একবার এক দীর্ঘ লড়াইয়ের পর অনেক সৈন্যকে বরখাস্ত করা হয় । তাদের মধ্যে একজনকে লোকে ডাকত আনন্দভায়া বলে । তাকে সামান্য রুটি আর গোটা চারেক পয়সা দিয়ে বিদেয় করা হয় । এই পুঁজি নিয়ে সে পড়ল বেরিয়ে ।
পথের পাশে সেন্ট পিটার বসেছিলেন ভিখিরির ছদ্মবেশে । আনন্দভায়া তার পাশ দিয়ে যাবার সময় তিনি ভিক্ষে চাইলেন ।
সে বলল, “ভিখিরিভাই, কী তোমায় দিই ? এক সময় আমি সৈনিক ছিলাম । এখন চাকরি গেছে । আমার এখন সম্বল এই সামান্য রুটি আর গোটা চারেক পয়সা । সে যাই হোক, এর থেকেই তোমায় কিছুটা দিচ্ছি। কিন্তু এগুলো শেষ হলে তোমার মতো আমাকেও ভিক্ষা করতে হবে।” এই বলে সেই সাধুকে রুটির খানিকটা টুকরো আর একটা পয়সা সে দিল।
সেণ্ট পিটার তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে খানিক দুরে গিয়ে আর-এক ভিখিরির ছদ্মবেশ ধরে আনন্দভায়ার কাছে আবার ভিক্ষে চাইলেন । আনন্দভায়া আগের মতোই কথা বলে তাকে দিল খানিকটা রুটি আর একটা পয়সা ।তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে কিছু দূরে গিয়ে ভিখিরির ছদ্মবেশ ধরে পথের ধারে বসে সেন্ট পিটার তৃতীয়বার তার কাছে ভিক্ষে চাইলেন ।
আনন্দভায়া আবার তাকে দিল খানিকটা রুটি আর একটা পয়সা । সেন্ট পিটার তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে চলে গেলেন ।
তখন সম্বলমাত্র এক টুকরো রুটি আর একটা পয়সা । একটা সরাইখানায় গিয়ে রুটির টুকরোটা সে খেল আর বাকি পয়সাটা দিয়ে কিনল বিয়ার ।
খাওয়া-দাওয়া সেরে হাঁটতে-হাঁটতে তার সঙ্গে আবার দেখা হল সেস্ট পিটারের l তখন তিনি ছদ্মবেশ ধরেছিলেন এক বরখাস্ত-হওয়া সৈনিকের । আনন্দভায়াকে তিনি বললেন, “শুভদিন কমরেড । আমাকে এক টুকরো রুটি আর বিয়ার কেনার জন্যে একটা পয়সা দিতে পার ?”
আনন্দভায়া বলল, “অসম্ভব । আমাকেও বরখাস্ত করে দেওয়া হয়েছিল সামান্য রুটি আর গোটা চারেক পয়সা । পথে আসতে আসতে আমার সঙ্গে তিন ভিখিরির দেখা । তাদের প্রত্যেককে আমি একটা করে পয়সা আর রুটির তিন ভাগ দিয়েছি । এক সরাইখানায় রুটির শেষ টুকরোটা খেয়ে বাকি পয়সাটা দিয়ে কিনেছিলাম এক গেলাস বিয়ার । এখন সম্বল বলতে আমার কিছুই নেই। আমার মতোই ষদি তোমার অবস্থা হয় তা হলে আমার সঙ্গে এসো । একসঙ্গে ভিক্ষে
করা যাবে ।”
সেণ্ট পিটার বললেন, "ভিক্ষে করার দরকার নেই । লোকের রোগ সারাবার কিছু-কিছু ওষুধ-বিষুধ আমার জানা আছে । মানুষের রোগ সারিয়ে যা কামাই তাইতেই মোটামুটি আমার চলে যায়।”
আনন্দভায়া বলল, “তাই নাকি ? কিন্তু আমি তো ও বিষয়ে কিছুই জানি না । আমাকে তাই একাই ভিক্ষেয় বেরুতে হবে।”
সেণ্ট পিটার বললেন, “তাতে কিছু যায় আসে না । আমার সঙ্গে চলো । যা রোজগার করব তার অর্ধেকটা হবে তোমার।”
আনন্দভায়া বলল, “বাঃ, এ তো আমার পক্ষে তোফা ব্যবস্থা! চলো, এগুনো যাক ৷”
যেতে-যেতে তারা পৌছল এক চাষীর বাড়িতে । সেখান থেকে ভেসে আসছিল মড়া-কান্না । বাড়ির ভিতরে গিয়ে তারা দেখে একটা লোক মরতে বসেছে আর তার বউ স্বামীকে বাঁচাবার কোনো উপায় না দেখে আমুরি-কুমুরি হয়ে কাঁদছে ।
সেন্ট পিটার বললেন, “কান্না থামাও । তোমার স্বামীকে আমি সুস্থ করে দিচ্ছি ।" এই-না বলে পকেট থেকে এক শিশি মলম বার করে সেটা দিয়ে চক্ষের নিমেষে রোগীকে তিনি সারিয়ে দিলেন । সুস্থ হয়ে বিছানায় উঠে বসল রোগী ।
স্বামী-স্ত্রী খুব খুশি হয়ে বলল, “কী করে এর প্রতিদান আপনাকে আমরা দিই ? বলুন, কী আপনাকে দেব ।”
সেণ্ট পিটার যত বলেন কিছু দেবার দরকার নেই তত তারা কিছু নেবার জন্য তাকে পীড়াপীড়ি করতে থাকে।
আনন্দভায়া কিন্তু তাকে কনুই দিয়ে আস্তে আস্তে গুঁতো মেরে বলল, “কিছু নাও । আমাদের যে দরকার ”
শেষটায় চাষীর বউ ভেড়ার একটা ছানা এনে সেণ্ট পিটারকে বলল, সেটা নিতেই হবে। সেণ্ট পিটার কিন্তু কিছুতেই নিতে চাইলেন না ।
আনন্দভায়া আবার কনুই দিয়ে আস্তে গুঁতো মেরে ফিসফিস্ করে বলল, “আচ্ছা বোকা তো ! এটা নেবে বৈকি ! আমি বলছি এটা আমাদের খুব কাজে লাগবে ।” g
সেণ্ট পিটার তখন বললেন, “বেশ, ভেড়ার ছানাটা নিলাম। কিন্তু এটা আমার দরকার নেই। তাই তোমাকে এটা বয়ে নিয়ে যেতে হবে ।”
আনন্দভায়া বলল, “তাতে আমার আপত্তি নেই । ভেড়ার একটা ছানা বয়ে নিয়ে যাওয়া খুব একটা শক্ত কাজ নয় ।” এই-না বলে সেটাকে সে কাঁধে তুলে নিল ।
একসঙ্গে হাঁটতে-হাঁটতে তারা পৌছল এক বনে ৷ আনন্দভায়ার কাঁধে তখন ভেড়ার ছানার চাপ খুব বেড়ে উঠেছে । তা ছাড়া ক্ষিদেও পেয়েছে তার খুব । তাই সেণ্ট পিটারকে সে বলল, “শোনো, এখানে বিশ্রাম নেওয়া যাক । ভেড়ার ছানাটাকে রেঁধে এবার খাওয়া-দাওয়া সারি ।”
সেণ্ট পিটার বললেন, “আমার কোনো আপত্তি নেই । কিন্তু রান্নাবান্নার ঝামেলার মধ্যে যেতে পারব না । তুমি রাঁধতে জানলে— এই নাও সসপ্যান । যতক্ষণ-না রান্নাবান্না শেষ হয় ততক্ষণ খানিক ঘুরে আসি । কিন্তু একটা কথা—আমি ফেরার আগে রান্নাবান্না শেষ হয়ে গেলে আমাকে বাদ দিয়ে খবরদার একলা খেতে বসবে না ।”
আনন্দভায়া বলল, “তুমি বেড়াতে যাও। রাঁধতে আমি খুব ভালোই পারি।”
সেণ্ট পিটার বেড়াতে চলে গেলেন আর আনন্দভায়া আগুন জালিয়ে ভেঁড়ার ছানাটাকে কেটেকুটে সসপ্যানে করে রাঁধল।
রান্নাবান্না শেষ হল । কিন্তু সেন্ট পিটারের দেখা নেই । তাই আনন্দভায়া আগুন থেকে সসপ্যান নামিয়ে ভেড়ার ছানার কলজেটা বার করে খেয়ে ফেলল ।
খানিক পরে সেণ্ট পিটার ফিরে এসে বললেন, “ভেড়ার ছানার সবটাই তুমি খাও । আমাকে দাও শুধু কলজেটা । সেটা থেয়েই আমি তৃপ্ত হব ।”
আনন্দ ভায়া ছুরি-কাটা নিয়ে ভেড়ার ছানার কলজেটা খোঁজার ভান
করতে লাগল ।
কয়েক মিনিট পরে সে বলল, “কলজে তো দেখছি না ।” সেণ্ট পিটার বললেন, “আশ্চর্য ব্যাপার তো ! কলজেটা যাবে
কোথায় ?”
আনন্দভায়া বলল, “তা তো জানি না ।” খানিক থেমে সে যোগ করে দিল, “আরে—আমরা দুজনেই ভারি বোকা । আমরা কলজে খুঁজছি—কিন্তু ভেড়ার ছানাদের যে কলজেই থাকে না ।”
সেন্ট পিটার বললেন, “তাই নাকি ? সে কথা তো জানতাম না । সব জন্তুরই তো কলজে থাকে । ভেড়ার ছানার কলজে থাকবে না কেন ?”
আনন্দভায়া বলল, “বিশ্বাস করো বন্ধু—ভেড়ার ছানার কলজে থাকে না ।”
সেণ্ট পিটার বললেন, “কলজে না থাকলে ভেড়ার ছানার মাংস আমি খাব না। তুমিই সবটা খাও।”
আনন্দভায়া বলল, “যে-মাংসটা খেতে পারব না সেটা আমার ঝোলায় রাখব। পরে খাওয়া যাবে।” এই-না বলে অর্ধেকটা মাংস সে খেল আর বাকি অর্ধেকটা তার ঝোলায় ভরে আবার যাত্রা করল।
তার পর সেণ্ট পিটার তাদের পথের সামনে ভয়ংকর বন্যার জল এনে সঙ্গীকে বললেন, “তুমি আগে যাও ।”
আনন্দভায়া বলল, “না-না, তুমিই যাও আগে ।” সে ভাবল, জল খুব গভীর হলে যেখানে আছি সেখানেই থাকব ।
সেণ্ট পিটার তাই জল ভেঙে প্রথম গেলেন । তার হাঁটু পর্যন্ত জল উঠল । কিন্তু আনন্দভায়া যখন পেরুতে গেল জল উঠে এল তার গলা পর্যন্ত । তাই সে চেঁচিয়ে উঠল, “বন্ধু, সাহায্য করো, সাহায্য করাঁ - উত্তরে কিন্তু সেন্ট পিটার বললেন :
“স্বীকার করবে কি ভেড়ার ছানার কলজেটা তুমি থেয়েছ ?”
সে বলল, “না—আমি খাই নি ।” জল তখন উঠে এল তার মুখ পর্ষন্ত । আবার সে চেঁচিয়ে উঠল, “বন্ধু, সাহায্য করো, সাহায্য করো ।” কিন্তু সেন্ট পিটার আবার প্রশ্ন করলেন, “স্বীকার করবে কি ভেড়ার ছানার কলজেটা তুমি খেয়েছ ?”
সে বলল, “না,—আমি খাই নি ।” তাকে ডুবিয়ে মারার ইচ্ছে দয়ালু সেন্ট পিটারের ছিল না । তাই তিনি বন্যার জল সরিয়ে তাকে টেনে তুললেন ।
যেতে-যেতে তারা পৌছল এক শহরে । সেখানে শুনল রাজার মেয়ে খুব অসুস্থ ।
তাই শুনে আনন্দভায়া সেন্ট পিটারকে বলল, “বন্ধু, মস্ত একটা সুযোগ পাওয়া গেছে। রাজকণ্যেকে সারাতে পারলে জীবনে আমাদের আর কোনো ভাবনা থাকবে না ।"
সেণ্ট পিটার কিন্তু তার বন্ধুর কথা কানে না তুলে চলতে লাগলেন খুব ধীরে-ধীরে । শেষটায় খবর এল. রাজকন্যে মারা গেছে ।
খবর শুনে আনন্দভায়া চেঁচিয়ে উঠল, “দেখলে তো, তোমার গেঁতোমির জন্যে কী ঘটে গেল ।”
সেণ্ট পিটার বললেন, “শান্ত হও । আমি শুধু যে রোগ সারাতে পারি তা নয়, মরা মানুষকে বাঁচাতেও পারি।”
আনন্দভায়া বলল, “তা হলে তো কোনো কথাই নেই । পুরস্কার হিসেবে অর্ধেক রাজত্ব নিশ্চয়ই আমরা পাব ।”
রাজপ্রাসাদে গিয়ে তারা দেখল শোকে-দুঃখে সবাই ভেঙে পড়েছে । তাই দেখে সেণ্ট পিটার বললেন, রাজকন্যেকে তিনি বাঁচিয়ে তুলবেন । রাজকন্যের শোবার ঘরে গিয়ে তিনি বললেন এক কেতলি জল আনতে আর ঘর থেকে সবাইকে বেরিয়ে যেতে । তার সঙ্গে রইল শুধু আনন্দভায়া। তার পর তিনি কেতলিটা উনুনে চড়িয়ে রাজকন্যের সব অঙ্গগুলো কেটে ফেলে দিলেন ফুটন্ত জলে । অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ থেকে সব মাংস খসে যাবার পর সুন্দর সাদা হাড়গুলো তিনি সাজালেন একটা টেবিলে
আর তিনবার বললেন, “ঈশ্বর, একে বাঁচিয়ে তুলুন ।” আর তার কথা তৃতীয়বার শেষ হতেই সুন্দর সুস্থ শরীর নিয়ে রাজকন্যে উঠল বেঁচে ।
রাজার আনন্দ আর ধরে না । সেণ্ট পিটারকে তিনি বললেন, "কী পুরস্কার নেবে বলো । অর্ধেক রাজত্ব চাইলেও তোমাকে দেব ।”
কিন্তু সেন্ট পিটার উত্তর দিলেন, “আমি কোনো পুরস্কার চাই না ।” আনন্দভায়া ভাবল, “কী হাদা লোক রে বাবা " তার পর সেস্ট পিটারের পাঁজরে কনুইয়ের খোঁচা দিয়ে বলল, “বোকার মতো কথা বোলো না । তোমার কোনো জিনিসের দরকার না থাকতে পারে, “আমার আছে ৷”
সেণ্ট পিটার কিন্তু কিছুই নিতে রাজি হলেন না । রাজা দেখলেন "তার সঙ্গী খুব অসন্তুষ্ট হয়েছে । তাই তিনি আদেশ দিলেন কোষাগার থেকে মোহর এনে আনন্দভায়ার ঝুলিটা ভরে দিতে ।
সেখান থেকে যাত্রা করে এক বনে পৌছলে আনন্দভায়াকে সেন্ট পিটার বললেন, “এবার মোহরগুলো ভাগাভাগি করে নেওয়া যাক ৷”
আনন্দভায়া বলল, “বেশ কথা ।” সেণ্ট পিটার তখন মোহরগুলো তিন ভাগ করলেন । আনন্দভায়া ভাবল, “লোকটার মতলব কী ? যেখানে দু ভাগ করার কথা সেখানে তিন ভাগ করছে কেন ?"
সেণ্ট পিটার তখন বললেন, “মোহরগুলো আমি সমান করে ভাগ করেছি। তোমার ভাগ, আমার ভাগ আর ভেড়ার ছানার কলেজে যে খেয়েছিল তার ভাগ ।”
এক গাল হেসে আনন্দভায়া বলল, “আমিই খেয়েছিলাম ভেড়ার ছানার কলজে ।” এই-না বলে মোহরের দুটো ভাগ সে নিয়ে নিল ।
সেণ্ট পিটার প্রশ্ন করলেন, “তুমি খেলে কী করে ? ভেড়ার ছানাদের তো কলজে থাকে না ।”
আনন্দভায়া বলল, “তুমি বলছ কী, দোস্ত ? ভেড়ার ছানাদের কলেজে থাকে না ? সব জন্তুরই তো কলজে থাকে ।
সেণ্ট পিটার বললেন, “বেশ কথা—তুমিই মোহরগুলো রাখো । কিন্তু আর তোমার সঙ্গে থাকছি না । চললাম।”
আনন্দভায়া উত্তর দিল, “দোস্ত, তোমার,যা মর্জি—টা-টা ।” সেন্ট পিটার চলে গেলেন অন্য পথে ।
আনন্দভায়া ভাবল, “যাকগে, ভালোই হল । কিন্তু লোকটার য়ে আশ্চর্য ক্ষমতা তাতে সন্দেহ নেই ।” হাতে তখন তার প্রচুর অর্থ । কিন্তু অত অর্থ নিয়ে কী যে করবে সে ভেবে পেল না । দু হাতে টাকাকড়ি উড়িয়ে অল্প দিনের মধ্যেই আবার সে কর্পদকশূন্য হয়ে পড়ল ।
সেই অবস্থায় একটা শহরে পৌছে সে শুনল—সেখানকার রাজার মেয়ের মরণ-দশা । খবরটা শুনে সে ভাবল, “আমার কপাল খুব ভালো—রাজকন্যেকে বাঁচিয়ে অনেক ধনদৌলত পাওয়া যাবে।" তাই রাজার কাছে গিয়ে জানাল মৃত রাজকন্যেকে সে বাঁচিয়ে দেবে ।
কানাঘুষোয় রাজা শুনেছিলেন—এক বরখাস্ত-হওয়া সৈনিক মরা মানুষ বাঁচাতে পারে। তিনি ভাবলেন, আনন্দভায়াই সেই সৈনিক । কিন্তু তার অলৌকিক ক্ষমতার কথা তিনি বিশ্বাস করেন নি । তাই রাজকন্যেকে বাঁচাবার ভার তাকে দেবার আগে মন্ত্রীদের পরামর্শ তিনি চাইলেন ।
মন্ত্রীরা রাজাকে পরামর্শ দিল—রাজকন্যে যখন মারাই গেছে তখন এ-লোকটাকে বাঁচাবার চেস্টা করতে দিতে কোনো ক্ষতি নেই । তাই রাজকন্যেকে বাঁচাবার চেস্টা করার অনুমতি আনন্দভায়াকে দেওয়া হল । সেণ্ট পিটারের মতোই আনন্দভান্না বলল রাজকন্যের শোবার ঘরে এক কেতলি জল দিতে । তার পর ঘর থেকে সবাইকে বার করে রাজকন্যের অঙ্গপ্রতঙ্গ কেটে কেতলিতে ভরে সেটা চড়াল সে উনুনে । জল ফুটতে শুরু করল, মাংস আলাদা হয়ে গেল । তার পর হাড়গুলো সে রাখল একটা টেবিলে । কিন্তু কী ভাবে হাড়গুলো রাখতে হয় সে জানত না । সেগুলো সে সাজাল একেবারে ভুল করে । তার পর টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে সেন্ট পিটারের মতোই তিনবার সে বলল, “ঈশ্বর, একে বাঁচিয়ে তুলুন।" কিন্তু হাড়গুলো যেমন পড়েছিল তেমনি পড়ে রইল—নড়ল-চড়ল না। আবার কথাগুলো সে আওড়াল, কিন্তু কোনোই ফল হল না । তখন অধৈর্ষ হয়ে সে চেঁচিয়ে উঠল, “উঠে পড়ো রাজকন্যে, নইলে ভালো হবে না বলে দিচ্ছি।”
তার মুখ থেকে কথাগুলো খসতে-না-থসতেই সেই সৈনিকের ছদ্মবেশে জানলা দিয়ে সেণ্ট পিটার এসে তাকে বললেন, "মূর্খ কোথাকার । করেছ কী ? হাড়গুলো য়ে ভুল করে সাজিয়েছ । এতে মরা মানুষ কখনো বাঁচে ?
আনন্দভায়া বলল, “দোস্তু, সঠিকভাবে সাজাবার সবরকম চেস্টাই তো করেছিলাম ।”
সেন্ট পিটার বললেন, "এবার তোমায় বিপদ থেকে বাঁচাচ্ছি । কিন্তু আবার এ ধরনের কাজ করলে তুমি বিপদে পড়বে । আর একথাটাও মনে রেখো—রাজকণ্যেকে আমি বঁচিয়ে তুললে রাজার কাছ থেকে এক পয়সাও পুরস্কার নিতে পারবে না।” এই-না বলে হাড়গুলো সঠিকভাবে সাজিয়ে ঈশ্বরের কাছে তিনবার তিনি প্রার্থনা জানালেন আর সঙ্গে সঙ্গে সুস্থ সবল শরীরে রাজকন্যে বেঁচে উঠল ।
যে পথে সেন্ট পিটার এসেছিলেন সে পথেই তিনি অদৃশ্য হলেন আর বিপদ থেকে মুক্ত হয়ে আনন্দভায়া হাফ ছেড়ে বাঁচল । কিন্ত রাজার কাছ থেকে এক পয়সাও না নেবার কথাটা তার মনে ধরল না । সে ভাবল, ‘হাদা লোকটার কথাগুলোর কোনো মানেই হয় না । কাজ করে পারিশ্রমিক কে না নেয় ?” তাই রাজার কাছ থেকে তার ঝুলি ভরে মোহর সে নিল ।
রাজপ্রাসাদ থেকে বেরিয়ে সে দেখে সিংহদ্বারের কাছে সেন্ট পিটার তার জন্য অপেক্ষা করছেন ।
তিনি বললেন, “তোমাকে এক পয়সাও না নিতে বলেছিলাম । কিন্তু ঝুলি ভরে তুমি মোহর নিয়েছ দেখছি।”
আনন্দভায়া বলল, “ওরা জোর করে আমার ঝুলিতে মোহর ভরে দিলে কী করতে পারি, বলো ?”
সেণ্ট পিটার বললেন, “তোমাকে দ্বিতীয়বার সাবধান করে দিচ্ছি— আর কখনো কোনো অলৌকিক কাজ করতে যেয়ো না ।”
সে বলল, “তা নিয়ে তোমায় মাথাব্যথা করতে হবে না । আমার এখন ঝুলি-ভরা মোহর-কোন দুঃখে হাড়গোড় ধোয়াধুয়ি করতে যাব ?” সেণ্ট পিটার বললেন, “কিন্তু ঐ মোহরগুলো তো একদিন-না একদিন খরচ হয়েই যাবে। যাতে তুমি আর নিষিদ্ধ কাজ না কর তাই বর দিলাম—যখন যা চাইবে সেই জিনিসে ভরে উঠবে তোমার ৰুলি।”
আনন্দভায়া বেজায় খুশি হয়ে চেঁচিয়ে উঠল, “এর চেয়ে ভালো আর কী হতে পারে ?” তার পর মনে-মনে বলল, “আমি এখন সম্পূর্ণ তৃপ্ত। আমি এখন বড়োলোক। তোমার সঙ্গের আর দরকার নেই।”
তার কাছে তখন রাশিরাশি মোহর । তাই সে সঙ্গে সঙ্গে ভুলে গেল তার ঝুলির আশ্চর্য ক্ষমতার কথা ।
আর আগের মতোই সে অল্পদিনের মধ্যে দু হাতে উড়িয়ে দিল মোহরগুলো.। তার যখন মাত্র চারটে পয়সা সম্বল তখন একদিন এক সরাইখানায় পৌছে সে ভাবল, “টাকা-পয়সা চিরকাল থাকে না । খরচ করার জন্যেই তো টাকা-পয়সা ।” তাই সে এক পয়সার রুটি আর তিন পয়সার বিয়ার কিনে খেতে শুরু করে দিল । খেতে-খেতে তার নাকে এল হাঁসের মাংস ঝলসানোর গন্ধ । আনন্দভায়া সেই গন্ধ শুকতে-শুকতে এদিক-ওদিক উকিঝকি মেরে অল্প সময়ের মধ্যেই আবিষ্কার করল সরাইখানার মালিক উনুনে নধর দুটো হাঁস ঝলসাতে দিয়েছে । তখন তার মনে পড়ল তার বন্ধু বলেছিল, যা চাইবে সেটা দিয়ে ভরে যাবে তার ঝুলি। সে কথা সত্যি কিনা পরখ করে দেখার জন্য সরাইখানার বাইরে বেরিয়ে সে বলে উঠল, “আমি চাই উনুনের ঐ দুটো ঝলসানো হাঁস যেন আমার ঝুলির মধ্যে চলে আসে ।" সঙ্গেসঙ্গে খুট করে একটা শব্দ হল আর ঝুলি খুলে সে দেখল ঝলসানো হাঁস দুটো সেখানে চলে এসেছে । তাই-না দেখে সে ভাবল, “যাক । আমাকে আর কোনো কিছুর জন্যে দুর্ভাবনা করতে হবে না ।”
খানিক এগিয়ে এক জায়গায় বসে মনের আনন্দে সে খেতে শুরু করে দিল ঝলসানো সেই হাঁস দুটো । সে যখন একটা হাঁস খাচ্ছে তখন সেখানে হাজির হল দুটি ছাত্র । বাকি হাসটার দিকে তারা চাইতে লাগল লোলুপ দৃষ্টিতে । আনন্দভায়া ভাবল, একজনের পক্ষে একটা হাঁসই যথেস্ট । তাই ছাত্র দুজনকে ডেকে বাকি হাঁসটা তাদের সে দিয়ে দিল ।
কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ছাত্ররা সেই সরাইখানায় গিয়ে বিয়ার আর রুটির অর্ডার দিয়ে বার করল সেই হাসটা ।
সরাইখানার মালিকের বউ তাদের দিকে কৌতুহলী দৃষ্টিতে তাকিয়ে তার স্বামীকে গিয়ে বলল, “ছেলে দুটোর কাছে একটা ঝলসানো হাঁস রয়েছে । আমরা যে-দুটো হাঁস উনুনে ঝলসাতে দিয়েছিলাম, দেখ তো, সেটা তাদের একটা কিনা৷”
সরাইখানার মালিক ছুটে গিয়ে দেখে উনুনটা খালি। তাই-না দেখে রাগে গরগর করতে করতে ছাত্রদের কাছে এসে সে বলল, “হতভাগা, নচ্ছার, চোর। ভেবেছ কি—বিনা পয়সায় হাঁস পাবে ? এক্ষুনি দাম চুকিয়ে দাও, নয়তো মজা দেখাচ্ছি।”
ছাত্ররা বলল, “আমরা চোর নই ৷ ঐ ওখানকার মাঠে এক সৈনিক হাঁসটা আমাদের দিয়েছে।”
ভীষণ রেগে সরাইখানার মালিক বলল, “বাজে কথা বলে পার পাবে না । সেই সৈনিক এখানে এসেছিল । সৎ লোকের মতোই খালি হাতে তাকে চলে যেতে স্বচক্ষে দেখেছি । তোমরা চোর, দাম তোমাদের দিতেই হবে ।” কিন্তু হাঁসটার দাম দেবার পয়সাকড়ি তাদের ছিল না । তাই সরাইখানার মালিক একটা লাঠি দিয়ে তাদের আচ্ছা করে উত্তম-মধ্যম দিয়ে সেখান থেকে দূর করে দিল ।
এদিকে আনন্দভায়া হাঁটতে হাঁটতে এক জায়গায় পৌছল । সেখানে ছিল চমৎকার এক দুর্গ আর ছন্নছাড়া চেহারার এক সরাইখানা । সরাইখানায় গিয়ে সে শুনল সেখানে আর জায়গা নেই।
আনন্দভায়া বলল, “এই চমৎকার দুর্গটা থাকতে লোকে এখানে ভীড় করতে আসে কেন, বুঝলাম না ।”
সরাইখানার মালিক বলল, “ওখানে যারা রাত কাটাতে যায় তারা আর বেঁচে ফেরে না।”
আনন্দভায়া বলল, “আমি ভয় পাই না । ওখানেই চললাম রাত কাটাতে ।”
সরাইখানার মালিক বলল, “আমার কথা শোনো । ওখানে যেও না । গেলে ফাঁসির দড়িতে লটকে যাবে।”
আনন্দভায়া বলল, “সেটা দেখা যাবে । দুর্গের চাবি আর কিছু খাবার-দাবার আমায় দাও ।”
সরাইখানার মালিকের কাছ থেকে সেগুলো নিয়ে আনন্দভায়া গেল সেই দুৰ্গে । সেখানে খাওয়া-দাওয়া সেরে মেঝেয় সে শুয়ে পড়ল, কারণ খাট-পালঙ্ক সেখানে ছিল না । শোবার সঙ্গে সঙ্গে সে ঘুমিয়ে পড়ল, কিন্তু বিকট একটা শব্দে মাঝরাতে ভেঙে গেল তার ঘুম । চোখ রগড়ে ভালো করে তাকিয়ে সে দেখে ন’টা ভয়ংকর চেহারার দানব হাতে হাত লাগিয়ে তাকে ঘিরে নাচছে ।
আনন্দভায়া তাদের বলল, “যত পার নাচো—কিন্তু আমার কাছে আসবে না ।”
দানবগুলো কিন্তু তার কথায় কান না,দিয়ে ক্রমশ এগিয়ে আসতে লাগল । আর একটু হলেই তাদের কুৎসিত পায়ের আঘাতে তার মুখ থেতো হয়ে যেত ।
সে বলল, “শয়তানের দল, শান্ত হও বলছি ।” কিন্তু তার কথায় তারা কান দিল না । ক্রমশ বেড়েই চলল তাদের উৎপাত ।
শেষটায় আনন্দভায়া দারুণ চটে বলল, “এবার তোমাদের শায়েস্তা করছি ” এই-না বলে একটা চেয়ার তুলে দানবদের সে পেটাতে শুরু করল। কিন্তু নটা দানবের সঙ্গে একটা মানুষ তো আর বেশিক্ষণ যুঝে উঠতে পারে না । একটাকে সে মারলে অন্যটা এসে মুঠো-মুঠো তার চুল ছিড়ে নেয়।
আনন্দভয়া তখন চেঁচিয়ে বলল, “এটা নেহাত বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে । তোমাদের মজা টের পাওয়াচ্ছি। এই মুহুর্তে সবাই আমার ঝুলির মধ্যে সেধোও।” কথাগুলো বলতে না বলতেই দানবগুলো ঝুপঝুপ করে ঢুকে পড়ল তার ঝুলির মধ্যে । আর সঙ্গে সঙ্গে ঝুলিতে কুলুপ এঁটে ঘরের এক কোণে সেটা সে ফেলল ছুড়ে ।
দানবদের দাপাদাপি শান্ত হয়ে যেতে আনন্দভায়া আবার শুয়ে পড়ল । ঘুম ভাঙল তার পরদিন সকালে ।
যে জমিদারের সেই দুর্গ, তাকে নিয়ে খানিক পরে সরাইখানার মালিক এল সে কেমন আছে দেখতে । তাকে সুস্থ সবল দেখে অবাক হয়ে তারা প্রশ্ন করল—দানবগুলো তার উপর অত্যাচার করেছে কি না।
আনন্দভায়া বলল, “তেমন কিছু নয় । তাদের আমি আমার ঝুলির মধ্যে ভরেছি । এখন তুমি নিশ্চিন্ত মনে তোমার দুর্গে থাকতে পার । কেউ আর উৎপাত করবে না।”
জমিদার তাকে তার কৃতজ্ঞতা জানিয়ে অনেক টাকাকড়ি দিয়ে প্রশ্ন করল—তার কাছে আনন্দভায়া চাকরি করতে রাজি কি না ।
সে বলল, “না, ঘুরে বেড়াতেই আমি ভালোবাসি ৷ স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়াতেই আমি অভ্যস্ত ।”
এই-না বলে সেখান থেকে আবার সে বেরিয়ে পড়ল। যেতে যেতে সে পৌছল এক কামারশালায় । সেখানকার নেহাই-এর উপর নিজের ঝুলিটা রেখে কামার আর তার সাকরেদদের বলল সেটা হাতুড়ি দিয়ে পিটতে। বিরাট বিরাট হাতুড়ি দিয়ে দমদম সেটা পিটে চলল তারা আর সেই ন’টা দানব আর্তনাদ করতে লাগল । খানিক পরে ঝুলিটা খুলে সে দেখলে একটা ছাড়া বাকি আটটাই দানবই মরেছে । যে দানবটা মরে নি সেটা আশ্রয় নিয়েছিল বুলির একটা ভাঁজের মধ্যে । বুলি থেকে বেরিয়ে পড়ি মরি করে সেটা ছুটে পালাল নরকে ।
তার পর আনন্দভায়া পৃথিবীর দূর-দূরান্তরে ঘুরে ঘুরে বেড়াল । তার সব অ্যাডভেঞ্চারের কথা লিখতে গেলে মহাভারত হয়ে যাবে । শেষটায় সে বুড়ো হয়ে পড়ল আর ভাবতে লাগল নিজের মৃত্যুর কথা । তাই সে এক জ্ঞানীগুণী সাধুর কাছে গিয়ে বলল, “ঘুরে ঘুরে বেড়িয়ে আমি ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। স্বর্গে যাবার পথটা খুঁজে বার করতে তাই আমার ইচ্ছে করছে।”
সাধু বললেন, “দুটো পথের কথা আমি জানি । একটা পথ চওড়া আর সুন্দর । সেটা গেছে নরকে । অন্যটা সরু আর খাড়া । সেটা গেছে স্বৰ্গে ।”
আনন্দভায়া বলল, “যে পথ খাড়া আর দুর্গম সে পথ ধরে যাওয়া তো মূর্থের কাজ ।” এই-না বলে প্রশস্ত আর সুন্দর পথটা ধরে সে হাঁটতে লাগল ।
যেতে যেতে সে পৌছল একটা কালো আর বিরাট ফটকের সামনে । সেটা নরকের প্রবেশপথ ৷ তাতে টোকা দিতে কে এসেছে দেখার জন্য দ্বাররক্ষী উকি মেরে তাকাল ।
আনন্দভায়াকে দেখে দ্বাররক্ষী ভয়ে কাঁপতে লাগল । কারণ সে হচ্ছে সেই নবম দানব, আনন্দভায়ার ঝুলি থেকে যে প্রাণ নিয়ে পালাতে পেরেছিল । সঙ্গে সঙ্গে ফটকে হড়কো দিয়ে দানব-প্রধানের কাছে ছুটে গিয়ে সে বলল, “বাইরে ঝুলি-কাঁধে নিয়ে একজন দাঁড়িয়ে । সে ভেতরে আসতে চায় । কিন্তু, দোহাই—তাকে ঢুকতে দিয়ো না । দিলে গোটা নরকটাকে সে তার ঝুলিতে ভরে ফেলবে । সেই ঝুলির মধ্যে একবার হাতুড়ির বাড়ি খেতে খেতে কোনোমতে আমি বেঁচে গেছি।”
তাই আনন্দভায়াকে বলা হল সেখান থেকে চলে যেতে । সে ভাবল, ‘এরা যদি এখানে আমাকে না চায় তা হলে স্বর্গে গিয়ে দেখি সেখানে একটা আস্তানা মেলে কি না । কারণ কোনো-একটা জায়গায় আমাকে তো বিশ্রাম নিতেই হবে ।’
সেখান থেকে ফিরে তাই সে স্বর্গের ফটকে গিয়ে টোকা দিল । সেখানে দ্বাররক্ষী ছিলেন সেন্ট পিটার । তাঁকে দেখেই চিনতে পেরে আনন্দভায়া ভাবল, “এই তো আমার সেই পুরনো বন্ধু ! নিশ্চয়ই আমাকে এ আসতে দেবে।"
কিন্তু সেণ্ট পিটার বললেন, “আমাকে কি বিশ্বাস করতে বল তুমি স্বর্গে আসতে চাও ?”
“হ্যা, বন্ধু। আমাকে আসতে দাও। নরকে আমায় ঢুকতে দেয় নি। দিলে তোমায় আর বিরক্ত করতাম না ।"
সেণ্ট পিটার মাথা নাড়িয়ে বললেন, “না, এখানে তুমি আসতে পাবে না ।”
আনন্দভায়া বলল, “বেশ কথা। আমি যদি আসতে না পারি তা হলে ফিরিয়ে নাও তোমার ঝুলি । তোমার কোনো উপহার আমি রাখতে চাই না।”
সেণ্ট পিটার বললেন, "দাও।” আনন্দভায়া ফটকের উপর দিয়ে ছুড়ে দিল তার ঝুলিটা। সেন্ট পিটার লুফে নিয়ে নিজের আরাম কেদারার উপর সেটা ঝুলিয়ে রাখলেন ।
আনন্দভায়া তখন বলে উঠল, “আমার ইচ্ছে করছে আমার ঝুলিটার মধ্যে যেতে।” আর কী আশ্চর্য—চক্ষের নিমেষে বুলিটার মধ্যে সে চলে এল । স্বর্গে প্রবেশ করতে সেণ্ট পিটার তাকে আর বাধা দিতে পারলেন না।
0 coment�rios: