সবুজ ঘন বনের সুন্দর ছোট্ট পাখি রবিন। অপূর্ব তার গড়ন, চঞ্চল তার চলাফেরা। এক ডাল থেকে আরেক ডালে সে উড়ে বেড়ায়, মনের আনন্দে ছোট্ট দুটো ডানা নাড়ে, ঠোঁট দিয়ে পালক আঁচড়ায়, অবোধ কাকলিতে বনভূমি মাতিয়ে তোলে।
কিন্তু সব দিন সমান যায় না। আঁধার করে যখন বর্ষা নামে কিংবা হাড়-কাঁপানো শীত আসে—তখন বড়ই কষ্ট ছোট্ট রবিনের। ঘন পালকের মধ্যে ঠোঁট গুজেও শীত মানে না, পাতার আড়ালে দেহ ঢাকলেও বৃষ্টি রোখা যায় না। তাই বর্ষার দিনগুলোতে গাছের গুড়ির ফোকরে তার দিন কাটে, রাত কাটে— খাবার জোটানো ভার। আর শীতের দিনে অনবরত উড়ে উড়ে দেহ গরম রাখতে হয়, রাতে বড়ই কষ্ট।
এমনি এক শীতের দিনে ঝলমলে রোদের সকালে রবিন উড়তে উড়তে বনের শেষপ্রান্তে চলে গেল। হাঁপিয়ে গিয়েছে সে, তাই এক গাছের নীচে ঝরাপাতার স্তুপের ওপর বসে বিশ্রাম নিতে লাগল। দূরে পাহাড়-উপত্যকায় ঘন ঝোপে-ঝোপে কেমন কুয়াশা-কুয়াশা ভাব।
এমন সময় রবিনের বুকের নীচে রোদ-পোয়ানো গরম ছোয়াচ লাগল। খুব আরাম! ছোট্ট রবিন পাতার জঞ্জাল সরিয়ে দেখল এক টুকরো আগুন। বিস্ময়ে আনন্দে আবিষ্কারের চমকে রবিন কেমন দিশেহারা হয়ে পড়ল। যে জিনিস সে পেয়েছে তা যে সব রাজার ধনদৌলতের চেয়েও বেশি দামি। এ যে সত্য, এ যে অমূল্য।
ঠোঁটের ফাঁকে আগুনের টুকরোকে নিয়ে সে উড়ে চলল। চলছে, চলছে—গাছের মাথার ওপর দিয়ে সে উড়ে চলেছে। ছোট্ট ডানাদুটো তার টনটন করছে, কিন্তু কোথাও সে বিশ্রাম নিতে চায় না। সোজা চলে যেতে চায় তার নিজের ডেরায়। কিন্তু ছোট্ট পাখির ছোট্ট দুটো ডানা, অত ধকল কি সইতে পারে। তার ওপরে দিনের শেষের রাঙা সূর্যও পাহাড়ের কোলে ঢলে পড়েছে। আর পারে না রবিন। এক গাছের ডালে ক্লান্ত দেহে সে বসে পড়ল। কিন্তু অন্ধকারে তার ঠোঁটের আলো যে জ্বলছে? কেউ যদি দেখে ফেলে? কেউ যদি কেড়ে নেয় তার অনেক কষ্টে-পাওয়া আগুন। এদিকে সকাল থেকে উড়ে উড়ে তার যে এখন বড্ড ঘুম পেয়েছে। তাই আগুনকে বুকের তলায় লুকিয়ে রেখে ছোট্ট রবিন ঘুমিয়ে পড়ল।
সাত সাকলে সূর্য আকাশে ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই রবিন আবার উড়ে চলল। নিজের বনের মধ্যে এসে সে সেই আগুনকে শুকনো এক গাছের ফোকরে ঢুকিয়ে দিল। সব্বাই যাতে দেহ গরম করতে পারে। যে আরাম আর আনন্দ রবিন অনুভব করেছে, তা ছড়িয়ে পড়ুক সব জায়গায়। তাই শুকনো কাঠে কাঠ ঘষলে আজও আগুন জ্বলে। ঠোঁটে রেখেছিল সেই আগুন, বুকের তলায় ছিল সেই আগুন তাই ছোট্ট রবিনের ঠোঁটদুটি হল রাঙা আর তুলতুলে বুক হল রক্তিম।
ছোটদের জন্য লেখা হলেও গল্পগুলো পড়তে খুবই ভাল লাগে। মনে হয় মনটা যেন শিশুদের মত সরল হয়ে গেছে। আপনাদের এই প্রকল্পকে অনেক অনেক সাধুবাদ জানাই। ভালবাসা, শুভকামনা সবসময় আছে থাকবে, সামর্থ্যের মধ্যে যেকোন ধরনের সহযোগীতাও করব।
উত্তরমুছুন-- ধন্যবাদ।