অনেক অনেককাল আগে সব পশু মিলে পাখিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করল। সে এক ভয়ানক যুদ্ধ। দু’দলই নিজেদের মধ্যে গোপনে বৈঠক করতে লাগল। যুদ্ধে কে কেমনভাবে লড়বে তাই নিয়ে অনেক শলা-পরামর্শ চলল।
পাখিরা বুঝল, তাদের চেয়ে পশুদের শক্তি বেশি। তাদের দাঁত ও নখ বেশি ধারালো, দেহের শক্তিও বহুগুণ বেশি। তাই যুদ্ধের জন্য তারা অস্ত্রের লড়াই ছাড়াও অন্য অনেক কিছু চিন্তা করল।
পাখিরা ছোট্ট একটা কালো পিঁপড়েকে ডাকল। সে পশু হলেও বিরাট শক্তিধর পশুরা তাকে মোটেই পাত্তা দেয় না। আর এই ভয়ানক যুদ্ধে সে কি-ই বা করতে পারে। পাখিরা তাকে ঢুকিয়ে দিল পশুদের রাজত্বে। সে এত ছোট যে কেউ তাকে দেখতে পেল না, তার ওপরে তার গায়ের রং কালো। সে মাটির সঙ্গে মিশে দিব্যি ঢুকে গেল শত্রুরাজ্যে। চুপটি করে লুকিয়ে থেকে পিঁপড়ে পশুদের সব ফন্দি-ফিকির আর যুদ্ধের কৌশল জেনে নিল। তারপর যেমন নিঃশব্দে এসেছিল তেমনি চুপিচুপি পালিয়ে এল শত্রুর রাজ্য থেকে।
গুটি গুটি পাখিদের ডেরায় এসে বেশ পণ্ডিতের মতো সে বলল, ‘শোনো, পাখিরা। আমি সব জেনে এসেছি। পশুদের সব ফন্দি-ফিকির তোমাদের জানাচ্ছি। তোমাদের বিরুদ্ধে পশুরা যে যুদ্ধ করতে আসছে, এবার সেই যুদ্ধে পশুদের যুদ্ধ-সর্দার হবে শেয়াল। আর তার লেজ হবে যুদ্ধের সংকেত বা বলতে পারো ইশারা। যতক্ষণ পর্যন্ত শেয়াল তার লেজকে আকাশের দিকে খাড়া করে রাখবে ততক্ষণ পশুরা সামনে এগিয়ে যাবে আর লড়াই চালিয়ে যাবে। কিরকম খাড়া থাকবে জানতে চাও? মাটির উপরে যেমন গাছ দাঁড়িয়ে থাকে, ঠিক সেই রকম। আর শেয়াল যেই লেজ নামিয়ে নেবে অমনি পশুরা যুদ্ধ বন্ধ করে পালিয়ে যাবে। কিরকমভাবে নামিয়ে নেবে জানতে চাও? গাছের গোড়া কাটলে যেমন পড়ে যায়, ঠিক সেইভাবে। এইসব যুক্তি হয়েছে আর পশুরা তাই মেনে চলবে। পাখিদের যুদ্ধ-সর্দার হয়েছে ঈগল। যেমন তার তীক্ষ দৃষ্টি, তেমনি দ্রুতগতি, ও নিৰ্ভীক শিকারি সে। ঈগল একটা ছোট্ট পাখিকে বলল, “ভাই, তুমি শিগগির গিয়ে মৌমাছিকে ডেকে আনো। দেরি যেন না হয়।
মৌমাছি তক্ষুনি উড়ে এল ঈগলের কাছে, পাশে রয়েছে সেই ছোট্ট পাখি। ঈগল মৌমাছিকে বলল, ‘ভাই মৌমাছি, এই যুদ্ধে তোমাকে খুব বিপদের মধ্যেও একটা কাজ করতে হবে। সব কিছু নির্ভর করছে তোমার ওপর। অবশ্য আমরাও প্রাণ দিয়ে লড়াই করব। তুমি এক কাজ করবে। যখন পশুরা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে এগিয়ে আসবে আমাদের দিকে, যখন যুদ্ধের জন্য তারা খুব উত্তেজিত হয়ে থাকবে, ঠিক সেই সময় লেজের ডগায় বসাবে কামড়। একবার নয়, বারবার। আর তাতেই আমরা যুদ্ধে জিতে যাব। আমাদেরই একজন তুমি, তাই বিপদ থাকলেও তুমি এটা করবেই।
যুদ্ধ-সর্দারের আদেশ মেনে নিয়ে ঘন বনের গভীরে অদৃশ্য হয়ে গেল ছোট্ট মৌমাছি। তীর-ধনুক-বর্শা-ছুঁচলো লাঠি নিয়ে এগিয়ে আসছে পশুরা। সবার সামনে লেজ উঁচু করে চলেছে মেয়াল, তার দাঁতে তীর-ধনুক আর পিঠে তীরভরা ঝুড়ি।
পাখিরাও তৈরি। তারাও এনেছে একই ধরনের অস্ত্রশস্ত্র। সামনাসামনি হতেই বেধে গেল তুমুল লড়াই। সে এক ভয়ানক যুদ্ধ।
বোঁ বোঁ করে মৌমাছি উড়ে এল ঘন ঝোপের আড়াল থেকে। বাতাসে কয়েকবার ঘুরে ঘুরে উড়তেই সে শেয়ালকে দেখতে পেল। সব পশুর সামনে লেজ খাড়া করে সে যুদ্ধ করছে। পোঁ করে একবার পাক খেয়েই মৌমাছি শান্ত হয়ে বসল শেয়ালের লেজের ডগায়। আর তারপর?
দেহের সমস্ত শক্তি মুখে এনে কামড়ে দিল লেজের ডগা, বিষ ঢেলে দিল ছোট্ট মৌমাছি। শেয়াল চমকে উঠল, ব্যথায় তার লেজ কেঁপে উঠল। তবু যুদ্ধ করতে লাগল। আবার বিষের তীর ফুটল লেজের ডগায়—আবার–আবার। মৌমাছি কামড়েই চলেছে। লেজ অবশ হয়ে আসছে, ব্যথায় লাফাতে ইচ্ছে করছে, শেয়াল আর পারে না। শেষকালে শেয়াল যন্ত্রণায় চিৎকার করে লেজ নামিয়ে নিল। আর দৌড় দিল উন্টো মুখে।
যুদ্ধে এগিয়ে যাওয়া আর উচিত নয়, কেননা তাদের সর্দারের লেজ নামানো। তারাও ছত্রভঙ্গ হয়ে শেয়ালের পিছু পিছু দৌড় দিল।
আর এই ভয়ানক যুদ্ধে শেষকালে পাখিদেরই জয় হল।
গল্পটি পড়া শেষ! গল্পটি কি সংগ্রহ করে রাখতে চাও? তাহলে নিচের লিঙ্ক থেকে তোমার পছন্দের গল্পটি ডাউনলোড করো আর যখন খুশি তখন পড়ো; মোবাইল, কস্পিউটারে কিংবা ট্যাবলেটে।
খুব ভাল লাগল। ঠিক এই জাতীয় একটা গল্প একেবারে ছোটবেলায় এক শিক্ষকের মুখে শুনেছিলাম।
উত্তরমুছুন