইয়ের খোঁচা দিয়ে বলল, “মার্জারি, এ হল পয়লা নম্বর।” সে বোঝাতে চেয়েছিল সেই ভৃত্য টেবিলে প্রথম ডিশ এনেছে। কিন্তু ভৃত্য ভাবল, চাষী বলতে চাইছে যে, সে হচ্ছে চোরদের মধ্যে এক নম্বর। আর বাস্তবিকই চোরদের দলে ছিল বলে ভীষণ ভয় পেয়ে বাইরে গিয়ে তার সঙ্গীদের সে বলল, “আমাদের দফা রফা। ডাক্তার সব-কিছু জানে। সে বলেছে আমি হলাম পয়লা নম্বর।”
        দ্বিতীয় ভৃত্যের ভিতরে যাবার একেবারেই ইচ্ছে ছিল না। কিন্তু যেতে সে বাধ্য হল। খাবারের ডিশ নিয়ে সে আসতে চাষী তার স্ত্রীকে কনুইয়ের খোঁচা দিয়ে বলল, “মার্জারি, এই হল দ্বিতীয়।”
        প্রথমজনের মতো সেই ভূত্যও ভীষণ ভয় পেয়ে চটপট ঘর থেকে সরে পড়ল।
        তৃতীয় ভৃত্যের বেলাতেও ঘটল একই ঘটনা। কারণ চাষী আবার বলে উঠল, “এই হল তৃতীয়।”
        চতুর্থ ভৃত্যের হাতে ছিল চাকা-দেওয়া একটা ডিশ। জমিদার বললেন সেই ডিশে কী আছে বলতে পারলে বঝবেন ডাক্তার বাস্তবিকই সবজান্তা। সেই ডিশে ছিল কাঁকড়ার তরকারি।
        চাষী ভেবে পেল না কী করে সেই ফ্যাসাদ থেকে পার পাওয়া যায়। তাই নিজের জন্য আক্ষেপ করে সে চেঁচিয়ে উঠল, “হায়, বেচারা ক্ল্যাব ” [ ক্ল্যাব মানে কাকড়া ]
        চাষীর কথা শুনে জমিদার চেঁচিয়ে উঠলেন, “ঠিক হয়েছে। ডাক্তার বাস্তবিকই সবজান্তা। নিশ্চয়ই সে জানে চোরাই টাকাকড়ি কার কাছে আছে।”
        সেই ভৃত্য তখন ভীষণ ভয় পেয়ে ইশারায় ডাক্তারকে বার বার বলতে লাগল বাইরে আসতে। সে বাইরে যেতে চার ভৃত্যই কবুল করল টাকাকড়ি তারাই হাতিয়েছে। তারা বলল তাদের ধরিয়ে না দিলে সব টাকাকড়ি তারা ফিরিয়ে দেবে, উপরন্তু তাকেও দেবে অনেক টাকা। ধরা পড়লে চুরির অপরাধে তাদের ফাঁসিতে লটকানো হবে। টাকাকড়ি যেখানে তারা লুকিয়ে রেখেছিল সেখানেও তাকে তারা নিয়ে গেল।
        ডাক্তার তখন খুশি হয়ে আবার খাবার ঘরে ফিরে এসে জমিদারকে বলল, “কর্তা, আমার বইটা খুলে দেখি টাকাকড়ি কোথায় লুকনো আছে।”
        পঞ্চম ভৃত্য তখন চুপি চুপি লুকিয়ে পড়ল খাবারের আলমারির পিছনে। কারণ, ডাক্তার আরো কি কি জানে সে কথা সে জানতে চেয়েছিল। ডাক্তার চেয়ারে বসে অ আ ক খ’র বইটা খুলে খুঁজতে -লাগল "অ-য়ে অজগর’ ছড়াটা। কিন্তু ছড়াটা কোথাও খুঁজে না পেয়ে সে বলে উঠল, “জানি এখানেই আছে, বেরিয়ে পড়তেই হবে।”
        শুনে খাবারের আলমারির পিছনে যে-ভূত্য লুকিয়েছিল তার মনে হল কথাগুলো তাকে উদেশ্য করেই বলা হয়েছে ৷ ভীষণ ভয় পেয়ে লাফিয়ে বেরিয়ে এসে সে চেঁচিয়ে উঠল, “ইনি সব-কিছু জানেন। ইনি সবজান্তা।”
        তার পর ডাক্তার সবজান্তা জমিদারকে নিয়ে গেল চোরাই টাকাকড়ি যেখানে লুকনো ছিল সেখানে। এইভাবে চোরদের কাছ থেকে সে পেল অনেক টাকা আর পুরস্কার হিসেবে জমিদারের কাছ থেকেও পেল অনেক টাকা। আর রাতারাতি সে হয়ে উঠল বিখ্যাত।

0 coment�rios: