তখন কোন কিছুই ছিল না। আদ্যিকালে কোন কিছুই ছিল না। ছিলেন শুধু নিয়ামবি। নিয়ামবি সব কিছু সৃষ্টি করলেন। তিনি গভীর বন সৃষ্টি করলেন। সাগর আর নদী। তারপরে বনের জন্তু জানোয়ার, গাছ আর আকাশের পাখি, জলের মাছ। আরও কত কি।
নিয়ামবি কিন্তু তখন এই পৃথিবীতেই বাস করতেন। বড় সুখে বাস করতেন। তার বউ ছিল নাসিলেলে। সে বড় ভালো মেয়ে। দুজনের সুখের সংসার। আর চারিদিকে নিয়ামবির সৃষ্টি করা কত প্রাণী। কি সুন্দর তাদের দেখতে। খাওয়া-দাওয়ারও কোন অভাব নেই। বড় সুখ বড় শান্তি।
কিন্তু নিয়ামবির মনে অশান্তি দেখা দিল। আরও একটা প্রাণী সৃষ্টি করেছেন। সে অন্যদের মতো নয়, একেবারে আলাদা। অন্যেরা নিজের নিজের স্বভাব নিয়ে থাকে, বেড়ায়, খায়, সংসার করে। এই প্রাণীটি অন্যরকম। এর নাম কামোনু। এই প্রাণী ওড়ে না চার পায়ে হাটে না। দুপায়ে সোজা দাঁড়িয়ে চলে-ফিরে বেড়ায়। শুধু কি তাই? নিয়ামবি যা করে ফেলে, কামোনু সব কাজ ঠিক নিয়ামবির মতোই করে ফেলে। নিয়ামবি কামারশালায় হাপর চালিয়ে লোহা গলিয়ে যন্ত্রপাতি ও অস্ত্র বানাচ্ছেন, কামোনু তক্ষুনি সব শিখে নিল। তৈরি করল যন্ত্রপাতি আর অস্ত্র। নিয়ামবি খাল কেটে জমিতে জল আনলেন, লাঙল দিয়ে জমি চষলেন, বীজ লাগালেন। কামোনুও তাই করল। কিছু শিখতেই তার দেরি লাগে না। যা করেন নিয়ামবি, তাই নকল করে কামোনু। নিয়ামবি চিন্তিত হলেন। মনের অশান্তি বেড়ে গেল। শেষকালে তিনি কামোনুকে ভয় পেতে শুরু করলেন। ভাবলেন, কেন সৃষ্টি করলাম কামোনুকে? কিন্তু এখন আর কি করবেন? অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে।
কামোনু কামারশালার হাপরে একদিন একটা বর্শা তৈরি করল। নদীর পারে পড়ে থাকা পাথরে ঘষে ঘষে বর্শাকে খুব চকচকে আর ধারালো করে তুলল। মুখে অদ্ভুত হাসি। বর্শা বাগিয়ে বনের পথে সে ফিরে আসছে। হঠাৎ দেখে একটা পুরুষ হরিণ নিশ্চিন্তে ঘাস খাচ্ছে। ওরা তো ভয় পেতে শেখেনি। নিয়ামবির পৃথিবীতে কেউ কাউকে মারে না। তাই কামোনুকে একবার দেখেই হরিণ আবার ঘাস খেতে শুরু করল। হঠাৎ কামোনু হরিণের পেটে তার ধারালো বর্শা ঢুকিয়ে দিল। রক্ত ঝরল, ছটফট করল, হরিণ মরে গেল। কামোনুর মুখে অদ্ভুত হাসি। পরপর আরও কয়েকটা নিরীহ জন্তু মারা পড়ল কামোনুর বর্শার আঘাতে। বেশ মজা, বেশ লাগছে এই নতুন খেলা। নিয়ামবি সব জানতে পারলেন। তিনি খুব ব্যথা পেলেন। তারপরে গেলেন রেগে । এসব কি হচ্ছে? তিনি ডেকে পাঠালেন কামোনুকে। কামোনু এল।
নিয়ামবি বললেন, 'কামোনু, তোমাকে আমি মানুষ হিসেবে সৃষ্টি করেছি। তুমি অন্যদের চেয়ে আলাদা। কিন্তু তুমি তো মোটেই ভালো কাজ করছ না। খুব খারাপ কাজকর্ম করে চলেছ। তুমি ওদের মেরে ফেললে। অথচ ওরা তোমার ভাই। তুমি কি জানতে না যে, ওরা সবাই তোমার ভাই? ভাইকে কখনো মারতে হয়? আর যেন না দেখি, তুমি ওদের গায়ে বর্শা ঢুকিয়ে দিয়ো না। মনে রেখো ।
কে শোনে কার কথা। কামোনু আবার ভাইদের মারল। বড় ভালো লাগছে এই খেলা। এবার নিয়ামবি এমন রেগে গেলেন যে, কামোনুকে দূরের এক দ্বীপে রেখে এলেন। সে আর আসতে পারবে না। চারিদিকে অথৈ জল। জলে নামলেই ডুববে। নিয়ামবি নিশ্চিত্ত হলেন।
কিন্তু কয়েকদিন পরেই কামোনু ফিরে এল। একটা মস্ত বড় শুকনো কাঠে চেপে জলের ওপর দিয়ে ভাসতে ভাসতে সে ফিরে এল। কি আর করেন নিয়ামবি। তারই সন্তান তো! কামোনুকে সেখানেই থাকতে বললেন। তাকে দিলেন মস্ত বড় একটা বাগান। তাকে সেই বাগানে ভালোভাবে চাষবাস করতে বললেন। সে মানোযাগ দিয়ে কাজ করুক, দুষ্টুমি যেন না করে। ওসব ভালো নয়।
চাষে মন দিল কামোনু। বুদ্ধি খাটিয়ে চাষ শুরু করল। খাল কেটে জল আনল, লাঙল দিল, বীজ বুনল। সব কাজই সে খুব ভালোভাবে করতে পারে। সবুজ লকলকে গাছ বাগান ছেয়ে ফেলল। কামোনু দেখে আর গুনগুন করে গান গায়।
একদিন হয়েছে কি, রাত্তিরবেলা অনেক বুনো মোষ বন থেকে বেরিয়েছে। সেই বাগানে সবুজ গাছ দেখে সব মোষ ঢুকে পড়ল। তারা ভয় পেতে শেখেনি। শব্দ হতেই কামোনু বাড়ি থেকে বেরিয়ে বাগানে ঢুকল। মোষ গাছ উজার করে দিচ্ছে। ছুটে গেল বাড়িতে, হাতে তুলে নিল বর্শা। ফিরে এল বাগানে। একের পর এক মোষকে মারতে লাগল। পাগল হয়ে গিয়েছে কামোনু। মোষদের দেখাদেখি বাগানে ঢুকতে যাবে একপাল কৃষ্ণসার হরিণ। কামোনু তাদেরও মেরে ফেলল। তার বাগানের গাছ নষ্ট করা। বুঝুক মজা।
এর কিছুদিন পরে কামোনুর পোষা তেজী কুকুরটা মরে গেল। তারপরে তার খাবার পাত্রটি টুকরো টুকরো হয়ে ভেঙে গেল। তার কয়েকদিন পরে ছেলেটিও মরে গেল। এ কি হল? কামোনু চলল নিয়ামবির বাড়িতে। তাকে সব খুলে বলতে হবে। এসব কি ঘটছে? কেন হচ্ছে এসব?
নিয়ামবির বাড়িতে গিয়ে কামোনু অবাক হয়ে গেল। সে যেন নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না। নিয়ামবির বাড়িতে তার ছেলে আর কুকুর খেলা করছে, তার পাত্রটি উঠোনের পাশে রয়েছে, তার আস্ত পাত্রটি। সে অবাক হল।
নিয়ামবির সামনে বসে পড়ে কামোনু বলল, “আমাকে আপনার ওষুধ দিতেই হবে। যে গাছ-গাছড়ার ওষুধে ওদের বঁচিয়ে তুললেন, আমার তা চাই। ওই ওষুধ পেলে আমার সংসারে আর কেউ মরে যাবে না। মরলেই বঁচিয়ে তুলব। ওষুধ দিন। অনেক ঠকেছেন নিয়ামবি। অনেক চিনেছেন কামোনুকে। আর নয়। এতেই নিয়ামবি নাজেহাল হয়ে পড়েছেন, তার ওপরে বাঁচবার ওষুধ? আর নয়, অনেক হয়েছে। তিনি কামোনুকে তাড়িয়ে দিলেন, ওষুধ দিলেন না। কামোনু ফিরে গেল।
নিয়ামবি আরও চিন্তিত হয়ে পড়লেন। অনেক দিন থেকেই তিনি কামোনুকে ভয় পেতে শুরু করেছেন। সেই ভয় আরও বেড়ে গেল। কামোনু তার বাড়ির পথ চিনে গিয়েছে। তার বাড়িতেও এল, সব দেখে গেল। ওষুধ না দেওয়াতে আবার কি করে বসে। নিজের সৃষ্টি এমন বিপদে ফেলবে কে জানত? বড় ভয় নিয়ামবির। চিন্তা করতে বসলেন।
তারপর থেকে নিয়ামবি কামোনুর হাত থেকে বাঁচবার জন্য অনেক কৌশল করলেন। তিনি একবার নদী পেরিয়ে দূরের দ্বীপে চলে গেলেন। সঙ্গে নিলেন তার সংসার ও লোকজন। ওই বাড়ি তো কামোনু চিনে ফেলেছে। এবার অনেক দূরে। কামোনুর নাগালের বাইরে।
কিছুদিন পরেই কামোনু সেই দ্বীপে গিয়ে উপস্থিত হল। নলখাগড়া দিয়ে কামোনু এক ভেলা তৈরি করেছে। তাতে চেপে দিব্যি পৌঁছে গেল নিয়ামবির নতুন দ্বীপে। নিয়ামবি তো অবাক। তিনি আরও ভয় পেয়ে গেলেন।
তখন নিয়ামবি এক বিশাল উঁচু পাহাড় তৈরি করলেন। পাহাড়ের মাথা মেঘ ছাড়িয়ে আকাশে ঠেকেছে। মাটি থেকে দেখাই যায় না পাহাড়ের চুড়ো। সেই চুড়োতে বাস করতে লাগলেন নিয়ামবি, তার সংসার আর লোকজন। নিয়ামবিকে এবার বেশ নিশ্চিত্ত মনে হল। আর ভাবনা নেই।
এমনি করে দিন কাটে, রাত কাটে। হঠাৎ নিয়ামবির নতুন বাড়িতে উপস্থিত হল কামোনু। সে ঠিক আসবার পথ চিনে নিয়েছে, পাহাড়ি পথে উঠবার কৌশল জেনে ফেলেছে। মানুষের হাত থেকে নিস্তার নেই নিয়ামবির। নিয়মাবি যেখানেই যান, সেখানেই তার পিছে পিছে মানুষ চলেছে। এ এক অদ্ভুত প্রাণী।
এদিকে হয়েছে কি, অনেক কাল এমনি করে কেটে গেল। তাই মানুষ অনেক বেড়ে গিয়েছে। আগের মতো আর অল্প নেই। সারা পৃথিবী জুড়েই মানুষের ছড়াছড়ি। নিয়ামবি ভাবলেন, এক মানুষেই আমার যদি এমন দশা হয়, তবে কামোনু অন্যদের আমার পেছনে লাগালে তো সর্বনাশ হয়ে যাবে। আর কামোনুকে আমার পেছনে লাগাতে হবে না, ওরা যখন মানুষ তখন নিজেরাই আমার শান্তি কেড়ে নেবে, আমাকে তাড়িয়ে মারবে। ওরা যে মানুষ। ওরা আমারই সৃষ্টি, তবু ওরা মানুষ। এ এক ভয়ংকর জীব।
শেষকালে কোন উপায় না দেখে নিয়ামবি কয়েকটি পাখিকে ডাকলেন। তারা তো দূর দূর দেশে, মেঘের রাজ্যে অনেক ওপরে উড়ে যেতে পারে। তারা দেখে আসুক এমন এক দূরের রাজ্য যেখানে নিয়ামবি নতুন বাড়ি তৈরি করবেন। তিনি তৈরি করবেন নতুন রাজ্য, তার নাম হবে লিটোমা। সে রাজ্য শুধুই দেবতাদের জন্য।
পাখিরা চারিদিকে উড়ে চলল। দূর আকাশে, গভীর বন পেরিয়ে, উঁচু পাহাড় ডিঙিয়ে, নীল সমুদ্র পেরিয়ে। ফিরে এল কয়েকদিন পরে। না, লিটোমার জন্য তারা কোন ভালো জায়গা পেল না। অনেক ঘুরেছে। ডানা ক্লান্ত হয়েছে, তবু পায়নি তেমন জায়গা। নিয়ামবি আরও ব্যস্ত হয়ে পড়লেন।
শেষকালে তিনি একজন বৃদ্ধ ওঝা-গণককে ডেকে পাঠালেন। বড় বুদ্ধিমান এই ওঝা, ভালো গুনতে পারে। ওঝা অনেক আঁক জোক করে নিয়ামবিকে বলল, “তোমার বড় বিপদ। কিন্তু একজন ছাড়া আর কেউ তোমাকে মানুষের হাত থেকে বাঁচাতে পারবে না। সে মাকড়সা। মাকড়সা। মাকড়সার ওপরেই তোমার জীবন নির্ভর করছে।
ওঝা চুপ করে গেল। আর কিছু না বলে পাহাড়ি ঢালুতে নেমে চলল।
দেরি না করে নিয়ামবি মাকড়সাকে ডাকলেন । আঁকাবাঁকা পথে মাকড়সা এল নিয়ামবির বাড়ির উঠোনে। সব খুলে বললেন নিয়ামবি। তার বিপদের কথা, মানুষের দুষ্টুমির কথা, ওঝা-গণকের কথা। মাকড়সা এমন একটা জায়গা ঠিক করুক যেখানে নিয়ামবি নিশ্চিন্তে থাকতে পারবে। সে জায়গার নাম হবে লিটোমা। যেখানে শুধু দেবতারাই থাকবে। কামোনু কিংবা অন্য কোন মানুষ সেখানে পৌঁছতেই পারবে না। আঃ কি শান্তি।
দাঁড়াগুলো নেড়ে মাকড়সা আবার আঁকাবাঁকা পথে ফিরে চলল। সে কথা দিল,—একটা ব্যবস্থা করবেই। লিটােমার জন্য ঠিক জায়গা বেছে আসবেই। নিয়ামবি খুশি হল।
ফিরে এসেই মাকড়সা কাজে লেগে গেল। বসে থাকার পাত্র নয় সে, উপায় বের করে ফেলেছে। পৃথিবীর মাটি থেকে সে ওপরে জাল বুনতে লাগল। জাল ওপরে উঠছে, সেও ওপরে উঠে আবার জাল বুনছে। আরও ওপরে, আরও ওপরে। মেঘ ছাড়িয়ে আরও ওপরে। শেষকালে জাল শেষ করে তরতর করে জাল বেয়ে নেমে এল মাটিতে। চলল নিয়ামবির কাছে। হ্যাঁ, লিটোমার জন্য সে জায়গা বেছেছে অনেক ওপরে, দূর আকাশে। পথও তৈরি করে ফেলেছে। জালের পথ। সোজা ওপরে যাওয়ার সুন্দর পথ। এবার নিয়ামবি যেতে পারে, কেউ তাকে বিরক্ত করতে পারবে না। না, মানুষও পারবে না, কামোনুও পারবে না।
সেই জালের পথ বেয়ে নিয়ামবি, তার সংসার ও লোকজন আকাশে উঠে গেল। কত দূরে রইল পৃথিবী, গাছ-গাছালি, সমুদ্র-নদী, পাখি-জন্তু-জানোয়ার আর মানুষ। বেশ নিশ্চিত্ত। তবু আরও নিশ্চিত্ত হওয়ার জন্য ওঝা-গণকের পরামর্শে নিয়ামবি মাকড়সার চোখ দুটো উপড়ে ফেলল, আর কোনদিন সে ঠিকপথে জাল তৈরি করতে পারবে না। কোনদিকে যে লিটোমা তা আর দেখতে পাবে না। লিটোমাকে না দেখলে আর এই পথে জাল বুনবে কেমন করে? ওপরে উঠে নিয়ামবি জালটা গুটিয়ে নিলেন, তারপর ছিড়ে ফেললেন। মানুষকে বিশ্বাস নেই, বিশ্বাস নেই কামোনুকে।
মাকড়সার চোখ উপড়ে দিলেন নিয়ামবি। এই একবারই তিনি নিষ্ঠুর কাজ করলেন। তার সৃষ্টিকে ব্যথা দিলেন। এই একবারই। কিন্তু তার যে আর কোন উপায় হল না। মানুষ বড় ভয়ংকর। তাকে তো বাঁচতে হবে। তিনিও ব্যথা পেলেন।
নিয়ামবিকে আর কেউ কোনদিন এই পৃথিবীতে দেখেনি। যেখানে তিনি গেলেন, এখান থেকে সেখানে নজর যায় না। তিনি অদৃশ্য হলেন।
কামোনু একদিন নিয়ামবির বাড়ি গিয়ে দেখে,-কেউ নেই সেখানে। নিয়ামবি তো নেই-ই, তার সংসারেরও কেউ নেই, নেই তার লোকজন। সব বুঝল কামোনু।
সঙ্গে সঙ্গে ফিরে এল তার এলাকায়। নিজের লোকজনকে ডাকল। যেমন করেই হোক নিয়ামবিকে ধরতেই হবে। ছাড়া চলবে না। সে তার লোকজনকে বলল, ‘খুব উঁচু একটা জায়গা বানাতে হবে, তাতে চেপে নিয়ামবির কাছে পৌঁছতে হবেই। ওকে ছাড়া চলবে না। খুব পরিশ্রম করতে হবে। যেভাবে বলব সেভাবে কাজে লেগে যাও।
কাজ শুরু হয়ে গেল। কুড়োলের আঘাতে বড় বড় গাছ মাটিতে পড়তে লাগল। তাদের ডালপালা কেটে আসল গাছটাকে মাটিতে পুঁতে দেওয়া হল। তার ওপরে গাছ, তার ওপরে গাছ। ওপরে, আরও ওপরে। মেঘ ফুটো করে নিয়ামবির কাছে পৌঁছতেই হবে। কাজ চলছে দিনরাত।
এমনি করে কয়েকদিন কাজ করার পরে অনেক উঁচু হল গাছের মাথা। আরও উঁচু করতে হবে। কাজ চলছে। হঠাৎ হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ল গাছের মাথা। ওপরে বড্ড ভারি হয়ে গিয়েছিল। সোজা রইল না তাদের গাছ। আবার চেষ্টা করা হল। কিন্তু এর ওপরে আর তাদের রাখা যাচ্ছে না। কামোনু হাল ছেড়ে দিল। সে বুদ্ধিমান। বুঝতে পারল, আর কোনদিন নিয়ামবির কাছে পৌঁছনো যাবে না। নিয়ামবি নাগালের বাইরে চলে গিয়েছে।
এতদিন পরে মানুষ কামোনুর মনে দুঃখ এল, কষ্ট হল। সে ব্যথা পেল মনে মনে। কাজটা বোধহয় ঠিক হয়নি। না করলেই হত। নিয়ামবি তো তার কোন ক্ষতি করে নি। কি জানি, কেন সে করল এমন কাজ।
তাই প্রতিদিন যখন সূর্য ওঠে পুব আকাশে, আঁধার মিলিয়ে যায়, তখন কামোনু সূর্যকে প্রণাম জানিয়ে বলে, “ওই আমাদের রাজা এসেছেন। হাঁ, তিনি এসেছেন, আমাদের মাথার ওপরে। আমাদের রাজা, আমাদের সূর্য, আমাদের নিয়ামবি। অন্য সব মানুষও সূর্যকে প্রণাম করে, অভিনন্দন জানায় , চিৎকার করে হাততালি দিয়ে আনন্দ করে ওঠে। তাদের সূর্য, তাদের রাজা, তাদের নিয়ামবি। পূর্ণিমার রাতেও তারা চাঁদকে দেখে প্রণাম করে, অভিনন্দন জানায় আনন্দে নৃত্য করে, গান গায়। পূর্ণিমার চাঁদ যে নাসিলেলে, নিয়ামবির বউ, সূর্যের প্রিয়তমা। তাদের রানি।
0 coment�rios: